ঈদযাত্রায় সড়ক নৌপথ নির্বিঘ্ন ট্রেনে দুর্ভোগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আপনজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শনিবারও ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। সড়ক ও নৌপথে অনেকটা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন তারা। তবে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন সকাল থেকেই ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে। এতে তীব্র গরমে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
সূচি অনুযায়ী, চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস বেলা পৌনে ২টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি ছাড়ে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে বেলা ৩টায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রেনটি ঢাকায় আসার পর ইঞ্জিনের কাজ করানো হয়। এতে ছাড়তে দেরি হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, যাত্রীরা গরমে হাঁসফাঁস করছেন। মাথার ওপর ফ্যান চললেও অনেকে হাতপাখা দিয়ে গরম সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নারী ও শিশুদের কষ্ট বেশি। তবে ঈদযাত্রার প্রথম তিন দিন স্বস্তিতে ভ্রমণ করেছেন ট্রেনের যাত্রীরা।
নৌপরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৮টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। আরও ২০টি লঞ্চ অপেক্ষমাণ ছিল। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬টি লঞ্চ এদিন ঢাকায় ভিড়েছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে যাত্রী বাড়লেও প্রত্যাশার চেয়ে কম বলছেন লঞ্চ মালিকরা।
সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামলেই ব্যবস্থা : ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জোর তৎপরতা শুরু করেছে। শনিবার গাবতলী টার্মিনাল পরিদর্শন করে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, ঈদে আনফিট গাড়ি নামার সুযোগ নেই। কেউ যদি বের করে, সেটি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঈদের সময় কিছু আনফিট গাড়ি রাস্তায় নেমে আসে, এমন একটি কমন অভিযোগ থাকে প্রতিবছরই। এবার কোনোভাবেই যাতে আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামতে না পারে, এজন্য আমরা বিআরটিসির ৫৫০টি বাস রিজারভেশনে রেখেছি। এছাড়া গার্মেন্টস মালিকদের রিকুইজিশন দিতে বলেছি, যাতে আনফিট গাড়ি না নিয়ে বিআরটিসির বাস নিতে পারে। সুতরাং এখানে আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, টার্মিনালগুলো পরিদর্শন করেছি। গাবতলী টার্মিনালে আমাদের মোবাইল কোর্ট, ভিজিলেন্স টিম, মনিটরিং টিম কাজ করছে। রুট ভুল লেখায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করতে বলেছি। এখানে যাত্রীরও তেমন ভিড় নেই, পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও নেই।
সায়েদাবাদে অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত পেলেন যাত্রীরা : সায়দাবাদ টার্মিনালে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করা টাকা ফেরত পেয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স টিমের হস্তক্ষেপে ঘরমুখো যাত্রীরা টাকা ফেরত পান। শনিবার সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে স্টার ডিলাক্স পরিবহন কর্তৃপক্ষ যশোরগামী যাত্রী সবুজ হোসেন, লিমন, নজরুল, হুমায়ুনসহ ১২ জন যাত্রীর টাকা ফেরত দেন।
বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিকভাবে বাস কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বিআরটিএ’র নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, ঢাকা জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সারোয়ার প্রমুখ।
এদিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড় থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত রয়েছে অর্ধশতাধিক বাস কাউন্টার। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। পাশপাশি যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক যাত্রী যুগান্তরের জানান, আগের ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৩শ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে বিভিন্ন পরিবহণ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে ইলিশ বাস কাউন্টারের সুপারভাইজার রবিন, গোল্ডেন লাইন পরিবহণের টিকিট বিক্রেতা মিজান ও সোনালী বাস পরিবহণের নজরুল ইসলাম একই রকম তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় ফেরার সময় বাসগুলো একেবারেই খালি আসে। সে কারণে কিছু টাকা বাড়তি নিচ্ছি।
গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রী সংকট : গাবতলী বাস টার্মিনালে তেমন যাত্রী নেই। যারা গাবতলীতে আসছেন তাদের বেশিরভাগই অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য কাউন্টারে এসে যোগাযোগ করছেন। শনিবার সরেজমিন বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন বেশিরভাগ কাউন্টারই ফাঁকা। সকাল থেকে লোকজনের আনাগোনা ছিল কম। যাত্রীর চাপ কম থাকায় অনেকে কাউন্টার বন্ধ রেখেছে।
হানিফ পরিবহণের ঢাকা বরিশাল রুটের কাউন্টার ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যাত্রী সংকটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাদের কোনো বাস ছাড়েনি। পদ্মা সেতু হওয়াতে দক্ষিণাঞ্চলের সব যাত্রী সায়েদাবাদমুখী হয়েছে। এখানে কোনো যাত্রী নেই।
ঈগল পরিবহণের স্টাফ মানিক বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার যাত্রীর চাপ একটু বেশি থাকলেও আজ (শনিবার) তুলনামূলক কম।