Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকারে সাবের হোসেন চৌধুরী

ঢাকার ফাঁকা স্থানে হবে বনায়ন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের আবহাওয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কিছুদিন আগেও দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপপ্রবাহে জনজীবনে ছিল হাঁসফাঁস দশা। আবহাওয়া অফিসের মতে, ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আরেকটি তাপপ্রবাহ। এ পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে পরিকল্পনাগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এ বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার-হক ফারুক আহমেদ

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার ফাঁকা স্থানে হবে বনায়ন

যুগান্তর : তাপপ্রবাহসহ দেশের আবহাওয়ার নানা পরিবর্তন সামনে রেখে নগর বনায়নের বিষয়ে বলেছেন। আপনার পরিকল্পনা কী?

সাবের হোসেন চৌধুরী : নগর বনায়নের বিষয়টি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও গবেষণায় প্রমাণিত বিষয়। ঢাকা শহরে এখনো খালি জায়গা আছে। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে চাই কোন কোন জায়গায় আমরা নগর বনায়ন করব। এক্ষেত্রে দেখার বিষয়, কতটুকু জায়গা খালি পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি যে জায়গায় তাপমাত্রা অনেক, আমার চেষ্টা করব সেখানেও যেন কিছু গাছ রোপণ করা যায়। কী ধরনের গাছ রোপণ করতে হবে, সেটিও দেখতে হবে। গাছগুলো অবশ্যই অপেক্ষাকৃত কম রক্ষণাবেক্ষণের হতে হবে। সেই গাছ যদি কার্বন শোষণ করে, সেটি হবে আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া। কাজটি আমরা এককভাবে করতে পারব না। আমরা চাই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার; রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে কাজটি করতে। আমরা নির্ধারণ করে দিতে চাই, নগর পরিকল্পনায় ন্যূনতম এই পরিমাণ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন কিংবা ন্যূনতম এই পরিমাণ জলাভূমি থাকা প্রয়োজন। একটি নীতিমালা ঠিক করতে চাই। এটি হয়তো আমরা বাস্তবায়ন করব না। কিন্তু পরিবেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি নগর পরিকল্পনার গাইডলাইন হিসাবে কাজ করবে।

প্রথমে আমরা ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক বনায়নের চিন্তা করছি। পরে ঢাকার বাইরে। কারণ, ঢাকায় কাজটি বাস্তবায়ন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। ঢাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, পূর্বাচল পর্যন্ত। ব্যাংককে এ ধরনের সম্প্রসারণকে বলে এক্সটেনডেড মেট্রোপলিটন এরিয়া। উদাহরণ হিসাবে বলতে চাই, গাজীপুরের পরিবেশ কিন্তু বর্তমানে ঢাকার পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। সেটি নদীদূষণ, বাষুদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নানা দিক থেকে হতে পারে। সুতরাং আমাদের পুরো বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ঢাকার জন্য যে মডেল হবে, সেটি পরবর্তী সময়ে দেশের যে কোনো জায়গায় নগরায়ণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। অন্য এলাকার নগরায়ণের জন্য সেটি তখন হবে ব্লুপ্রিন্ট। পূর্বাচলে রাজউক প্লটিংয়ে একটি অংশ বন বিভাগকে দিয়েছে। যেন সেখানে বনায়ন করা যায়। এভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে।

যুগান্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা কোনদিকে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?

সাবের হোসেন চৌধুরী : জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়াকে আরও খারাপ করে তুলছে। ফিলিপিন মরুভূমির মতো হয়ে গেছে। আমাদের সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা, যে তাপপ্রবাহ লক্ষ করেছি তাতে আগামী বছর তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এটি হয়তো আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবে। তাছাড়া এলনিনোর প্রভাবে পরিস্থিতি আমাদের জন্য আরও জটিল দিকে যাচ্ছে। আরও চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখনই গভীরভাবে ভাবতে হবে। অতীতে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নিয়ে আলোচনা করেছি, তখন সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, ক্লাইমেট রিফিউজি, লবণাক্ততা, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের কথা বলেছি। এখন আমাদের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে এ বিষয়গুলো নিয়ে অমরা আগে ভাবিনি। এখন সেগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। সেটিই আসলে মূল কারণ। ধরে নিলাম আগামীকাল থেকে কার্বন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপরও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, বাযুমণ্ডলে এখনো যে পরিমাণ কার্বণ আছে, এর উপস্থিতি আরও ২০ বছর থাকবে। এর সঙ্গে আমাদের অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজন করতে হবে। সেটি কীভাবে হবে, সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করছি। সবাই গাছ রোপণের কথা বলছে। কিন্তু কাজটি সঠিকভাবে করতে হবে। আমরা একটি ভালো কাজ অপরিকল্পিতভাবে করতে পারি না, এটি একটি পরিকল্পনার অধীনে হতে হবে। কোন জায়গায় গাছ রোপণ করব, কী ধরনের গাছ থাকবে, কী ধরনের গাছ আমাদের ছায়া দেবে, তাপমাত্রা কমাবে-এগুলো বুঝতে হবে। নগর বনায়নের যে কথা বলেছি, এটি কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যেখানে সবুজ এলাকা আছে, সেখানে তাপমাত্রা অন্যান্য এলাকার চেয়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আমরা যদি এ কাজটিও করতে পারি, সেটিও অনেক বড় কাজ হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই ভাববে, তাপমাত্রা বাড়লে স্কুল বা কলেজ কতদিন বন্ধ রাখা যাবে। একটানা এক মাস বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তখন ভাবতে হবে, স্কুলের সময়টাকে সন্ধ্যার পর করা যায় কি না। যখন তাপমাত্রা অনেকটা কমবে। শ্রমিকরা দিনের বেলায় যে কাজ করেন, তাপপ্রবাহের সময় তা রাতে করতে পারেন কি না। সেখানে আবার ভাবতে হবে রাতে করতে গেলে শব্দদূষণ হবে। তাই এখানে অনেক বিষয় আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাপমাত্রাকে জলবায়ু পরিবর্তনে যে অভিযোজন, আমাদের সার্বিক পরিকল্পনা সে দৃষ্টিতেই দেখতে হবে।

যুগান্তর : জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কী উদ্যোগ আছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী : প্লাস্টিক-পলিথিন সমস্যাকে আরও জটিল করে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়। সেখানে আমরা প্রাধান্য দিই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিককে। এটি বলতে কী বোঝায়, সে বিষয়ে আমরা ১০০ দিনের কর্মসূচি নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০২৬-এর মধ্যে এটির ব্যবহার ও চাহিদা নব্বই শতাংশ হ্রাস করা। তার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রিসাইক্লিং। আরেকটি হলো-যারা এই প্লাস্টিক উৎপাদন ও বাজারজাত করে, তাদের ওপর একটি বাড়তি দায়িত্ব দিতে হবে। যাকে বলা হয় প্রডিউসার রেসপনসিবিলিটি। অর্থাৎ যারা এটি তৈরি করবে, যারা বাজারজাত করবে, তাদেরকে এটির ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী করা বা তাদের কাছ থেকে একটি অর্থ আদায়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশের একটি মূলনীতি হলো, যে দূষণ করবে, তাকেই দূষণের জন্য দায়ী করা হবে। দেশে আমরা এখনো এটি সেভাবে চালু করতে পারিনি। আন্তর্জাতিকভাবেও জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা কিন্তু সেটিই দাবি করি। আমরা বলছি, উন্নত বিশ্ব তাদের উন্নয়নের জন্য কার্বন নিঃসরণ করেছে। সুতরাং জলবায়ু দূষণের জন্য তারা দায়ী। এজন্য তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম