যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
শোক শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্বপ্নদ্রষ্টাকে স্মরণ
দূরদর্শী উদ্যোক্তা ছিলেন নুরুল ইসলাম, শূন্য হাতে শুরু করে সবাইকে ছাড়িয়েছেন * কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা, প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন, মিলাদ ও দোয়া
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শনিবার রাজধানীর বনানীতে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম এবং যমুনা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম আহম্মেদসহ সিনিয়র সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা -যুগান্তর
শোককে শক্তিতে পরিণত করে অভিভাবকের রেখে যাওয়া কাজ সামনে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়ে পালন করা হলো যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
বিনম্র শ্রদ্ধা এবং হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় দেশের শিল্প খাতের অগ্রদূত, সফল স্বপ্নসারথি এই আপসহীন উদ্যোক্তাকে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যমুনা গ্রুপ, দৈনিক যুগান্তর, যমুনা টেলিভিশন।
এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল বনানী কবরস্থানে প্রয়াত চেয়ারম্যানের কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা, প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন, কুরআন খতম এবং মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল।
অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলামের স্বজন, প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী এবং গুণগ্রাহীরা অংশ নেন। ঢাকার বাইরেও সারা দেশেই বিভিন্ন স্থানে কুরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে নুরুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়।
অনুষ্ঠানগুলোতে তার সহকর্মী ও স্বজনরা বলেন, সাহসী এই শিল্পোদ্যোক্তা আজ সশরীরে বেঁচে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন তার অমর সৃষ্টি বিশাল কর্মযজ্ঞ যমুনা গ্রুপের ৪২টি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনন্তকাল মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। যার সওয়াব নুরুল ইসলামের আমলনামায় যোগ হবে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় যুগান্তর কার্যালয়ে নুরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম এবং সিনিয়র সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এর আগে সকালে বনানী কবরস্থানে নুরুল ইসলামের কবর জিয়ারত ও আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করে যমুনা-যুগান্তর পরিবার। সকালে নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাত করেন যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক কামরুল ইসলাম। এরপর যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলমের নেতৃত্বে কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা নুরুল ইসলামের কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করেন। এরপর দুপুরে যুগান্তরে মিলাদ, বিশেষ দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ এবং যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর, হিসাবপ্রধান সাইফুল ইসলাম, প্রেস ম্যানেজার নাজমুল আলম খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
এ সময় সাইফুল আলম বলেন, দূরদর্শী সাহসী উদ্যোক্তা ছিলেন নুরুল ইসলাম। নির্ধিদ্বায় কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতেন। তার আদর্শকে ধারণ করেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে সব সময় সোচ্চার ছিল যুগান্তর। নিপীড়িত মানুষের কথা বলে আসছে। আগামীতেও এই আদর্শ থেকে একচুলও পিছপা হবে না এই প্রতিষ্ঠান। অন্য বক্তারা বলেন, কর্মেই বেঁচে থাকবেন আজীবন সংগ্রামী সাহসী এই মানুষটি। শুধু আলোচনায় নয়, তার রেখে যাওয়া কাজ করতে পারলেই তাকে স্মরণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের যুগ্ম-সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, উপসম্পাদক আহমেদ দীপু, এহসানুল হক ও দেওয়ান আসিফ রশীদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, যুগান্তরের নগর সম্পাদক মিজান মালিক, বিশেষ সংবাদদাতা শেখ মামুনুর রশীদ, মুজিব মাসুদ ও মাহবুব আলম লাবলু, সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক জোহায়ের ইবনে কলিম ও আজিজুর রহমান, স্পোর্টস ইনচার্জ পারভেজ আলম চৌধুরী, অনলাইন ইনচার্জ আতাউর রহমান, সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আবুল খায়ের চৌধুরী, সার্কুলেশন ম্যানেজার আবুল হাসান ও সাইদুল হক, মফস্বল বিভাগের ইনচার্জ নাঈমুল করিম নাঈম, যমুনা টেলিভিশনের জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) ইউসুফ মামুন, যুগান্তরের সম্পাদনা সহকারী বিভাগের প্রধান আতিকুর রহমান চৌধুরী এবং অ্যাডমিন ম্যানেজার আবুয়াল হোসেন সবুজ। কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ শাহদাত হোসেন, সিটিপি ইনচার্জ ওয়াসেক আল আজাদ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম ও মাওলানা তানজিল আমীর।
সাইফুল আলম বলেন, একজন সফল উদ্যোক্তা ও সাহসী মানুষের নাম নুরুল ইসলাম বাবুল। এক বুক ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে আগলে রাখা, সত্যের পক্ষে, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। আমাদের প্রেরণার উৎস। আজ থেকে চার বছর আগে এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আজকে আমাদের শোকের দিন। শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন। তিনি বলেন, আজকে সারা দেশে যমুনা গ্রুপ, দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টাকে স্মরণে নানা আয়োজন করা হয়েছে। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আমাদের মাঝে সশরীরে নেই। কিন্তু আমাদের চারপাশে তার অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি রেখে গেছেন তার স্ত্রী যমুনা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, সুযোগ্য পুত্র যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম, যমুনা গ্রুপের পরিচালক তিন মেয়ে-সোনিয়া সারিয়াত, মনিকা নাজনীন ইসলাম ও সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম। তারা সবাই নুরুল ইসলামের রেখে যাওয়া পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা যারা সহযোগী আছি, আমাদের দায়িত্ব হলো, প্রয়াত চেয়ারম্যানের প্রেরণাকে ধারণ করে রেখে যাওয়া কাজকে এগিয়ে নেওয়া। এ সময় নুরুল ইসলামের কর্মের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। সেখানে সরকারি নীতিনির্ধারক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা নুরুল ইসলামের সততা, আদর্শ ও দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরেন।
সাইফুল আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এখানে যারা উপস্থিত, সবার মধ্যে তিনি আছেন। কারণ তাদের বুকের মধ্যে তিনি আছেন বলেই ভালোবাসার টানেই সবাই এখানে ছুটে এসেছেন। সাইফুল আলম বলেন, নুরুল ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠান দৈনিক যুগান্তর। এই প্রতিষ্ঠানের স্লোগান হলো ‘সত্যের সন্ধানে নির্ভীক।’ আজ পর্যন্ত কখনো এই প্রতিষ্ঠান অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে সব সময় সোচ্চার ছিল। যুগান্তর নিপীড়িত মানুষের কথা বলে আসছে। দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল বা পেশাজীবী সংগঠন নেই, যারা অন্যায় করেছে অথচ যুগান্তর তার বিরুদ্ধে লেখেনি। চেয়ারম্যান সাহেব সব সময় বলতেন সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলো। যুগান্তর সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়েছে যুগান্তর। ‘আমি যতদিন এই প্রতিষ্ঠানে আছি, চেয়ারম্যানের এই সত্য বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করব।’ যুগান্তর সত্যের সন্ধানে পথ চলবে। তার মতে, এ প্রতিষ্ঠান হলুদ সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে না। ক্ষণিকের জন্য চমক তৈরি করে সাময়িক জনপ্রিয়তার পথে যুগান্তর কখনোই হাঁটবে না। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত যুগান্তর ২৫ বছর সততার সঙ্গে টিকে আছে। নুরুল ইসলামের অনেক বেশি দূরদর্শিতা ছিল বলেই অনেকের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন তিনি। অনেকেই বলেছেন, তিনি শূন্য থেকে শুরু করেছেন। হ্যাঁ তিনি শূন্য থেকে শুরু করে সবার ওপরে উঠেছেন। প্রতি সপ্তাহে আমি যুগান্তরের রিপোর্টিং মিটিংয়ে বলি, তথ্যনির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যপ্রমাণ আছে এ রকম যে কোনো রিপোর্ট নিয়ে এলে যুগান্তরে ছাপা হবে। এটা নুরুল ইসলামেরই শিক্ষা।
ফাহিম আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের আজকের এই দিনটাতে সকাল থেকেই হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছিলাম একটি দুঃসংবাদ আসছে। আল্লাহর ইচ্ছা, সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তাকে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা যাবে। ওনার সাহসের ব্যাপারে সারা দেশের মানুষ জানে। সত্যিকার অর্থে, তিনি আমাদের কাছে রেখে গেছেন ওনার আদর্শ। চার বছর সেই আদর্শের পথে কতটুকু চলছি, সেটা বড় বিবেচ্য বিষয়। যমুনা টেলিভিশনের সিইও বলেন, এই দিবস প্রতিবছর আসবে, আমরা ওনার প্রশংসা করব, আবার দিবস চলে যাবে। কিন্তু উনি যেভাবে বলতেন, তা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে না পারলে মৃত্যুবার্ষিকীর এই আলোচনার কোনো অর্থ থাকবে না। তাই সহকর্মীদের অনুরোধ করব, উনি যেমন করে চেয়েছেন যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন আমরা সেভাবে চালাতে চেষ্টা করব। আমরা ওই সততা ও সাহস নিয়ে চলতে চাই। ফাহিম আহমেদ বলেন, অনেকে বলতে চান, ‘বাবুল সাহেব নাই, ওরা হয়তো একটু দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি মনে করি বাবুল সাহেব সব সময় আমাদের মধ্যে আছেন। এখনো অনেক সময় নিউজ বন্ধ করার জন্য তদবির আসে। ওই সময়ে আমি চোখ বন্ধ করে ভাবি, বাবুল সাহেব বেঁচে থাকলে কী করতাম। সেভাবে সিদ্ধান্ত নিই।’ ফাহিম আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা ওনার আদর্শকে ধারণ করে রেখে যাওয়া কাজ করতে পারলেই ওনার প্রতি সুবিচার হবে।’
বিএম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিবছর এমন মৃত্যুবার্ষিকী আসবে, আবার চলেও যাবে। এক সময় আমরাও থাকব না। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের রেখে যাওয়া আমানত, এই যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন। এই আমানত রক্ষা করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বেঁচে থাকলে এই দুটি মিডিয়া কীভাবে চলত, আমাদের সেভাবেই চালানো উচিত। বিএম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, যুগান্তর আগের তুলনায় অনেক ভালো চলছে। সাহসী অনেক রিপোর্ট করছে। আর যমুনা টেলিভিশনের তুলনা নেই। যমুনা এখন দেশের এক নম্বর টিভি। চেয়ারম্যান সাহেব এটাই চেয়েছিলেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রয়াত চেয়ারম্যানের আদর্শকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে ওনার কথার সত্যতা পাবে। তিনি বলেন, বছরে একবার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এটা একটা বাহ্যিক বিষয়। কিন্তু প্রতিদিন অনুভব করি, চেয়ারম্যানের মতো আমার কাজটা করতে পারলেই তাকে স্মরণ করা হবে। আরেকটা বিষয় ‘আমি ভাবি প্রয়াত চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘ ১০ বছর আমি সময় দিয়েছি, আমার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ ছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, এই মানুষটার সঙ্গে খুব কাছাকাছি থেকে চলাফেরা করার। বিএম জাহাঙ্গীর বলেন, নুরুল ইসলাম শূন্য থেকে উঠে আসা একজন বিপ্লবী মানুষ। আমরা তার সাহসিকতার কথা বলি। কিন্তু সেই সাহস কি আমরা ভুলে যাব? এই সাহস আমাদের নিজেদের মধ্যে থাকতে হবে। তিনি বলেন, মানুষের দুই জীবন। ইহকাল ও পরকাল। আমরা এই দুনিয়ার যা কিছু করি না কেন, সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। চেয়ারম্যানের মৃত্যু থেকে এটাই আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, নুরুল ইসলাম শুধু একজন ব্যক্তি নন, শিল্প খাতের একটি বিপ্লবের নাম। ব্যবসা অঙ্গনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। যৌবনে অস্ত্র হাতে ’৭১ সালে দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনের প্রথম সারির এই যোদ্ধা। আর স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শুরু করেন নতুন যুদ্ধ। এ যেন অবিরাম পথচলা। মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার সঙ্গে বিশ্বমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আপসহীন এই কর্মবীর। এসব প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বেই বাংলাদেশকে তুলে ধরছে। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী ছিলেন তিনি। দেশকে নিয়ে বিশাল স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগেই ৭৪ বছর বয়সে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা বলেন, নুরুল ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নেতৃত্বে তার পরিবার দেশ ও যমুনা গ্রুপকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। যমুনা আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নুরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। পরের দিন ১৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আপসহীন এই যোদ্ধা। মৃত্যুর এক মাস আগে ১৪ জুন নুরুল ইসলামের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিনই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনায় তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভারকেয়ারে ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এর বাইরে চীনের ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এলিজাবেথ হাসপাতালের ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন। তারপরও সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
যমুনা গ্রুপ ও যমুনা টিভির কর্মসূচি : বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যমুনা গ্রুপ ও যমুনা টেলিভিশনও পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে। কিংবদন্তি এই শিল্প উদ্যোক্তার জীবনী নিয়ে তথ্যচিত্র প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। এছাড়া সকালে বনানীতে কবর জিয়ারত শেষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে যমুনা টিভি পরিবার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) ইউসুফ মামুনসহ অন্যরা। এছাড়া যমুনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গ্রুপটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে কর্মবীর নুরুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।