চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা
সম্পদের হিসাব গোপনের নিশ্চয়তা চান কর্মকর্তারা
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাবসংক্রান্ত বিধিমালা হালনাগাদের কাজ শেষই হচ্ছে না। বছরের পর বছর শুধু ঘষামাঝা ও ফাইল চালাচালি হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব কীভাবে গোপন রাখা যাবে, তা নিশ্চিত করতেই যত বিলম্ব। কর্মকর্তারা চান সম্পদের হিসাববিবরণী জমা দিলে তা যেন কোনোভাবেই জনসম্মুখে না আসে। তারা সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা চান।
সেক্ষেত্রে কোন ফরমেটে সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একাধিক বিকল্প নিয়ে কাজও করছে সরকার। এছাড়া ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব নিয়ে তা ব্যবস্থাপনার মতো জনবলও নেই সরকারের।
অন্যদিকে সাবেক সচিব ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় সম্পদের হিসাব নেওয়া সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের কাজ ঝুলে থাকা কিংবা ঘষামাঝা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা। বিধিমালা সংশোধনে তারা সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিজ দপ্তরে যুগান্তরকে বলেন, কর্মচারীদের সম্পদের হিসাবসংক্রান্ত আচরণ বিধিমালা হালনাগাদের কাজ চলমান। সরকার জনমুখী জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসনে বিশ্বাসী।
বিষয়টি নিয়ে সচিবরা প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির মিটিংয়ে এবং গত সচিব সভায় আলোচনা করেছেন। তারা চাচ্ছেন দাখিল করা সম্পদবিবরণী যেন কোনোভাবে প্রকাশ না পায়। সরকার যার হিসাব তার কাছ থেকে নেবে এবং বেশি মনে হলে তাকে নোটিশ করবে। এ কাজগুলো প্রশাসনিক নিয়মে হবে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বাইরে যাবে না। তারা তথ্যের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা চান।
মন্ত্রী আরও জানান, কর্মচারীরা সম্পদ হিসাব দিয়ে যদি নিরাপত্তাবোধ না করেন, তাহলে তো সমস্যা। তাদের দুশ্চিন্তায় ফেললে তারা মানসিক চাপে থাকবে। মানসিক চাপ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে দাপ্তরিক কাজ করতে পারবে না। তারা তো দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করছে।
সুতরাং কাউকে মানসিক চাপে রেখে ভালো সার্ভিস আশা করা যায় না। আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। মন্ত্রী বলেন, সম্পদের হিসাব নিলেই তো হবে না। বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে প্রায় ১৪ লাখ কর্মচারীর সম্পদের হিসাব ব্যবস্থাপনা করা অসম্ভব। সেক্ষেত্রে কোন ফরমেটে হিসাব নেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে। হিসাব কি আইবাসের মাধ্যমে নেওয়া হবে, নাকি অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নেওয়া হবে, নাকি সনাতন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে, তা দেখা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন চূড়ান্ত হবে।
বিধিমালা সংশোধন কঠিন হলে কনসালটেন্ট নিয়োগ করে কাজটি সম্পন্ন করা যায় কি না-এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আর বেশি সময় দেওয়া হবে না। শিগ্গিরই আমরা শেষ করতে চাই। এজন্য সময় বেশি লাগবে না।
সরকারের সাবেক সচিবরা বলছেন, আচরণ বিধিমালা সংশোধনে সরকারের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সরকার চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে এ আচরণ বিধিমালা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত করতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরকার চাইছে বলে কাজটি হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান যুগান্তরকে বলেন, সরকার কর্মচারী আচরণ বিধিমালা হালনাগাদ করতে চায় কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সরকার চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে আচরণ বিধিমালা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত করা সম্ভব। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নে সময় নিয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। সুতরাং রাজনৈতিক নেতৃত্ব কী চায়, সেটাই মুখ্য।
সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়া অসদাচরণ। না নেওয়া সরকারের সদিচ্ছার অভাব। তার মতে, আচরণ বিধিমালা ঝুলে আছে সরকারের আন্তরিকতার অভাবে। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে এ বিধিমালা হালনাগাদের কাজ কখনোই চূড়ান্ত হবে না। পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়া অসদাচরণ এবং অসদাচরণের দায়ে সবাই অভিযুক্ত।
সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ঝুলে আছে আচরণ বিধিমালা। সরকার চাইলে এক সপ্তাহের কম সময়ে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব। ফিরোজ মিয়া বলেন, এটা টপ ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতা ধরে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের শেষদিকে ১৯৭৯ সালে প্রণীত গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা সংশোধনের কাজ হয়। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে একটি সরকারের মেয়াদকাল শেষ হয়ে নতুন আরেকটি সরকারের মেয়াদ ৬ মাস শেষ হয়েছে। এখনো শুধু হালনাগাদকরণের কাজই চলছে।