Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাই মিনিস্টার-মাইওয়ান পণ্য

এম এ রাজ্জাক খান রাজ, চেয়ারম্যান, মাইওয়ান গ্রুপ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাই মিনিস্টার-মাইওয়ান পণ্য

যুগান্তর : মিনিস্টার গ্রুপের যাত্রা শুরু সম্পর্কে কিছু বলুন। বিনিয়োগ ছিল কেমন?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : উচ্চমাধ্যমিক শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর গমন করি। কিন্তু সব সময়ই ইচ্ছা ছিল দেশে কিছু করার। তাই ১৯৯৯ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসি। সে সময় বিশ্বমানের একটি দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের অভাববোধ করছিলাম। ২০০২ সালে মাত্র পাঁচজন কর্মী আর পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করি।

আমরা ২০০৫ সালে প্রথম ফ্রিজ অ্যাসেম্বলিং শুরু করেছি এবং ২০১৩ সাল থেকে নিজস্ব কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করেছি। সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসায় আমরা সফলতার সঙ্গে ২১ বছর পার করলাম। দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন ছাড়া আমরা এতদূর আসতে পারতাম না। এ সফলতার পেছনে সব থেকে বড় অবদান ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সহযোগিতায় আজ আমরা দেশীয়ভাবেই সব ধরনের পণ্য বাজারে নিয়ে আসতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দেশের সুপরিচিত ব্র্যান্ড হিসাবে আমরা জনপ্রিয়তা অর্জন করি এবং দেড় যুগ পেরিয়েও সেই জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ধন্যবাদ সেসব গ্রাহকের প্রতি যাদের আস্থা ও বিশ্বাসে আমরা আজ এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।

যুগান্তর : কবে থেকে উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেছে মিনিস্টার?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : ২০০২ সালে সাদা-কালো টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করি। প্রথমে সাদা-কালো টিভি, এরপর রঙিন। এখন তো বেসিক এলইডি, স্মার্ট এবং ফোর-কেসহ গুগল টিভি উৎপাদন করছি। ২০০৫ সালে ফ্রিজ অ্যাসেম্বলিং শুরু করি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে নিজেরাই উৎপাদন করছি। এসি উৎপাদন করছি ২০১৭ সাল থেকে। এছাড়া উৎপাদন করছি বিভিন্ন ধরনের হালকা ও মাঝারি হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য। গরমের মৌসুমে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ফ্রিজ উৎপাদনসহ বাৎসরিক অন্তত ৪ লাখেরও বেশি ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া বাৎসরিক ৫০ হাজারেরও বেশি টিভি এবং ২০ হাজারেরও বেশি এসি আমরা উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকি। মিনিস্টারই প্রথম ফ্রিজ এবং ইনভার্টার এসিতে ১২ বছর গ্যারান্টি এবং নির্দিষ্ট মডেলের টিভিতে প্যানাল ও পার্টসে ৫ বছর গ্যারান্টিসহ সার্ভিসে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। দেশের সব জেলায় নিজস্ব শোরুম এবং ডিলার ফ্র্যাঞ্চাইজিং শোরুম রয়েছে ১ হাজারের বেশি। ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রিতে বাজারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখন মিনিস্টারের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।

যুগান্তর : মিনিস্টার ফ্রিজ নিয়ে কিছু বলুন।

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ তৈরি করে থাকে মিনিস্টার। মিনিস্টারের রয়েছে স্পেসিফিকেশন, আকৃতি, ডিজাইন। প্রতিটি পণ্যের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করেই দামের ভিন্নতা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ফ্রিজে যুক্ত করা হয়েছে এমন সব প্রযুক্তি, যা সঠিক তাপমাত্রা-হিমায়িত খাবারের ভিটামিন, প্রশস্ত এবং নমনীয় স্টোরেজ এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখে। সম্পূর্ণ অটোমেটিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি ফ্রিজ। একই সঙ্গে ৬৬ শতাংশ এনার্জি সেভিং কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়। যার ফলে প্রতিটি ফ্রিজ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী।

যুগান্তর : ফ্রিজ ছাড়া আর কী কী পণ্য উৎপাদন করছেন?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : মিনিস্টারের প্রডাকশন লাইনে রেফ্রিজারেটর ছাড়াও রয়েছে ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, এলইডি টিভি, স্মার্ট এলইডি টিভি, ব্লেন্ডার, গ্রিন্ডার, রাইসকুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক ক্যাটলি, ফ্যান, আয়রনসহ ২০টিরও বেশি পণ্য। এছাড়া করোনা মহামারির সময় মিনিস্টার হিউম্যান কেয়ার-এর মাধ্যমে ডিটারজেন্ট, হ্যান্ডওয়াশ, মাস্কসহ বিভিন্ন জরুরি পণ্য বাজারে নিয়ে আসি। ২০২২ সালে ইরাজ ডটকম নামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠা করে নতুনভাবে গ্রাহকদের ই-কমার্স সেবা নিশ্চিত করছি। বাজারে এসব পণ্যের বিপুল চাহিদার কথা চিন্তা করেই আমাদের কর্মীরা ভালো মানের পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

যুগান্তর : বছরের কোন সময়ে ফ্রিজ বেশি বিক্রি হয়? তখন কী ধরনের প্রতিযোগিতা করতে হয়?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : সাধারণত গরমের মৌসুমে দেশের বাজারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) এবং ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায়। গত বছর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবদাহ বয়ে গেছে দেশজুড়ে। এবারও গ্রীষ্মে তো প্রচণ্ড দাবদাহ দেখা যাচ্ছে। যে কারণে ফ্রিজ বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি বাড়বে আশা করছি। পাশাপাশি এসি এবং ফ্যানের বিক্রিও ভালো। এসির চাহিদা এ সময় এমন বৃদ্ধি পায় যে, আমরা এসি সরবরাহ এবং ইনস্টলেশন করতেই হিমশিম খেয়ে যাই। এ সময়টায় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রিতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তবে এ প্রতিযোগিতায় আমরা সর্বদাই এগিয়ে কারণ, আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের পণ্য উৎপাদন করে থাকি এবং তা সুলভমূল্যে বাজারজাত করে থাকি। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমরা সব থেকে ভালো পণ্য বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করি যা আমাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। মান ও গুণের সমন্বয়ে তৈরি আমাদের পণ্য তাই বাজারে সর্বজনগৃহীত। প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য আমরা কখনো মানের পরিবর্তন করি না। যার ফলে সুবিবেচক ক্রেতাগণ আমাদের পণ্যই কিনে থাকেন।

যুগান্তর : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের কতটা অগ্রগতি হচ্ছে?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প বর্তমানে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সম্ভাবনাময় একটি শিল্প খাতে রূপ নিয়েছে। আর এ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। তার মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে ইলেকট্রনিক্স শিল্প। আমি মনে করি, দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের বিকাশের ফলে বিপুল পরিমাণ পণ্যের আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। এ শিল্প হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে সারা বিশ্বে আমাদের ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।

যুগান্তর : এ খাতের উন্নয়নে কী কী সমস্যা রয়েছে? সরকারের কী ধরনের নীতিসহায়তা দরকার?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : পণ্য উৎপাদনের মৌলিক উপাদান হলো আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ সব পণ্যই মূলত বিদেশ থেকে আমদানিকৃত উন্নতমানের কাঁচামাল থেকে দেশে উৎপাদন করে থাকে। ডলারের সংকট এবং এর দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাঁচামালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনা এবং দীর্ঘসূত্রতায়। আর এই এলসির প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় আমাদের আমদানিকৃত কাঁচামাল শিপমেন্টও দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও। সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়ায় পণ্য উৎপাদন ধীরগতি হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পণ্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষের সক্ষমতার কথা চিন্তা করে আমরা পণ্যের দাম সেই অনুপাতে বাড়াতে পারছি না যা এ খাতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মূল কারণ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্পগুলোর জন্য আরও এক থেকে দুবছর কর সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের সক্ষমতা অর্জনে বিদ্যমান সুবিধা আগামী এক থেকে দুবছর বাড়ানো হলেও হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে পণ্যমূল্য বাড়বে এবং শিল্পের সক্ষমতা কমবে।

হোম অ্যাপ্লায়েন্স, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সিমেন্ট, মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু খাত রিডিউসড রেটে (হ্রাসকৃত হারে) মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রদান করছে (নিয়মিত ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ)। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, এ খাতগুলোকে এখন কিছুটা বেশি (৭.৫ শতাংশ) হারে ভ্যাট দিতে হবে, তবে এক থেকে দুবছরের জন্য হ্রাসকৃত করহারের সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে বলে তুলে ধরা হয়েছে এ বাজেটে। আমরা এখনো দেশের অভ্যন্তরে কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারিনি। সুতরাং আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়টি বিবেচনা করে করের পরিমাণ হ্রাস করবে।

যুগান্তর : ক্রেতার রুচি-পছন্দের সঙ্গে ফ্রিজ উৎপাদনকারীদের কীভাবে তাল মেলানো দরকার?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে, ক্রেতাদের চাহিদা এবং রুচিরও তেমন পরিবর্তন ঘটছে। যার ফলে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের থাকতে হচ্ছে আরও বেশি সচেতন। গ্রাহকরা সব সময় আশা করে কম টাকায় ভালো ও উন্নত পণ্য কেনার। আর তাদের কথা চিন্তা করে মিনিস্টার গ্রুপ দেশের মধ্যেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করছে নানা মডেলের ও নানা ডিজাইনের পণ্য। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে আমরা সব সময় পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের করেছে অন্যদের থেকে অনন্য। আমি মনে করি, প্রতিটি উদ্যোক্তারই উচিত ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে তাদের পণ্য তৈরি করা।

যুগান্তর : মিনিস্টার গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এম এ রাজ্জাক খান রাজ : ‘লক্ষ্য এবার বিশ্বজয়’-এ স্লোগানকে লালন করে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ দেশের অন্যতম সেরা ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ বিশ্বব্যাপী একটি শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ের প্রতিযোগী হিসাবে টিকে থাকবে বলে আশা রাখি। আমরা দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রতিটা দেশে পৌঁছে দিতে চাই মেড ইন বাংলাদেশ। তখন মিনিস্টারের পণ্যই হবে আমাদের দেশের অ্যাম্বাসেডর।

এছাড়া গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমাদের পণ্যকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে পণ্যগুলোর ব্যাপক সমৃদ্ধ সাধন করছে আমাদের দক্ষ টিম। বিভিন্ন কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতার মাধ্যমে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে দেশীয় বাজারে শেয়ার বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, আমরা একটি ই-কমার্স সাইট ‘ই-রাজ’ প্রবর্তন করেছি যা দিয়ে আমরা দেশব্যাপী সব গ্রাহকের সন্নিকটে আমাদের পণ্য পৌঁছে দেব ইনশাআল্লাহ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম