নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
আমদানির খবরে কমছে পেঁয়াজের দাম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৫ মাস পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ভারত। দেশটির সর্বোচ্চ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য দপ্তরের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার মহাপরিচালক সন্তস কুমার সারাঙ্গি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনতে প্রতি টন ন্যূনতম ৫৫০ ডলার ব্যয় করতে হবে।
এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ ঢুকতে শুরু করলে দাম আরও কমতে থাকবে। আমদানিকারকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চোরাইভাবে ভারত থেকে পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসত। এখন সঠিক উপায়ে নতুন করে ভারত থেকে পণ্যটি দেশের বাজারে ঢুকতে এক থেকে দুদিন সময় লাগবে। তবে প্রতি টন ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করায় দাম বেশি একটা কমবে না। রপ্তানি মূল্য আরও কমানো দরকার ছিল। কারণ ভারতে এবার অনেক পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। যা একদিন আগে ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা।
রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, ভারত থেকে এতদিন বৈধ পথে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ছিল। তবে কিছু পেঁয়াজ অবৈধ পথে দেশে ঢুকেছে। এছাড়া দেশীয় যে পেঁয়াজ তা দিয়ে সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়েছে। তাই কিছু সময় দাম কম থাকলেও পরে দাম বেড়ে গেছে।
তবে দেশের বাজারে ভারতের পেঁয়াজ এলে দাম আবারও কমতে শুরু করবে। তিনি জানান, শনিবার দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৫৫-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
৮ ডিসেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে। সেই সময়ের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে মেয়াদ শেষের আগেই ২৩ মার্চ পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকাল বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। তখন দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ ছাড়িয়ে যায়।
তবে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেয়।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। আবার রপ্তানি শুরু করলে দাম কমতে থাকে। এটা কী করে হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতিবছর হিসাব দিচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু সংখ্যক পেঁয়াজ নষ্ট হলেও চাহিদার বেশি পেঁয়াজ থাকছে। কিন্তু বাজারে পরিস্থিতি ভিন্ন। রপ্তানি বন্ধ করলেই বিক্রেতারা বলছেন সরবরাহ কম। তাই বাজার নিবিড়ভাবে তদারকি করে এবং আসল চাহিদা ও উৎপাদন হিসাব করে চাষাবাদ ও আমদানির রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। তাহলে অসাধুরা নয়ছয় করতে পারবে না।
এদিকে অনেক দিন ধরেই ভারতের মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু রপ্তানির ফলে অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি হয়ে যাতে দাম না বাড়ে সে কারণে সায় দিচ্ছিল না কেন্দ্রীয় সরকার। তবে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে মহারাষ্ট্রের ১১টি আসনে ভোট হবে ৭ মে। এর ঠিক দুদিন আগে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো।