Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঈদ ও বৈশাখ উৎসবের আমেজ অর্থনীতিতে

Icon

মনির হোসেন

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদ ও বৈশাখ উৎসবের আমেজ অর্থনীতিতে

রমজান, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে চাপে থাকা দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের উৎসবভাতা, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং জাকাত-ফিতরার কারণে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। অর্থাৎ বাড়তি টাকা বাজারে চাহিদা তৈরি করেছে।

অপরদিকে বেড়েছে পণ্যের সরবরাহ। খাদ্য, পোশাক, প্রসাধনী, ইলেকট্রিকসামগ্রী, অলংকারসহ সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ ও বিক্রি বেড়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেড়েছে বেচাকেনা। কেনাকাটা বেড়েছে অনলাইনে। জমে উঠেছে ইফতারির বাজার। গ্রামেও টাকার প্রবাহ বাড়ছে।

এছাড়াও বিনোদন ও পরিবহণ খাতে বাড়তি অর্থ যোগ হচ্ছে। তবে নেতিবাচক দিকও কম নয়। ঈদের ছুটি এবং শুক্রবার মিলে চলতি মাসে ১৪ দিন অফিস-আদালত বন্ধ থাকছে। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অপরদিকে বাজারে বাড়তি টাকার কারণে চলতি মাসেই মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থায় উৎসবগুলো আশীর্বাদ হয়ে আসে।

তাদের মতে, উৎসবের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হিসাব বলছে, চলতি মাসেই অর্থনীতিতে অতিরিক্ত আরও দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উৎসব ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘনঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে সরকারের রাজস্ব আয়। তাদের মতে, অর্থনীতিতে চাহিদা বেড়েছে। এর সঙ্গে সরবরাহ ঠিক রাখতে না পারলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

করোনার সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এরপর আসে ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ ও বৈশাখের মতো উৎসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। কারণ, এতে দেশে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়।

তার মতে, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে এই উৎসব পুরোটাই ইতিবাচক বলা যায়।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বোনাস দিচ্ছে। বাজারে এই বাড়তি টাকা আসায় কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এতে অভ্যন্তরীণ একটি চাহিদা সৃষ্টি হবে। তবে মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের হিসাবে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার হচ্ছে প্রায় ৫০ লাখ কোটি টাকা। তবে উৎসবে কত টাকা লেনদেন হয়, এর সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই।

রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে এফবিসিসিআই-এর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন নিজস্ব একটি সমীক্ষা করেছেন।

ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হচ্ছে।

সমীক্ষা মতে, পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরিবহণ খাতে ৮০০ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এর বাইরে আরও কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ড টাকার প্রবাহ বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস; যা ঈদ অর্থনীতিতে আসছে। এছাড়াও রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা। মার্চে ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ২২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। চলতি মাসে রেমিট্যান্স আরও বাড়তে পারে।

জানা যায়, আলোচ্য তিন উৎসবের মধ্যে শুরুতেই রমজান। এ মাসে মানুষের পণ্যচাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে ইফতারে ব্যবহার হয়, এ ধরনের পণ্যগুলোর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ডিম, ফলমূল, শাকসবজিসহ অন্যান্য আইটেম।

রমজানে সারা দেশে ইফতারকেন্দ্রিক কয়েক লাখ মানুষ মৌসুমি ব্যবসা করেন। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

রমজান শেষে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদে স্বাভাবিকভাবেই টাকার প্রবাহ বাড়ে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, ব্যবসার টাকা, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং জাকাত-ফিতরা মিলিয়ে অর্থনীতিতে নতুন করে দেড় লাখ কোটি টাকা যোগ হয়। এর একটি অংশ ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছে।

ঈদ ও রোজার বাড়তি খরচ মেটাতে কৃষকের ঘরে মজুত ধান বা অন্যান্য ফসলের একটি অংশ বিক্রি শুরু হয়েছে। তরমুজের মতো মৌসুমি ফলের ব্যবসাও জমে উঠেছে। এছাড়াও অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ করার ধুম পড়েছে। ফলে সবকিছু মিলে টাকার স্রোত এবার গ্রামের দিকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ টাকার বড় অংশই যাচ্ছে ভোগ-বিলাসে। আর কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, তিনটি উৎসব তিন ধরনের। এর মধ্যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ।

এই রোজার ঈদে টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বাড়ে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ টাকা পোশাক, ভোগ্যপণ্য, শৌখিনতা, ভ্রমণসহ বিনোদনমুখী খাতে বেশি হচ্ছে। কাজেই এটা একটা বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে। তিনি আরও বলেন, উৎসব ঘিরে অর্থনীতির আকার, ধরন ও ব্যাপ্তি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। মানুষ এ উৎসব ঘিরে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী-প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হচ্ছেন।

সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এতে কিছু মানুষের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জানা যায়, অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে এবার বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এগুলো এখন তা খুচরা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদুল ফিতরে বেশি অর্থব্যয় হয় নতুন পোশাক ক্রয়ে। মার্কেটগুলোয় সব বয়সি মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক বেচাকেনা হচ্ছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ পোশাকের চাহিদা বাড়ে ব্যাপক হারে।

এদিকে ঈদ উৎসব পালন করতে রোজার শেষদিকে শহরের অধিকাংশ মানুষ যান গ্রামের বাড়ি। এ সময় অতিমাত্রায় বেড়ে যায় পণ্য এবং যাত্রীবাহী পরিবহণ ও নৌযানের চলাচল। এতেও টাকার প্রবাহ বাড়ে।

অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদনের জন্য দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থান এবং বিদেশে বেড়াতে যান অনেকে। ফলে পর্যটন খাতেও যোগ হয় বাড়তি টাকার প্রবাহ। সার্বিকভাবে এ কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণত অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে অতিরিক্ত অর্থের প্রভাব বেড়ে যায়।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি সিনিয়র সহসভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, উৎসবে চাঙা হয়ে উঠে আমাদের অর্থনীতি। বিশেষ করে পোশাকে বিশ্বে আমাদের একচেটিয়া বাজার। বাংলাদেশের ভেতরেও এর চাহিদা রয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পাঞ্জাবিতে আমরা সেরা। এগুলোর চাহিদা ঈদে অনেক। তিনি বলেন, এবার ঈদে বেচাকেনা ভালো। দোকানগুলোয় আশানুরূপ বেচাকেনা না হলেও যা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা খুশি।

অভ্যন্তরীণ পোশাকের বাজার : ঈদ অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি পোশাকের বাজার। এ সময় পোশাকের বেচাকেনা দোকানগুলোয় তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ পোশাকের সবচেয়ে বড় জোগান আসছে পুরান ঢাকার উর্দুরোডের অভ্যন্তরীণ পোশাক মার্কেট থেকে। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভাগ ও মফস্বল মার্কেটগুলোয় দেশি পোশাক সরবরাহ হচ্ছে এই মার্কেট থেকে।

এখানে রয়েছে সাড়ে চারশ পোশাকের দোকান। চোখের দেখায় দোকানগুলোর আয়তন খুবই ছোট হলেও রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি দোকানে কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের বুটিক ও ফ্যাশন হাউজগুলো বেশ ব্যস্ত। ঈদের বাজার ধরতে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত পণ্য তৈরি করেছে।

ভোগ্যপণ্যের বাজার : ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই ও পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন, চিনি দুই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখ টন, ডাল ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন, ছোলা ৫০-৬০ হাজার টন, খেজুর ১৫ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন।

এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের জোগান দেওয়া হয়।

বোনাস : এ বছর ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম বেতন কাঠামোর আলোকে ঈদ বোনাস পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিন বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও রয়েছে; যা পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ অর্থনীতিতে।

দোকান কর্মচারী বোনাস : ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারা দেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে তিনজন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে।

একজন কর্মীকে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা ধরে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা; যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।

তৃতীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সর্বজনীন উৎসব এটি। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে এই একটি দিনে সবাই যেন বাঙালি হয়ে যায়। বৈশাখের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট আকার নিয়ে এখনো প্রাতিষ্ঠানিক কোনো গবেষণা হয়নি। তবে সূত্রের হিসাবে লেনদেনের সম্ভাব্য পরিমাণ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

উৎসবের জন্য সরকার এ বছরও বোনাস দিয়েছে। করোনা এবং রমজানের কারণে গত তিন বছর বৈশাখের উৎসব সেভাবে পালন হয়নি। এবার ঈদের ছুটির পর বৈশাখ হওয়ায় মূল উৎসব পান্তা-ইলিশসহ দিনের খাওয়া চলবে। ফলে ইতোমধ্যে বৈশাখের হাওয়া লেগেছে অর্থনীতিতে। বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক, রকমারি বাঙালি খাবার, কার্ড ও মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময়, মেলা এবং হালখাতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশাখে বিশেষ অফার দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে আকর্ষণীয় অফার। ফ্যাশন হাউজগুলোয় বাহারি রং ও ডিজাইনের বাঙালি পোশাকের সমারোহ। নতুন পোশাক কিনতে হাউজগুলোয় প্রতিদিনই ভিড় ভাড়ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে নামিদামি শপিংমল-সবখানেই বৈশাখের ছাপ পড়েছে। ক্রেতা আকর্ষণে বিভিন্ন কোম্পানি বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। গত কয়েক বছরে অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পিছিয়ে নেই নিত্যপণ্য, ফুল, মৃৎশিল্প ও গহনার ব্যবসায়ীরা। গ্রাম থেকে শহর-সর্বত্রই বৈশাখ ঘিরে জমজমাট বাংলা নববর্ষ বরণ করতে প্রস্তুতি। গ্রামগঞ্জে চলছে অসংখ্য মেলার আয়োজন। শহরের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বৈশাখী তাঁতমেলা। এসব কর্মকাণ্ড ঘিরে অর্থনীতির লেনদেন বাড়ছে কয়েকগুণ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখে বেশির ভাগ কেনাকাটা হয় পোশাক। বছরে যেসব কেনাকাটা হয়, এর ২০ শতাংশই বৈশাখে। দুই ঈদে মিলে ৬০ শতাংশ। বাকিটা সারা বছর। শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়। এশিয়ার বৃহত্তম মার্কেট যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা যায়, বিপণিবিতানগুলোয় অভিজাত ও মধ্যম আয়ের ক্রেতাদের জন্য সব ধরনের বৈশাখী সাজ ও পোশাক কিনতে ব্যাপক ভিড়।

ব্যস্ত নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো। বিশেষ করে আড়ং, অঞ্জনস, দেশি দশ, নবরূপা, মেট্রো, জেন্টালপার্ক, ইনফিনিটি, হুর, ক্যাটসআইসহ দেশের সব শীর্র্ষ ব্র্যান্ড বৈশাখী পোশাকের পসরা সাজিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পেশাকে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্যছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি দোকানে ঘুড়ি, মুখোশ ও লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব শোরুমে ক্রেতারা তাদের পছন্দসই পোশাক কিনতে ভিড় করছেন। যমুনা ফিউচার পার্কে বেচাকেনায় আমেজ চলছে।

মেয়েদের জন্য রং-বেরঙের থ্রি-পিস, কুর্তি, শাড়ি ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়। আর শিশুদের জন্যও রয়েছে দারুণ সংগ্রহ। আর গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হবে না। সবকিছু মিলে বৈশাখ ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি এসেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম