Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পলাতক ২ আসামির নতুন পাসপোর্ট

জল স্থল ও আকাশপথে রেড অ্যালার্ট জারি

Icon

সিরাজুল ইসলাম ও ইমন রহমান

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জল স্থল ও আকাশপথে রেড অ্যালার্ট জারি

আনোয়ারুল আজিম আনার। ফাইল ছবি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার জন্যই নতুন পাসপোর্ট তৈরি করেন পলাতক আসামি ফয়সাল আলী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকির। তাদের পাসপোর্ট করিয়ে দেন হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। হত্যাকাণ্ডের ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও এই দুজনের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। তবে তারা যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য স্থল, জল ও আকাশপথে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ব্লক করা হয়েছে তাদের পাসপোর্ট। এদিকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার পলাতক আসামি নেপালে আটক সিয়ামকে নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশ-এই দুই দেশের পুলিশের মধ্যে টানাটানি চলছে। দুই দেশই তাকে পেতে চায়। তবে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কাঠমান্ডু ইন্টারপোল। এদিকে এমপি আনার হত্যার তদারকি কর্মকর্তা শাহিদুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তিনি বর্তমানে মামলার তদন্তে নেপালে অবস্থান করছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে জিহাদের কোনো পাসপোর্ট ছিল না। তিনি চোরাইপথে বেশ আগেই ভারতে যান। চরমপন্থি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিহাদের নামে বেশ কয়েকটি মামলা আছে। গ্রেফতার এড়াতেই তিনি ভারতে অবস্থান করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহীনের নির্দেশে আমানুল্লাহ তাকে (জিহাদ) সঞ্জীবা ভবনে নিয়ে যান। পলাতক আসামি ফয়সাল এবং মোস্তাফিজও চোরাইপথে দেশ ছাড়তে পারেন বলে গোয়েন্দাদের শঙ্কা। 

তারা জানান, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে এমপি আনার হত্যার পর এই দুজন বৈধ পথে গত ১৫ মে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ওঠেন হত্যার মাস্টারসাইন্ড শাহীনের বসুন্ধরা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে। হত্যার বিষয়টি প্রকাশ পেলে আত্মগোপনে চলে যান তারা। ওই বাসায়ই তাদের পাসপোর্ট ছিল। পরে ডিবির টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের পাসপোর্ট উদ্ধার করে। তাদের গ্রেফতারে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে ডিবি। তারা সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। সর্বশেষ অবস্থানের তথ্য বলছে, সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামে ছিলেন তারা। 

এদিকে নেপালে আটক আরেক আসামি সিয়ামকে আনতে কলকাতার সিআইডি ও বাংলাদেশের ডিবির পৃথক দুটি দল বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আনার হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসামিকে নিতে দুই দেশের পুলিশের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। 

নেপালে অবস্থানরত ডিবি টিমের এক সদস্য রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সিয়ামের বিষয়ে কী হবে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। আমরাই প্রথম শনাক্ত করি যে, আসামি সিয়াম নেপালে আছেন। সে অনুযায়ীই ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি) আবেদন করি। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই সিয়ামকে আইনের আওতায় আনতে এনসিবি চিঠি লিখে নেপাল ইন্টারপোলে। ওই চিঠিকে গুরুত্ব দিয়েই নেপালে সিয়ামকে আটক করা হয়। তিনি আটক হওয়ার পর কাঠমান্ডু ইন্টারপোল আমাদের কাছে তাকে হস্তান্তরের জন্য সিগন্যাল দিয়েছিল। সেজন্যই আমরা তড়িঘড়ি করে শনিবার নেপাল আসি। কিন্তু এখানে আসার পর জানতে পারি, হত্যা মামলাটি ভারতে হওয়ার কারণে সেই দেশের সিআইডি সিয়ামকে নিতে চাচ্ছে। এ কারণে নেপালের পুলিশ বা কাঠমান্ডু ইন্টারপোল এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তবে আমরা বুঝতে পারছি যে, ভারত যেহেতু বড় দেশ তাই নেপাল ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। তবে আমরাও একেবারে হোপলেস নই। ওই রকম কিছু হলে অবশ্যই আমরা দেশে ফিরে আসতাম। আমরা সিয়ামকে বাংলাদেশে ফেরানোর ব্যাপারে এখনো চেষ্টা চালাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপি আনারের দেহের খণ্ডিত অংশের ডিএনএ পরীক্ষা করে মেলানোর জন্য তার স্বজনদের ভারত যেতে হবে। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে এমপি আনারের মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের ভারত যাওয়া এতদিন আটকে ছিল। অবশেষে রোববার তাদের ভিসা হয়েছে বলে জানা গেছে। এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ রোববার বিকালে যুগান্তরকে জানান, ‘আমাদের ভিসা হয়ে গেছে। রোববার ভারতীয় দূতাবাস থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়েছে আমাদের। সোমবার বিকাল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাব।’ তিনি বলেন, সোমবার ভিসা পেলেও ওইদিন হয়তো ভারতে যাওয়া হবে না। কারণ ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এখন নেপালে অবস্থান করছে। ওই টিম দেশে আসার পর তাদের কাছে যাব। ডিবি টিমের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই ভারত যাওয়ার টিকিট কাটব।

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে দুই দেশেই। ঢাকার ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৯ মে কলকাতা সিআইডি সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালিয়ে কয়েক টুকরো মাংস উদ্ধার করে। 

দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত আটজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্তি রহমান দ্বিতীয় দফায় ডিবির রিমান্ডে আছে। এছাড়া কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে। আর কাঠমান্ডু ইন্টারপোলের কাছে আটক হয়েছে সিয়াম। 
মোস্তাফিজ ও ফয়সাল এখনো অধরা। হত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে ডিবি পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় শাহীনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ভারতের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আনা তুলনামূলক সহজ হবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নেপালে অবস্থানরত কর্মকর্তার বদলি : এমপি আনার হত্যা মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসাবে শাহিদুর এখন নেপালে অবস্থান করছেন। সেখান আসামি আটক সিয়ামকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন ডিবির এই অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)। আনার হত্যার ক্লু তিনিই উদ্ঘাটন করেন। তাই এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও উপকমিশনার আব্দুল আহাদ (২৬ মে) যখন কলকাতা যান, তখন তাকে সেখানে নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার এই তদন্তদল ঢাকায় ফেরেন। এরই মধ্যে খবর আসে, নেপালে আটক হয়েছে আনার হত্যার অন্যতম আসামি সিয়াম। এই তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ডিএমপির ডিবি প্রধানের সঙ্গে তিনি নেপাল যান। এখন তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বদলিকৃত স্থানে যোগ দেওয়ার জন্য আগামি ৫ মে-এর মধ্যে বতর্মান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। অন্যথায় ৬ জুন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ডরিলিজ) হবে। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুতই তাকে নেপাল থেকে দেশে ফিরতে হবে। এ বিষয়ে জানতে নেপালে অবস্থানরত এডিসি শাহিদুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা মনটা ভালো নেই। আমার জন্য দোয়া করবেন।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, কেন বদলি করা হয়েছে সেটি জানার বিষয়। আমি এখনো বদলির আদেশটি দেখিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, একটি অভিযোগের বিষয়ে আগে থেকেই শাহিদুরের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। সেটাকে বিবেচনায় নিয়েই তাকে তাকে বদলি করা হয়েছে। আনার হত্যার বেশ আগেই তার বদলি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম