স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় মির্জা ফখরুল
সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ
শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিস্টদের কবলে পড়েনি, বর্ণবাদীদের কবলেও পড়েছে। যারা বিএনপি করে, তাদের ঘর-বাড়ি, জমি, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি দুঃসম্পর্কের আত্মীয় যারা আছে তাদেরকে বিএনপি হিসাবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বর্ণবাদ ছাড়া কিছু নয়। দেশটাকে তারা (সরকার) দুটি ভাগে ভাগ করেছে। এক ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আরেকটা ভাগ বিরোধী দল। আওয়ামী লীগই দেশে সাম্প্রদায়িক অবস্থা তৈরি করেছে। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছে যে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের এই জিহাদ নাকি অব্যাহত থাকবে। যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, গোষ্ঠী তৈরি করে, বর্ণবাদ সৃষ্টি করে, তাদের মুখে এ কথা শোভা পায় না? শুধু কথা বলে মানুষের সম্পদ লুট করে, মানুষজনকে সর্বস্বান্ত করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজটি করছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই গণতন্ত্রের বিরোধী শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেছে, কিন্তু সব সময় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। গত নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, দেশে জনগণের অধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয় না। অত্যন্ত অপকৌশলে গত ১৫ বছর ধরে নির্বাচনকে তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং আমরা যারা গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং দেশের অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলেছি, তাদের ওপর চরম দমন-পীড়ন ও নির্যাতন নেমে এসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান আন্দোলনে এত ত্যাগের পরেও মনে হয়েছে- তরুণদের, যুবকদের আরও শক্ত করে জেগে উঠতে হবে। ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় পরে মনে হয়েছে যে, তরুণদেরকে সেভাবে নামাতে পারেননি। এখন কথা বলার সময় কম। কাজ করার সময় বেশি। শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলে সংগ্রামকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের বাংলাদেশ ভিন্ন এক বাংলাদেশ, আজকের বিশ্ব ভিন্ন এক বিশ্ব, আজকে যে ভূ-রাজনীতি আছে সেই ভূ-রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। স্বার্থ স্বার্থ স্বার্থ। নিজ নিজ দেশ তাদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কিছু ভাবে না। সেখানে মানবাধিকার, অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান সব কিছু ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারও বিশ্বাস করে না। ৭২-৭৫ এ তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) একবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এবারও সারা দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। ‘টাইম ম্যাগাজিন’ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নাম দিয়েছে ‘বাকশাল টু’।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা উদ্যাপন করার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে নাই। স্বাধীনতার মাসেও সরকার মুক্তিযোদ্ধাকে কারারুদ্ধ করে, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?
সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, যারা এখানে স্লোগান দিচ্ছেন, এই দেশ তো আপনাদের। আপনাদের আগের ছাত্ররা জীবন দিয়েছে আমি তার সাক্ষী। একাত্তর সালে আমি তাদেরকে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন, পাঠক’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মেজর হাফিজ বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে কে লেখা পাঠিয়েছিলেন? কার লেখা পাঠ করেছেন? সেই মাহেন্দ্রক্ষণে কাউকে তো খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু কথা বলার রাজনীতি করলে হয় না। শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মাপের নেতা। তাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ টেপ রেকর্ডার নিয়ে গেলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি শেখ মুজিবুর রহমান। যখন মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন হচ্ছিল, তখন কেউ নামেনি, নেমেছিল ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা।’
গোটা রাষ্ট্র ও জাতিকে সরকার গিলে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির নেতারা বলেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা সংগ্রাম করছেন, লড়াই করছেন। বাংলাদেশের মানুষ বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতাকামী। স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়। এটা বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এবং তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন। এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে, বিশ্ব প্রেক্ষিত এবং সামগ্রিক অবস্থা সামনে নিয়ে রাজনীতি ও কৌশল আবারও ঠিক সেইভাবে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ সংগ্রাম ও আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ দলটির সিনিয়র নেতা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।