অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার নেই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকট অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত দেশ। এ সংকটের কথা স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে। তারপরও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গীকার নেই। আগের চলমান কর্মসূচিগুলোই বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতির হার অসহনীয় পর্যায়ে উঠেছে। টানা দুই বছরের বেশি সময় মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে। ডলার সংকটের কারণে টাকার মান কমে যাচ্ছে। পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়ে সংকট আরও বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘোষিত বাজেটে এসব সংকট নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। খুব সীমিত পরিসরে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-মূল্যস্ফীতির আঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে স্বল্প-আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে কাজের সংকটের সময় ৫ মাস প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা। নিম্ন-আয়ের প্রায় ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কম দামে নিত্যপণ্যের জোগান দেওয়া।
বাজারে পণ্যমূল্যের কারসাজি বন্ধে ও দেশের সর্বত্র টিসিবির মাধ্যমে পণ্যের জোগান বাড়াতে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুরে গুদাম নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে টিসিবির পণ্য ধারণ করার সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
যে কোনো দুর্যোগের পর সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার করতে একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
পর্যটনশিল্পে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ এ খাত ৪৭৭ কোটি ডলার অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে। চট্টগ্রামের পারকি সৈকত, নোয়াখালীর হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ; রংপুর, চাঁদপুর ও কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কিছু খাতে কর কাঠামো কমানো হয়েছে। আবার কিছু খাতে বাড়ানো হয়েছে। ফলে দেশীয় শিল্প কিছু খাতে বিকাশের সুযোগ পেলেও কর বাড়ানোর ফলে অনেক খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এছাড়া সীমিত পরিসরে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বাজেটে রিজার্ভ সংকট, ডলার সংকট, চড়া মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপের কথাই বলা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এ সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তারও কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এ বাজেটে সংকট উত্তরণের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া উচিত ছিল। এতে মানুষ আস্থাশীল হতে পারত।
প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও এর ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ খাতে গবেষণার জন্য এই প্রথমবার ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে।
বাজেটে একদিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বাজেটের আকার সংকোচনমুখী করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হবে। ফলে রাজস্ব আয় বাড়বে না। একই সঙ্গে ডলার সংকটের কারণে আমদানি আরও কমবে। এতে আমদানি খাতের রাজস্ব আয়ও কমবে।