Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চার-ছক্কার বৃষ্টি

কুড়ি-বিশ বিশ্বকাপের উৎসব

Icon

পারভেজ আলম চৌধুরী ও ইশতিয়াক সজীব

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়ি-বিশ বিশ্বকাপের উৎসব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একসময় ক্রিকেট ছিল জনপ্রিয় খেলা। হাসবেন না। এই তথ্য একদম সত্য। ১৮৪৪ সালে নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জেস ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি হয়েছিল। তিনদিনের সেই ম্যাচে কানাডা জিতেছিল ২৩ রানে। রেকর্ড বইয়ে এটাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। বিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেটকে একটি মহৎ ক্রীড়ার মর্যাদা দিয়ে এর প্রচলন হ্রাস পেতে থাকে দেশটিতে। আর বেসবল, বাস্কেটবল, বক্সিং, রেসলিংকে মার্কিনিরা বরণ করে নেন তাদের পছন্দের খেলা হিসাবে।

১৮০ বছর পর সেই যুক্তরাষ্ট্রে টি ২০ বিশ্বকাপের দ্বারোদ্ঘাটন হচ্ছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ দিয়ে। উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচ আজ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের দর্শকরা অবশ্য টিভি সেটের সামনে বসবেন রোববার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। একইদিন ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র গায়ানায় দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ পাপুয়া নিউগিনি। এই ম্যাচটি রোববার রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে দেখতে পাবেন বাংলাদেশের দর্শকরা।

টি ২০ মানে চার-ছয়ের বৃষ্টি। রানের বন্যা। বোলারদের অসহায়ত্ব। দর্শকদের আনন্দ। কুড়ি-বিশ ক্রিকেটের আনন্দে ডুব দিতে দুবছর পর টি ২০ বিশ্বকাপ এলো এমন দুটি উঠোনে, ক্রিকেটীয় সৌকর্য, গরিমায় যাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। ক্রিকেটীয় আভিজাত্য ও অহংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্থান অনেক উপরে। যদিও সময়ের নিষ্ঠুর থাবায় সেই অহংকারের পলেস্তারা অনেকটাই খসে পড়েছে। বিপরীতে ক্রিকেটের বিশ্বায়নে আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপের সহআয়োজকের মর্যাদা দিয়েছে, যাদের বলতে গেলে পুরো দলটাই অভিবাসীদের নিয়ে গড়া। গুগল জানাচ্ছে, নিউইয়র্ক থেকে গায়ানার জর্জটাউনে আকাশপথে সরাসরি ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের আয়োজনও এই দূরত্বের মতো দুর্বোধ্য। আইসিসির মশকরাও হতে পারে, যেখানে ক্রিকেট যাপিত জীবনের ভূষণ আর যেদেশে খেলাটি ‘আগুন্তুক’ তাদেরকে একই বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া।

একসময় মানুষের স্বাধীন ও উন্নত জীবনের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিল ‘আমেরিকান ড্রিম’। স্বপ্নের জীবনের খোঁজে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে উন্মুখ থাকত সবাই। ফুটবলের মতো সত্যিকারের বৈশ্বিক খেলা হয়ে উঠতে আমেরিকান ড্রিমে আচ্ছন্ন হয়ে অবশেষে ক্রিকেটও পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। খেলাটির তিনটি সংস্করণের মধ্যে টি ২০ এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তাকে উন্মাদনায় রূপ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে টি ২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আসরটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে ক্রিকেটের উসর ভূমিতে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ২০ দলের ২০২৪ টি ২০ বিশ্বকাপের। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে টেক্সাসের ডালাসে উদ্বোধনী ম্যাচে পড়শি কানাডার মুখোমুখি হবে সহআয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে এই প্রথম মুখোমুখি হতে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকার দুটি দেশ।

টি ২০ বিশ্বকাপের নবম আসরের ১৬টি ম্যাচ হবে যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভেন্যু ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও নিউইয়র্কে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ বাকি ৩৯টি ম্যাচ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় ভেন্যুতে। ২০টি দল লড়বে চার গ্রুপে ভাগ হয়ে। পাঁচ দলের প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল পাবে সুপার এইট পর্বের টিকিট। সুপার এইটে থাকবে দুটি গ্রুপ। দুই গ্রুপ থেকে দুটি করে দল উঠবে সেমিফাইনালে। ২৭ জুন দুই সেমিফাইনালের পর ২৯ জুন বারবাডোজে ফাইনাল। ২০ দলের মধ্যে টি ২০র মহাযজ্ঞে এবারই অভিষেক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও উগান্ডার।

টি ২০ বিশ্বকাপের সব আসরে খেলা দলগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশই কখনো সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। এবারও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। গ্রুপপর্ব পেরোনোই হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের চার প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল।

৮ জুন সকালে ডালাসে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। শিরোপার প্রশ্নে ‘ডি’ গ্রুপের কোনো দলই নেই ফেভারিটের কাতারে। এবার ফেভারিট ভাবা হচ্ছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে পাকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা মূলত প্রবাসী এশিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। টি ২০ বিশ্বকাপ দিয়ে দেশটির মূল জনগোষ্ঠীকে ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট করতে চায় আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে পারলে ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে আরও দ্রুত। বেসবল ও বাস্কেটবলের দেশ হিসাবে পরিচিত হলেও একসময় ক্রিকেটও জনপ্রিয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরুর আগে। ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে ইতিহাসের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। তারও বেশ আগে ১৮৪৪ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দুদিনের একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। সেই হিসাবে এই দুদলই ক্রিকেটের প্রাচীনতম প্রতিদ্বন্দ্বী! সময়ের পরিক্রমায় পরে উত্তর আমেরিকা থেকে ক্রিকেট নির্বাসিত হওয়ায় টি ২০ বিশ্বকাপে পাঁচমিশালি দল নিয়ে নিজেদের নতুন যাত্রা শুরু করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম