শিক্ষকদের সঙ্গে আজ ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক
কর্মবিরতিতে স্থবির ক্যাম্পাস
যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে বুধবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম টানা তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। আন্দোলনরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেছেন, তাদের চলমান সর্বাত্মক আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় দিয়েছিলেন বুধবার সন্ধ্যায়। কিন্তু পরে সেটি পরিবর্তন করে সময় ঠিক করেছেন বৃহস্পতিবার (আজ) সকালে। আমরা শিক্ষক নেতারা তার সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি তুলে ধরব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান সর্বাত্মক আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতারা। বুধবার সকাল থেকেই তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনের অংশ হিসাবে কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচি থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমাদেরকে ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী মহোদয় ডেকেছেন। আমরা শিক্ষক নেতারা তার সঙ্গে আলোচনায় বসব এবং আমাদের দাবি তুলে ধরব। দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা কর্মবিরতির আন্দোলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করব এবং কাল থেকেই ক্লাসে ফিরে যাব। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা ৩ দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে, আলাদা বেতন কাঠামো চালু করতে হবে এবং আমাদের জন্য সুপারগ্রেড চালু করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।
জিনাত হুদা বলেন, তারা পেনশন কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছেন। সারা দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘আলোচনায় বসুন। অর্থমন্ত্রী কেন আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন?’
তিনি বলেন, যারা এই স্কিম করেছেন, তারা নিজেরা এর আওতায় আসুন এবং দেখুন। আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব হাসান বলেন, আমাদের যা দাবি তা স্পষ্ট এবং অত্যন্ত যৌক্তিক। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দাবি অযৌক্তিক। আমরা তা মনে করি না। আমরা তার এই অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা ২০১৫ সালে একবার আন্দোলন করেছিলাম। তৎকালীন অর্থমন্ত্রীও এরকম অযৌক্তিক কথা বলেছিলেন। আমরা আমাদের দাবি যে যৌক্তিক সেটা তখন প্রমাণ করেছিলাম। আমরা আবারও আমাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করব। একই সঙ্গে বলতে চাই, তাদের দাবি, তাদের যে প্রত্যয় স্কিম তারা চালু করেছে এতে যে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে এটা তাদের ব্যাখ্যাতেই স্পষ্ট হয়েছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। জাবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রববানী বলেন, আমরা একটা চক্রান্তের শিকার হয়েছি। সরকারের বোঝা উচিত আমলারা এই ধরনের স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমানিত করেছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন এমন অর্থমন্ত্রীকে আমরা চাই না, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।
তিনি যেভাবে শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দিলেন এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, প্রত্যয় স্কিম শিক্ষদের ওপর বৈষম্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিলাম। কিন্তু আমরা তার বক্তব্যে আহত হয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা যেভাবে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, তেমনি আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি দিয়েছি, তবে আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আজকে ছাত্ররা আন্দোলন করছে, অথচ আপনিই বলেছিলেন, কোটা থাকবে না, কিন্তু আবার কেন কোটা দেওয়া হলো?
আপনিই বলেছেন, পেনশন সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হবে না, কিন্তু তারপরেও কেন শিক্ষকদেরকে এই ধরণের বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, একটা কুচক্রী মহল শিক্ষকদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ সময় তিনি আজ বৃহস্পতিবারও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জবি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে দুপুর ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, আমরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন করছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত একইভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে। একই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও।
এ বিষয়ে জবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের মহাসচিব মো. আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করব। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনীন পেনশন থেকে মুক্ত করে প্রজ্ঞাপন বাতিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদেরকে নিয়ে বসার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের দাবি যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে আমরাও মেনে নেব।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। ফলে ববির ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
দাবি পূরণ না হলে এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে সমাধান হবে বলে আশা করছি। এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) কর্মকর্তাদের দুটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর কর্মসূচি পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ববি প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম। তবে ববির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অতীতের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারবে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে কর্মকর্তারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। তাই সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের ব্যানারে যে কোনো কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় : একাডেমিক ভবনের সামনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল মাহমুদ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৩য় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ ও কারিগরি কর্মচারী সমিতি অর্ধদিবস কর্মবিরতি, প্রতিবাদ সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুপুরে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে ৩য় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে বাকৃবি অফিসার পরিষদ।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের প্রভাষক মোহতাসিম বিল্লাহ সাজিদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ক্রপ বোটানি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক, প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, হর্টিকালচার বিভাগের প্রভাষক ড. জাকারিয়া চৌধুরী অনিক ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাবিবুল্লাহ সিদ্দিকী। এদিনও কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক-কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কর্মকর্তা সমিতির নেতৃত্বে প্রশাসন ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের নিচে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
খুবি, খুকৃবি ও কুয়েট : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে বুধবার। কর্মবিরতি চলাকালে খুবি ক্যাম্পাসে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই কর্মসূচি পালন করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি।
রাবিপ্রবি : রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) বুধবারও কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার এবং কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি এবং ২৮তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় : বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মডার্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে ২ নম্বর গেটে গিয়ে পদযাত্রা ও সমাবেশ শেষ করে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার একটি সভা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আজ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে তা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে গোল চত্বরে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক: নিজামুল হক
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, প্রত্যয় স্কিমে অবশ্যই বৈষম্য আছে। এতে বেতনের ১০ শতাংশ টাকা দিতে হবে। চাকরির বয়সসীমা ৬০ বছর দেওয়া হয়েছে, নমিনির বিষয়ে জটিলতা রয়েছে। প্রত্যয় স্কিম ও শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার তিনি এ কথা বলেন।
ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, এ পেনশন স্কিম সবার জন্য একসঙ্গে চালু করলে আমাদের কোনো কথা ছিল না। এখানে সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্কিম চালু করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগে আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারি বাকি চাকরিজীবীদেরটা আগামী বছর চালু করলে তখন হয়তো তারাও আন্দোলনে নামবে।
এ শিক্ষক নেতা বলেন, সরকারের কাছে আমাদের তিনটি দাবি জানিয়েছি। বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।
অর্থমন্ত্রীকে ওপেন চ্যালেঞ্জ: জিনাত হুদা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, অর্থমন্ত্রী পেনশন নিয়ে যে কথাটি বলেছেন, সেটি দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান করেছেন। অর্থমন্ত্রী সঠিক তথ্য-উপাত্ত রিভিউ করেননি। আমি তাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি যে, আপনি আমাদের সঙ্গে বসুন। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আপনাকে বুঝিয়ে দেব কতটা যৌক্তিক এই আন্দোলন। প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার ড. জিনাত হুদা যুগান্তরকে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা হয়েছে। আমরা শিক্ষকরা যে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান করেছি তার কম্পাইল ফাইল (স্বাক্ষরযুক্ত নথি) তাকে দিয়ে এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা যে মূল্যায়ন রিপোর্টটি করেছিলাম-কেন এটি বৈষম্যমূলক, সেটি আমি শিক্ষামন্ত্রীকে দিয়েছি।
জিনাত হুদা বলেন, এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। এ আন্দোলন নিয়ে অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্যই এ আন্দোলন করছেন। আর প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার উদাহরণ টেনে এ শিক্ষক নেতা বলেন, উন্নত দেশের কথা বাদই দিলাম, যেহেতু সবকিছুই বাদ দিচ্ছি; এই উপমহাদেশের দিকে তাকান-ভারত, শ্রীলংকা এমনকি পাকিস্তানেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি। যাদের বিরুদ্ধে আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, তাদের দেশেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি।
বাস্তবতাবিবর্জিত এ স্কিম: অহিদুজ্জামান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. অহিদুজ্জামান বলেন, এ স্কিম বাস্তবতাবিবর্জিত। প্রত্যয় স্কিম প্রসঙ্গে বুধবার যুগান্তরকে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক অহিদুজ্জামান বলেন, আমার যে সহকর্মী ১৯৮৭ সালে প্রভাষক পদে যোগদান করতেন তখন তার বেসিক বেতন ছিল ৭৫০ টাকা। আর গ্রেড-১ এর বেতন ছিল ৩০০০ টাকা। ৪০ বছর পর অনুতোষিক হিসাবে তিনি বেসিকের ছয় গুণ অর্থাৎ ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৮শ টাকা পান। আর আমরা এখন এলপিআরে থাকলে প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭শ টাকা পাই। আর আজকে যদি আমার কোনো সহকর্মী অবসরে যান তাহলে ৩৯ হাজার ৩৭৫ টাকা পেনশন পাবেন।
ড. অহিদুজ্জামান বলেন, ৪০ বছর আগে যে বেতন ছিল সেটি আজ ছাব্বিশ গুণ বেড়েছে। এখন যিনি যোগদান করেছেন ভবিষ্যতে তার বেতন ছাব্বিশ গুণ না হোক দশ গুণ তো বাড়বে। আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী সেই শিক্ষক ৪০ বছর পর গ্রাচুইটি পাবেন ৮ কোটি ৭ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা। তার পেনশন হবে চার লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সেই শিক্ষক একসঙ্গে পাবেন দশ লাখ টাকার মতো। আর এখন (১ জুলাইয়ের পর) যদি কেউ যোগ দেন তাহলে তিনি যা পাবেন সেটা আগের তুলনায় অতিনগণ্য। ফলে প্রচলিত পেনশনের পরিবর্তে যে সর্বজনীন পেনশনের কথা বলা হয়েছে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ শিক্ষক বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অর্জন করেছেন সেটি ম্লান করার জন্যই আজকে শিক্ষক সমাজের ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এটা হলে এ সরকারের নির্বাচনি যে প্রতিশ্রুতি সেটিও থাকবে না। একই সঙ্গে আমরা আমাদের সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকারও হারাব।