ক্ষুব্ধ বেবিচক স্থায়ী কর্মীরা
কনসালটেন্টদের বেতন বৃদ্ধি
মুজিব মাসুদ
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পরামর্শকদের (কনসালটেন্ট) বেতন বৃদ্ধি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। এতে কিছু পরামর্শকের বেতন শতভাগ এবং বাকিদের ২৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এটি কার্যকর। বিষয়টি বেবিচকের ২৯৩তম বোর্ড সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অনুমোদন হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে বেতন বাড়ানোর কথা বলা হলেও সে পথে হাঁটেনি বেবিচক।
বেবিচক বলছে, এর আগে কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তাছাড়া, বেবিচক কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধির ক্ষমতা বোর্ড সংরক্ষণ করে। তাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এদিকে, পরামর্শকদের বেতন বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেবিচকের কর্মচারীরা। তারা বলছেন, যারা বেবিচকের স্থায়ী কর্মচারী তারা যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করলেও বেতন অনেক কম। অপর দিকে, পরামর্শকরা চুক্তিভিত্তিক হলেও তাদের বেতন অনেক বেশি। এবারের ঘটনার পর বেবিচক কর্মচারী ও পরামর্শকদের বেতনের মধ্যে বিশাল পার্থক্য দেখা দিয়েছে। একই কাজ করে পরামর্শকরা বেশি বেতন পেলেও কর্মচারীরা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে ৫৪ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালটেন্ট, ডিএফওআই, ডিএমই, এভিয়েশন আর্টনি পদে চুক্তিভিত্তিতে পরামর্শক খাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগেই কর্মরত রয়েছেন ৪৯ জন, এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে চারজন ও ফাইনান্স বিভাগে একজন পরামর্শক কর্মরত।
বোর্ড সভায় উপস্থাপিত পরামর্শকদের বেতন বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ জন পরামর্শকের মধ্যে সাতজন ডেজিগনেটেড ফ্লাইট অপারেশন্স ইনস্পেকটর ও ৪ জন এভিয়েশন মেডিক্যাল এক্সামিনার (খণ্ডকালীন হিসাবে কর্মরত) বাকি সবাই সার্বক্ষণিকভাবে কর্মরত। এই পরামর্শকরা নিয়মিত কর্মকর্তাদের মতোই সার্বক্ষণিকভাবে দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত। তারা রেগুলেটরি ডকুমেন্ট প্রস্তুত থেকে শুরু করে নিয়মিতভাবে রেগুলেটরি অডিট সম্পন্ন করে থাকেন। তাদের নিরন্তর পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে কর্তৃপক্ষের রেগুলেটরি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ২০১২ সালের আইকাও কো-অর্ডিনেশন ভেলিডেশন মিশন (আইসিভিএম) নামক অডিটে বাংলাদেশকে কালো তালিকা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ২০১৭ সালে আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) অডিটের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের এভিয়েশনের রেগুলেটরি কার্যক্রমকে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করার বিষয়েও কাজ করে। এছাড়া আইকাও সেইফটি রেটিং ৭৫.৩৪ শতাংশ এবং সিকিউরিটি রেটিং ৭৭.৭ শতাংশ এ উন্নীত হওয়ার পেছনে নিয়মিত কর্মকর্তাগণের পাশাপাশি এ সব চুক্তিভিত্তিক পরামর্শকের ভূমিকা রয়েছে।
বেবিচকে কর্মরত পরামর্শকদের বেতন কাঠামো সর্বশেষ গত ২০১৬ সালে কর্তৃপক্ষের পর্ষদ সভায় ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই বেতনের সঙ্গে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট কোনো বিধান বিদ্যমান না থাকায় ২০১৬ সালের পর থেকে একই বেতনে এসব কর্মকর্তা কাজ করছেন। গত ৮ বছরে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে দেশের বর্তমান আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চুক্তিভিত্তিক এসব কর্মকর্তার বেতন বা পরামর্শক ফি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সব শ্রেণির নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রতি বছর নির্ধারিত হারে বৃদ্ধির বিধান থাকায় তারা প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধিসহ পেনশন সুবিধা ও অন্যান্য ভাতাপ্রাপ্য হন।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের পর উল্লিখিত চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাগণের বেতন বা পরামর্শক ফি অপরিবর্তিত আছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অনুমেয় যে, এ পর্যায়ে বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও ভবিষ্যতে আরও ৪-৫ বছর বর্ধিত বেতন স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
গত মাসের ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, প্রতিবেদনে কিছু পরামর্শকের বেতন ১০০ শতাংশ এবং বাকিদের ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচানার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগে কর্মরত তিনজন সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফ্লাইট অপারেশন্স ইনস্পেকটর, দুজন স্পেশাল ইনস্পেকটর (সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন্স), দুজন জুনিয়র এয়ার ট্রান্সপোর্ট কনসালটেন্ট ও দুজন জুনিয়র লাইসেন্সিং কনসালটেন্টের পরামর্শক ফি ১০০ শতাংশ এবং অন্য পরামর্শকদের (সকল বিভাগ) পরামর্শক ফি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। এছাড়া সভায় পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের এ সংক্রান্ত নীতিমালা যাচাই-বাছাই করে একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব মুহম্মদ আশরাফ আলী ফারুক বলেন, কনসালটেন্টদের ফি বৃদ্ধিতে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। এজন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সভায় বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বেবিচক কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধির ক্ষমতা বোর্ড সংরক্ষণ করে। তাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্রব্যমূল্য সবার জন্যই বেড়েছে। একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরও স্থায়ী কর্মচারীদের বেতনের চেয়ে চুক্তিভিত্তিক পরামর্শকদের বেতন বেশি হওয়ায় বৈষম্য বাড়বে। এতে কাজের স্পিড কমে যাবে। স্থায়ী কর্মচারীদের বেতন প্রতি বছর বাড়লেও পরামর্শকদের বেতন অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে।