Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কোথাও কোথাও ৬-৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস, তলিয়ে গেছে সুন্দরবন

উপকূলে রিমালের আঘাত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উপকূলে রিমালের আঘাত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে রোববার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বউবাজার এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে -যুগান্তর

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল আগ্রাসী রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূলে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার স্থলভাগে এসে উত্তর দিকে এগিয়ে ঝড় ও বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। রোববার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলের কোথাও কোথাও প্রাথমিকভাবে ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এদিন দুপুর থেকে এসব জেলায় দমকা বাতাস, ঝড়ো-বৃষ্টি অব্যাহত আছে। আট লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। জান ও মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালীতে পানিতে ডুবে ও সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

বরগুনা সদর, তালতলী, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এবং ভোলার তজুমদ্দিন ও মনপুরায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব স্থানে মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। জোয়ারের পানিতে ৭-৮ ফুট নিচে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। চট্টগ্রাম বন্দরে নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নোয়াখালী, বরিশাল, রাজবাড়ী ও ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপকূলের বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সব স্তরের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার রাত ১টায় আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে অতিক্রমরত অবস্থায় আছে। আশা করা হচ্ছে অতিক্রম করতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। অগ্রবর্তী অংশ পার হয়ে ভূমির উপরে আছে। এখনও ১০২ কিমি. বাতাস পেয়েছি। এটি যেহেতু বর্তমানে ভূমিতে আছে সেহেতু ক্রমান্বয়ে আরও উত্তর দিকে যাবে। যেতে যেতে ঝড় ও বৃষ্টি হয়ে আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। 

রাত দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-১৫) বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২১.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি রোববার রাত ০৯ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিমি. পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিমি. পশ্চিম, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর দিকে ধীরগতিতে অগ্রসর হয়ে মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম অব্যাহত রেখেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। এতে আরও বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি.র মধ্যে বাতাসের টানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিমি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিমি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। 
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ০৪ (চার) নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নেওয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

রিমাল আঘাত হানার আগে রোববার দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাশেষ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়ের প্রথমভাগ বাংলাদেশ অতিক্রম শুরু করবে। মধ্যরাতের মধ্যে ঝড়ের মূল অংশটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। উপকূল অতিক্রমের সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। ঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। জোয়ার থাকলে এটি আরও বেশি হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঝড় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মনে করছি বৃষ্টিপাতের জন্য সারা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শহর-গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় জলাবদ্ধতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। যানজট হতে পারে, স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লঞ্চ-স্টিমার যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় জেলা, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের সরকারি সম্পদ রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিববুর রহমান আরও বলেন, ইতোমধ্যে আট লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রিমাল মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আট থেকে নয় হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। সব আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার যেমন-বিস্কুট, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে সাড়ে আট লাখের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। 
উপকূলীয় এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার কমিটিকে বলা হয়েছে, তারা যেন কাছাকাছি থেকে মানুষের আশ্রয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রম তদারকি করছেন জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। ?তার নেতৃত্ব এবং পরামর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে। সামরিক, বেসামরিক প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় করে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালন করছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী যে উষ্ণায়ন হচ্ছে, সেটাকে মাথায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। এই ক্ষেত্রে নতুন ‘ইনোভেশন’ আনতে হবে। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখার মতো পরিবেশবান্ধব স্থাপনা তৈরি করতে হবে। 
রোববার রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আরএডিপি বাস্তবায়ন এবং চলমান উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ও মূল্যায়নবিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচরে এ ঘটনা ঘটে। শরীফুল কলাপাড়ার অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে। জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকতসংলগ্ন কাউয়ারচরে শরীফুলের ফুফু মাতোয়ারা বেগম বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিলেন। শরীফুল নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তার ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় জোয়ারে কাউয়ারচর ৪-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে ছিল। সাঁতার কেটে ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সাগরের পানির ঢেউয়ের তোড়ে শরীফুল ভেসে যান। 
হাতিয়া (নোয়াখালী) : টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিঝুমদ্বীপের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাতিয়ার চার পাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মজুমদার বলেন, বন্দর কিল্লা, নামার বাজার, ইসলামপুর ও মোল্লা গ্রামসহ পুরো নিঝুমদ্বীপ পানিতে প্লাবিত। পানিতে ভেসে গেছে গবাদিপশুর খাদ্য ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে শাকসবজিসহ নানা ফসলের জমি।
ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) : স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় ৪-৫ ফটু পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরের হাইস্কুল সড়ক, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়সহ বেশ কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার কয়েকশ পরিবার। চরখালী এলাকার কঁচানদী তীরবর্তী বাড়িঘরও প্লাবিত হয়েছে। ৫৪টি সাইক্লোন শেল্টারসহ সব স্কুল কলেজের ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে। 
কাউখালী (পিরোজপুর) : চিরাপাড়া, বেকুটিয়া, পাঙ্গাসিয়া, সোনাকুর, আমরাজুড়ী, আশোয়াসহ ২০-২৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 
কয়রা (খুলনা) : রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমে দুর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কার করেন স্থানীয়রা। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের খাশিটানা ও গোলখালী এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। 
বরিশাল : নৌযান ও বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরে সব বিমান ওঠানামাও স্থগিত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর উপ-পরিচালক ও বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। 
চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা) : ঢালচর, চরপাতিলা, চরকুকরিমুকরি ও মজিবনগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। 
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। ঢাকার মিরপুরগামী যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী গিয়েছিলাম। আজ ঢাকা যাচ্ছি। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এখন কিভাবে যাব বুঝতে পারছি না। 
লক্ষ্মীপুর : দুপুর থেকে লঞ্চ-ফেরি বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোলা-বরিশালের উদ্দেশে আসা দুই শতাধিক যাত্রী লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটে আটকা পড়েন। দুর্ঘটনা এড়াতে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারও চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। এতে বাড়ির উদ্দেশে কর্মস্থল থেকে আসা মানুষজন দুর্ভোগে পড়েন। 
বান্দরবান : বৃষ্টিতে রুমা, থানচি, বান্দরবান-লামা-সুয়ালক, রোয়াংছড়ি-রুমা, থানচি-আলীকদমসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কাদামাটিতে পিচ্ছিল হয়ে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সকাল থেকে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। 
সাতক্ষীরা : বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা বিরাজ করছে উপকূলের কৃষি ও চিংড়ি, কাঁকড়া চাষিদের মধ্যে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টিরও অধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের এসএম ওয়ায়েজ কুরুনী বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ এলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। তার পুত্রবধূ আছমা খাতুন জানান, সন্ধ্যার দিকে তার শ্বশুর স্ত্রীকে নিয়ে নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে মারা গেছেন।
উপকূলে ১০ হাজার আনসার মোতায়েন : উপকূলীয় ১২ জেলায় ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্যকে ৪ দিনের জন্য মোতায়েন করেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় রেঞ্জ কমান্ডার, জেলা কমান্ড্যান্ট ও আনসার ব্যাটালিয়ন অধিনায়ককে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার রাতে যুগান্তরকে আনসার সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (ভিডিপি প্রশিক্ষণ) ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. রুবেল হোসাইন এ তথ্য জানান। 
পুলিশের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সর্বাÍক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি সার্বক্ষণিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করছেন। রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, আইজিপির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ সদস্যরা প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুর্গত এলাকার জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন এবং শুকনো খাবার সরবরাহ করছেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম