Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মূল্যস্ফীতি ও করের চাপে পড়বে মানুষ

Icon

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্যস্ফীতি ও করের চাপে পড়বে মানুষ

গত ১৫ বছরে উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। এসব সমস্যা হলো কর আদায় কম, বিনিয়োগ সংকট এবং বৈষম্য বৃদ্ধি অন্যতম। এসব মৌলিক বিষয়ের প্রতি খুব যত্ন আসছে বলে মনে হয় না। তবে সরকার কিছুটা হলেও সচেতন হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাজেটের পদক্ষেপ দেখে মনে হয়, পুরোটা উপলব্ধি করেনি। কারণ বাজেটের মূল লক্ষ্য সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।

বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। আর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য সংকোচনমূলক পদক্ষেপ হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮ শতাংশের কথা বলা হচ্ছে। তার মানে হলো প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের অর্জনের চেয়ে কম নয়, বেশিই ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে বলা হচ্ছে বিনিয়োগও বাড়বে। মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমছে না। ফলে বাজেটের এই পদক্ষেপকে খুব বেশি সংকোচনমূলক বলা যাবে না। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমবে এটা বলা কঠিন। সবকিছু মিলে বলা যায়, এই সংখ্যাগুলোর বাস্তবতা নেই। আর বাস্তবতা যদি থাকে, তাহলে এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির সম্পর্ক কম থাকবে।

দ্বিতীয় বিষয় হলো উন্নয়ন ব্যয়। এই ব্যয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে জিডিপির ৫ শতাংশ। চলতি বছরে যা ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। এর মানে হলো উন্নয়নে ব্যয় কমলেও পরিচালন ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে সরকার যে উন্নয়ন ব্যয় করবে, তার পুরোটাই হবে ঋণের মাধ্যমে। এই ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ হবে বিদেশি উৎস থেকে। আবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের ৫৫ শতাংশই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে। এর মানে দাঁড়াল কী? ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এই পরিমাণ ঋণ নেওয়া হলে বেসরকারি খাতে জিডিপির ২৪ শতাংশ কীভাবে হবে, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়।

তৃতীয় বিষয় হলো বৈদেশিক খাত। এই বৈদেশিক খাতের জন্য মধ্যমেয়াদি যে বাজেটীয় কাঠামো দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আগের মতোই ৮ শতাংশ থাকবে। রেমিট্যান্স থাকবে ১০ শতাংশে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বৈদেশিক খাতের চলতি হিসাব খুব বেশি ইতিবাচক নয়। তারপরও বলা হচ্ছে ৩শ কোটি ডলারের বেশি মজুত বাড়বে। এটি অর্জন করা কঠিন।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর বড় জায়গা হলো প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগ, বিনিয়োগের সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন এবং এর সঙ্গে বৈদেশিক খাত। অর্থাৎ একটার সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে খাতগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা আগামীতে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে আসছে। বলা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

কিন্তু আবার কর বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ নতুন যে কর আসবে, তার দুই-তৃতীয়াংশ পরোক্ষ কর। তার মানে হলো আয় বাড়ানোর চাপ মানুষের ওপর পড়বে। একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে আয়ের সম্প্রসারণ। এ

র চাপে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পড়বে। দরিদ্র পরিবারে সহায়তা কার্ড এবং খোলা পণ্য বাজারে বিক্রি কতখানি স্বস্তি দিতে পারবে এটি বলা কষ্টকর। একইভাবে যেসব সুরক্ষা কর্মসূচির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে টাকার অঙ্ক না বাড়ালে জীবনমানের ওপর কতটা কার্যকর প্রভাব রাখবে, তা বলা কষ্টকর। অন্যদিকে সাধারণভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়েনি।

লেখক : বিশেষ ফেলো বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম