Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চুরমার সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চুরমার সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল জুবায়ের আহমেদ রাফিতের (১৭)। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নয় মাস আগে মিরপুর কমার্স কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি করেন মধ্যবিত্ত বাবা। মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে লেখাপড়া করত জুবায়ের। শনিবার সকালে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি সে। এদিন রাতে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায় সহপাঠী রাজিনের বাসায়। শুধু স্বপ্নই ভঙ্গ হয়নি, জুবায়েরের রক্তাক্ত নিথর দেহ কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছে রূপগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে। এ ঘটনায় শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

সন্তানের এমন নির্মম মৃত্যুতে কাঁদতেও ভুলে গেছেন শোকে স্তব্ধ বাবা। বলছেন, আমার যা ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, জুবায়ের খুবই মেধাবী ছিল। এসএসসিতে সে এ প্লাস পায়। সে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। তার ডাক্তার হওয়ার অনেক অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন এখন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আমি জুবায়েরের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।

জানা যায়, রূপগঞ্জের বাসিন্দা আবুল বাশার ওরফে বাদশা আড়াইহাজার ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক। তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে জুবায়ের আহমেদ রাফিত সবার বড়। মেধাবী জুবায়েরের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। এসএসসি পাশের পর মিরপুর কমার্স কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। রাইনখোলা এলাকায় মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে লেখাপড়া করত সে। শনিবার সকালে প্রাইভেট পড়তে বের হয় জুবায়ের। এরপর সে বাসায় ফেরেনি। দুপুরের পর মামা নুরুজ্জামান বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। কিন্তু জুবায়েরের সন্ধান মেলেনি। পরে এদিন রাতে কলেজের পাশেই হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোয়ার্টারে লাল বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় সহপাঠী রাজিন আহমেদের বাসা থেকে পুলিশ জুবায়েরের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

জুবায়েরের মামা নুরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, শনিবার সকালে কোচিংয়ের জন্য বাসা থেকে বের হয় জুবায়ের। এরপর আর সে বাসায় ফেরেনি। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। তার এক বন্ধু জানায়, একই ক্লাসের ছাত্র রাজিনের সঙ্গে জুবায়েরের বিরোধ ছিল। রাজিন কিছু জানে কি না খোঁজ নেন। এরপর রাজিনের বাবার ফোন নম্বরে কল করি। দুবার কল ঢোকার পর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আমাদের কাছে খবর আসে রাজিনের বাসায় একটি মরদেহ পাওয়া গেছে, এটি জুবায়েরের কিনা। পরে এসে দেখি এই মরদেহ আমার ভাগিনার।

তিনি জানান, জুবায়েরকে নয় মাস আগে মিরপুর কমার্স কলেজে ভর্তি করা হয়। তার যাতে কলেজে যাতায়াতে সুবিধা হয়, সেজন্য রাইনখোলা এলাকায় বাসা নিই। ওই বাসায় আমাদের সঙ্গেই জুবায়ের থাকত। মেধাবী জুবায়েরকে তিন মাস আগে ক্লাস ক্যাপ্টেন করা হয়। মাসখানেক আগে তারই ক্লাসের আরেক সহপাঠীকে রাজিন মারধর করে। এ সময় জুবায়ের প্রতিবাদ করলে রাজিন তার দিকেও তেড়ে আসে। এ বিষয়টি জুবায়ের কলেজের শিক্ষকদের জানায়। পরে রাজিনের মা-বাবাকে ডেকে কলেজের শিক্ষকরা বিষয়টি তাদের জানান। এরপর থেকেই রাজিন জুবায়েরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। সে তাকে বিভিন্ন সময় ফলো করত। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে রাজিন ও তার বাবা ইকবাল আহমেদ পলাতক রয়েছেন। জুবায়েরের বাবা আবুল বাশার ওরফে বাদশা বাদী হয়ে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় রাজিন ও তার বাবা ইকবাল আহমেদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ধারণা করছি বন্ধুদের মাধ্যমেই জুবায়েরকে রাজিনের বাসায় কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশেরও ধারণা পূর্ববিরোধের জেরেই জুবায়েরকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে জুবায়েরের মরদেহ কফিনবন্দি করে রূপগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন দুপুরে ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা যায়, ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় তার মরদেহটি মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে। বাইরে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। আদরের নাতির এমন নির্মম মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জুবায়েরের দাদা আব্দুল মোত্তালেব। তিনি নাতির স্মৃতিচারণা করে আহাজারি করতে থাকেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে। জুবায়েরের চাচা আল আমিন জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জুবায়ের বড়। তিনি জুবায়েরের ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিরপুর জোনের উপকমিশনার জসীম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঘটনাটি যে বাড়িতে ঘটেছে, সেখানে রাজিন ও তার বাবা থাকতেন। তাদেরকে এখনো পাওয়া যায়নি। তদন্তের স্বার্থে এখনই আর কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম