Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সঞ্জীবা থেকে টুকরো টুকরো মাংস উদ্ধার

খণ্ডিত দেহের সন্ধান সেপটিক ট্যাংকে

ফাঁসি হয় হোক, সব বলে দেব-আমানুল্লাহ * হাড় ফেলা হয় জিরানগাছা বাগজোলা খালের কাঠেরপুল পয়েন্টে * শাহীনের মাস্টার প্ল্যানে যুক্তদের সবাই নজরদারিতে : ডিবি * হাড় ফেলার স্থানটি আগেই রেকি করে ঘাতকরা

Icon

সিরাজুল ইসলাম ও ইমন রহমান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খণ্ডিত দেহের সন্ধান সেপটিক ট্যাংকে

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম আনারের খণ্ডিত মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। হত্যার মূল সমন্বয়কারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালের দিকে সঞ্জীবা গার্ডেনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় সংসদ-সদস্যের দেহের টুকরো টুকরো কয়েক কেজি মাংস। এর আগে ঢাকায় ডিবির রিমান্ডে আমানুল্লাহ এ হত্যার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। খুনের শুরু থেকে লাশ গুম পর্যন্ত সব ঘটনা ছক এঁকে ডিবিকে লিখিতভাবে জানায় খুনের এ সমন্বয়ক। এ সময় আমানুল্লাহ বলে, ‘জীবনে অনেক লোককে ধরে ধরে জবাইসহ নানাভাবে খুন করেছি। কিন্তু কখনো খুব একটা অনুশোচনা হয়নি। সংসদ-সদস্য আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তার মরদেহ কেটে টুকরো করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুমের পর অন্যরকম অনুশোচনা এসেছে। এ অপরাধে যদি আমার ফাঁসি হয়, হোক। আমি সবই বলে দেব, কিছুই গোপন করব না।’

আমানুল্লাহ ডিবিকে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর মাংস থেকে শরীরের চামড়া আলাদা করা হয়। মাংস থেকে পৃথক করা হয় হাড়। এরপর মাসংসগুলো কিমা বানিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনসের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের নিচতলার তিনটি বাথরুমের কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়। পাশপাশি বালতির পর বালতি পানি ঢালা হয় কমোডে। এতে সহজেই ওই মাংস চলে যায় স্যুয়ারেজের লাইন দিয়ে। কিন্তু হাড়গুলো বাথরুমে ফেলা সম্ভব হয়নি। তাই হাড়ের খণ্ডিত অংশগুলো ভরা হয় ট্রলি ব্যাগে। ওই ট্রলিটি ছিল পলাতক আসামি মোস্তাফিজের। মোস্তাফিজকে বলা হয়, ‘তোমার ট্রলি ব্যাগটি দাও। হাড়ের খণ্ডিত অংশগুলো সেখানে রাখব। পরে তোমাকে একটি ট্রলি ভ্যাগ কিনে দেব।’ মোস্তাফিজ রাজি হওয়ার পর তার ট্রলি ব্যাগে ঢুকানো হয় সংসদ-সদস্য আনারের শরীরের হাড়গুলো। এরপর ট্রলি ব্যাগটি নিয়ে আমানুল্লাহ ও জিহাদ বের হয় ভবন থেকে। অন্যদিকে সঞ্জীবা গার্ডেনসের পাশেই ট্রলি ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করছিল সিয়াম। সেখানে একটি গাড়িতে করে ওই ব্যাগটি নিয়ে যায় আমানুল্লাহ ও জিহাদ। পরে আমানুল্লহ চলে আসে সঞ্জীবা ভবনে। আর জিহাদ ও সিয়াম ট্রলি ব্যাগটি নিয়ে চলে যায় কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খালের উদ্দেশে। এরপর হাড়গুলো ফেলা হয় খালের কাঠেরপুল পয়েন্টে। ট্রলিব্যাগ থেকে হাড়গুলো বের করে খালের পানিতে ফেলা হয় নাকি হাড়ভর্তি ব্যাগটিই ফেলে দেওয়া হয়, সেটি এখনো গোয়েন্দারা বের করতে পারেনি বলে মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকায় গ্রেফতার আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা সিআইডিকে সংসদ-সদস্য আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, সুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ জানায় ঢাকার ডিবির টিম। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও সার্চের অনুরোধ করা হয়। এরই অংশ হিসাবে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালানো হয়। পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের পাইপ ভাঙা হয়। এ অভিযানে উদ্ধার টুকরো টুকরো মাংসের পরিমাণ প্রায় চার কেজি বলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছেন। এদিকে সঞ্জীবা গার্ডেনসে অভিযান চলার সময় ঢাকার ডিবির দল কলকাতার সিআইডি প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন বলে ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাপ্রধান মো. হারুন অর রশীদ বলেছেন, যে উদ্ধার মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে, এর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলো সংসদ-সদস্য আনারের। তিনি বলেন, ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেপটিক ট্যাংক ভাঙা হয়। কলকাতার সিআইডিকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য। তবে ফরেনসিক টেস্ট ছাড়া সংসদ-সদস্যের মরদেহ, তা বলা যাবে না।

ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের গোয়েন্দা দলের প্রতিনিধি ডিসি মো. আ. আহাদ বলেন, ‘আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই ফ্ল্যাটে বাথরুমে ফ্ল্যাশের কথা জানায়। এরপর ভারতে এসে আমরা ওই ফ্ল্যাটটি পরিদর্শন করি এবং ভারতীয় পুলিশকে পরামর্শ দিই বাথরুমের পাইপ ভেঙে ট্যাংক দেখতে।’ তিনি আরও জানান, সংসদ-সদস্যের খণ্ডিত হাড়ের সন্ধানে খালে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ডিবি সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় যাকে যাকে ম্যানেজ করলে ঘটনা সামাল দেওয়া যাবে, তাদের সবাইকে ম্যানেজ করেছিল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীনের মাস্টার প্ল্যানের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সবার ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ না পাওয়া গেলে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। কারণ হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যারা হত্যা করেছে, তারা তো স্বীকার করেছে। তবে মরদেহ সম্পর্কে আমাদের কাছে স্পষ্ট কোনো খবর নেই। কিন্তু আমরা বসে নেই, প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, কিছু একটা মিলবে। আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা সেখানে গেছেন। ডেডবডি উদ্ধার করা ছাড়া বাকি রহস্য আমাদের কাছে চলে এসেছে।

মঙ্গলবার ডিবি হেফাজতে আমানুল্লাহ যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছে, কোনোটিই মিথ্যা মনে হয়নি ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তবে তথ্যগুলো খুবই স্পর্শকাতর। তাই এসব তথ্য অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছে কলকাতায় অবস্থানররহ ডিবির টিমের কাছে। আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা হচ্ছে কলকাতায় গ্রেফতার জাহিদ ওরফে জিহাদের মাধ্যমে। সে অনুযায়ীই কলকাতার বিভিন্ন স্থানে চলছে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশের যৌথ অভিযান।

১২ মে ভারত যান সংসদ-সদস্য আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে মর্মান্তিকভাবে খুন হন সংসদ-সদস্য আনার। বাসাটি খুনিরা ভাড়া নেয় ১১ মাসের জন্য। এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে দুই দেশেই।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সঞ্জীবা গার্ডেনস থেকে বাগজোলা খালের দূরত্ব খুব বেশি না। রাস্তা না চেনার কারণে অনেক দূর ঘুরে হাড়ভর্তি ট্রলি নিয়ে সেখানে যায় ঘাতক জিহাদ ও সিয়াম। যদিও আগে একবার ওই স্থানটি রেকি করেছিল জিহাদ। খালের যে পয়েন্টে (কাঠেরপুল) হাড়গুলো ফেলা হয়েছে সেই স্থানটি খুবই নির্জন। সেখানে সিয়াম বেশ কয়েকবার মিটিং করেছে। একদিন আমানুল্লাহকেও নিয়ে যায়। লাশ গুমের জন্য ওই স্থানটি আমানুল্লাহর খুব পছন্দ হয়। জায়গাটি এমন যে, সেখানে আস্ত লাশ ফেলে রাখলেও কেউ টের পাবে না।

এমপি আনারের হাড়গুলো গুম করার মূল দায়িত্ব ছিল সিয়াম ও জিহাদের ওপর। জিহাদ কলকাতায় গ্রেফতার হলেও সিয়াম এখনো পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে, সে নেপালে অবস্থান করছে। সিয়াম মূলত হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ডাইরেক্ট লোক। সে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। আর জাহিদ ওরফে জিহাদ হাওলাদার হলো আমানুল্লাহর লোক। সে চরমপন্থি দলের সদস্য। একটি মামলার পলাতক আসামি হিসাবে সে চোরাপথে অনেকদিন আগে ভারতে চলে যায়। দীর্ঘদিন কলকাতায় অবস্থান করলেও আমানুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। পলাতক থাকায় সে সেখানে খুব একটা প্রকাশ্যে ছিল না। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা শাহীন, সেলিস্তি ও আমানুল্লাহ সঞ্জীবা ভবনে যাওয়ার পর সে সেখানে যায়। শুরুতে মূলত কাজের লোক হিসাবেই সেখানে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। বাসা থেকে একেবারেই বের হতো না। কারণ, তার নামে যেহেতু মামলা আছে, তাই বের হলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

ডিবি সূত্র জানায়, কোনো কোনো গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, ‘জিহাদ পেশায় কসাই। সে মুম্বাইয়ে থাকত।’ জিহাদের বিষয়ে এ তথ্য সঠিক না। সে কখনো কসাই হিসাবে কাজ করেনি। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সে কলকাতায়ই আত্মগোপনে ছিল। আরও জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে সিয়াম, ফয়সাল ও মোস্তাফিজের ভূমিকা ছিল অনেক বড়।

শাহীন-সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি : আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগী সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)। হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। আর তার সহযোগী সিয়াম পালিয়ে গেছেন নেপালে। এনসিবি জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির এনসিবির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দুটি দেশকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুজনকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশটির পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় নেপালে পলাতক সিয়ামকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশকে ইন্টারপোলের সহায়তায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ভারতের খালে দফায় দফায় অভিযান : ডিএমপির ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম মঙ্গলবারও আনারের খণ্ডিত হাড়ের সন্ধানে কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খালে অভিযান চালিয়েছে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক ইন্সপেক্টর। অভিযানের কিছু ভিডিও ফুটেজ এসেছে যুগান্তরের হাতে। সেখানে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই বাগজোলা খালের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন দুদেশের পুলিশ সদস্যরা। খালে নামানো নৌকায় চারজন লোক। তারা জাল ফেলে হাড়ের সন্ধান করছেন। এছাড়া ডুবুরিদের আরেকটি দলকে পানিতে নেমে হাড়ের সন্ধান করতে দেখা গেছে। বাগজোলা খালের কয়েকটি স্থানে ময়লার ভাগাড়ও দেখা গেছে।

ভারতে অভিযানে থাকা ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খালে ফেলে দেওয়া হাড় উদ্ধারের। এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

শাহীনের সঙ্গে জাল লটারির ব্যবসার টাকা নিয়েও দ্বন্দ্ব ছিল এমপির : খুনের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে এমপি আনারের স্বর্ণ ও হুন্ডির ব্যবসা ছাড়াও জাল লটারি ব্যবসার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন লটারির জাল কপি ছাপাতের ভারতে। পরে সেই লটারি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে বিক্রি করতেন শাহীন। এমপি আনারের সঙ্গে যৌথভাবে এ ব্যবসা করতেন শাহীন। ডিবির কাছে গ্রেফতার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এই জাল লটারি বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা শাহীনের কাছে পেতেন এমপি আনার। সেই টাকা মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল শাহীনের।

চরমপন্থি নেতা আমানুল্লার পরিবারও প্রভাবশালী : এমপি আনার হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের মূল দায়িত্বে ছিল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা (চরমপন্থি নেতা) শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। খুলনার ফুলতলা উপজেলায় তার বাড়ি। চরমপন্থি এ নেতার পরিবারও এখন আওয়ামী লীগ বনে গেছেন। শিমুল ভূঁইয়ার ভাই শিপুল ভূঁইয়া ২০১৫ সালে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি এখন গামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ভয়ে কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী হননি এমন কথাই বলছেন স্থানীয়রা। শিমুলের স্ত্রী পারভীন আক্তার মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের আওয়ামী সমর্থিত মেম্বর। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

ঘনিষ্ঠদের দিয়ে শেয়ারে বিভিন্ন ব্যবসা করাতেন আনার : এমপি আনার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে শেয়ারে বিভিন্ন ব্যবসা করাতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আনারের আরেক বাল্যবন্ধু গোলাম রসুলকে কালীগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বসান। তার সঙ্গে পেট্রোল পাম্পের ব্যবসা ছিল আনারের। কালীগঞ্জ সুগার মিল ও দুলাল মন্দিয়া এর মাঝখানে এ পেট্রোল পাম্প। গোলাম রসুল যুগান্তরকে বলেন, আনারসহ আমরা পাঁচজন মিলে একটি পেট্রোল পাম্প স্থাপন করেছি। তবে এখনো অনুমোদন পায়নি। এছাড়া যশোরের এক ভাগিনার মাধ্যমে মোটর পার্টস আমদানির এলসির ব্যবসা করাতেন আনার। তিনি আরও বলেন, আনারের সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয় ১২ মে। তখন সে মেসেজে আমাকে জানায় ভারত গিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম