Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

স্বস্তির বৃষ্টিতে বজ্রপাত মৃত্যু ১০

হিট স্ট্রোকে আরও ৫ জনের মৃত্যু

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বস্তির বৃষ্টিতে বজ্রপাত মৃত্যু ১০

এক মাসের দাবদাহের পর দেশের কয়েক জেলায় দেখা মিলেছে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে -যুগান্তর

তীব্র দাবদাহের মধ্যে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। এতে এসব এলাকায় তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসে। টানা এক মাস তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টির দেখা পেয়ে মানুষের মাঝে প্রশান্তি নেমে আসে। অনেকে প্রাণখুলে ভিজেন বৃষ্টিতে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৃপ্তি প্রকাশ করে দিয়েছেন স্ট্যাটাস। তবে এ সময় কুমিল্লা, সিলেট, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পেকুয়ায় বজ পাতে প্রাণ হারান ১০ জন। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বৃষ্টির সঙ্গে ছিল কালবৈশাখী। এতে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরের চালা উড়ে যায়। শতাধিক স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে যায়। এতে অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে হিট স্ট্রোকে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। 

দেশের উষ্ণতম এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৮১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে পুরো মাসে ১ দিনের জন্যও বৃষ্টি হয়নি। সারা দেশ বিবেচনায় গড় বৃষ্টিপাত ছিল মাত্র ৩ দিন। ওই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ১৩ দিন। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় দেশজুড়েই ছিল টানা তাপপ্রাবহ। 
পুরো মাসে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ১-১৯ এপ্রিল মাঝারি এবং ২০-৩০ এপ্রিল তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনায় মে মাসের আবহাওয়া পূর্বাভাসও দেওয়া হয়। এ মাসে এপ্রিলের মতো টানা তাপপ্রবাহ থাকবে না। তবে বেশ কিছুদিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। পুরো মাসে ১-৩টি মৃদু থেকে মাঝারি এবং ১-২টি তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে। একইসঙ্গে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ও। কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বৃষ্টিপাতের আওতা বাড়তে পারে। বৃষ্টি যত বেশি হবে তাপমাত্রা তত কমবে। 

অবশেষে রাজধানীতে বৃষ্টি : বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট, সূত্রাপুর, ইসলামপুরসহ আশপাশের একাধিক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মুগদা ও মাণ্ডা এলাকায়ও হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়। রাত ১১টার পর থেকে বনানী, গুলশান, মিরপুর, কুড়িল মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বজে র ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে আকাশ। এরপর মুষলধারায় বৃষ্টি হয়। এতে নগরে শীতল অনুভব হয়েছে। বৃষ্টির খবর জানিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। 

এ মাসে তাপপ্রবাহের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস : চলতি মাসের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ৩ থেকে ৫ দিন বজ ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা ধরনের কালবৈশাখী এবং ২ থেকে ৩ দিন বজ ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে। এদিকে মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে ১টি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিুচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। 

আঞ্চলিক হিট অ্যালার্ট জারি : দেশের কয়েকটি এলাকায় তাপপ্রবাহে দুদিনের আঞ্চলিক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাঞ্চল, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৪৮ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। 
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : বুধবার মধ্যরাত থেকে থেমে বৃষ্টি হয় নগরীর বিভিন্ন জায়গা ও উপজেলাগুলোতে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এক পশলা বৃষ্টি শুরু হয়। এতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পেলেন নগরবাসী। যদিও বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরপরই রোদের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ সময় তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে বিকাল ৪টায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফের বৃষ্টি হয়েছে।

চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা) : উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বুধবার রাত ১টা ৫৫ মিনিটে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। তবে তেমন ভারি বৃষ্টি হয়নি।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে উড়ে গেছে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরের চালা। শতাধিক স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে দোকানঘর, বসতবাড়ি ও রাস্তার ওপর। উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন রাস্তার পাশের স্ট্রিটলাইট। ফলে রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। বুধবার দুপুরে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও বেশিরভাগ এলাকা ছিল অন্ধকারে। 

রাঙামাটি : স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি সদরের সিলেটিপাড়া নামক এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় বজ পাতে নজির আহম্মদ নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাকে রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতাল নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া বাঘাইছড়ির রুপকারী ইউনিয়নের বড়াদম গ্রামে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ পাতে বাহারজান নামে এক নারী এবং সাজেকের বেটলিং মৌজার লংথিয়ানপাড়ায় তোনিবালা ত্রিপুরা নামে আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় একই এলাকার স্বপন চাকমার দোকানে বসা অবস্থায় বজ পাতে ৭ জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন-তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্রনাথ চাকমা, সুষম লাল চাকমা, অক্ষয় মণি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমর জ্যোতি চাকমা। আহতরা বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

কুমিল্লা ও দেবিদ্বার : জেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। নিহতরা হলেন-দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মোখলেছ (৫৮), সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০), বুড়িচং উপজেলার ১নং রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামের মো. কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কৃষক মো. আলম হোসেন (৪০), চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামের কৃষক দৌলতুর রহমান (৪৭)।

সিলেট : কানাইঘাটে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ পাতে বাবুল আহমদ (৪৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দুজন আহত হয়েছেন। দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের শফিক হাওরে এ ঘটনা ঘটে। বাবুল উপজেলার দক্ষিণ কুয়রেরমাটি এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। আহতরা হলেন, একই এলাকার ফাহিম আহমদ ও প্রদীপ বিশ্বাস। 

পেকুয়া (কক্সবাজার) : লবণের মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ পাতে দুই চাষির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-মো. দিদারুল ইসলাম ও আরাফাত হোছাইন। দিদারুল ইসলাম কোদাইল্যাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে এবং আরাফাত হোছাইন রাজাখালী ইউনিয়নের চরিপাড়া এলাকার জামাল হোছাইনের ছেলে। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : বজ পাতে আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার রাজা মিয়া নামে এক কৃষকের তিনটি গরু মারা গেছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তর মাছুয়াখালী গ্রামে হঠাৎ বজ পাতে এ ঘটনা ঘটে। 

মদন (নেত্রকোনা) : হিট স্ট্রোকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার দেওয়ান বাজারে আব্দুস সাত্তার এবং বিকালে গোলাপ মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। কৃষক আব্দুস সাত্তার ও কাঠ ব্যবসায়ী গোলাপ মিয়া ওই বাজারে প্রচণ্ড গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দুজনকেই মদন হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সাত্তার মিয়া উপজেলার পরশখিলা গ্রামের মৃত সিরাজ আলীর ছেলে। গোলাপ মিয়া চানগাঁও চকপাড়া নাগবাড়ির শহিদ মিয়ার ছেলে।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : হিট স্ট্রোকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মজিবর রহমান (৩৩) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের হাদিস আলীর ছেলে। 

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ধান কাটতে গিয়ে পৃথক স্থানে হিট স্ট্রোকে রহিম উদ্দিন (৫৮) নামে এক কৃষক ও অজ্ঞাতপরিচয় (৫৮) একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার উপজেলার মেদুয়ারী ইউনিয়নের বান্দিয়া গ্রামে এবং ভালুকা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাঁঠালী এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গা : বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আগের দিন বুধবার এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম