Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যাংক একীভূতকরণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক একীভূতকরণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ

ব্যাংক একীভূতকরণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা। ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোকে জোরপূর্বক একীভূত করা হচ্ছে কিনা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা এবং কি উদ্যোগ নিচ্ছে সেটিও জানতে চান তারা। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে ১৬টি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা এ উদ্বেগ প্রকাশ এবং অর্থনীতি গতিশীল আনতে নানা ধরনের সুপাশি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র, বৈঠকে উপস্থিত এবং স্থায়ী কমিটির একাধিক সভাপতির সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ২টায় শেষ হয় বৈঠক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় টানা ৩ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধানের মধ্যে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক একীভূতকরণ করা হচ্ছে। সেটি যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হয়, তাহলে বাজারে ভালো কোনো বার্তা যাবে না। সেখানে আরও বলা হয়, অর্থনীতি কিছুটা ভালোর দিকে ইউটার্ন নিচ্ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে থাকায় সাধারণ মানুষ ভালো নেই। সাধারণ মানুষ ভালো অবস্থায় না থাকলে অর্থনীতি ভালো হলেও সেটি আলোচনায় আসছে না। ফলে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষকে কিভাবে ভালো রাখা যায় সেদিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

সূত্রমতে, ওই বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার, আগামী বাজেটে ব্যক্তি করসীমার আকার বাড়ানো ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তি খাত করমুক্ত রাখা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং খাতে বরাদ্দ বাড়ানা এবং মফস্বল শহরে ধনী শ্রেণিকে করের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রাপ্য সুপারিশগুলো আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধু অর্থ বিভাগকে দোষারোপ না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বলেছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধানদের।

জানা গেছে, প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশ হিসাবে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সে বৈঠকে শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধানদের মুখে আলোচনায় উঠে আসে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট, মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ, ব্যাংক মার্জার নিয়ে শঙ্কা।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে সেটি জোরপূর্বক করা হচ্ছে কিনা জানতে চেয়েছি। আমি বলেছি, মার্জারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ইচ্ছা থাকতে হবে। সেটি না হলে এক ধরনের ভুল বার্তা ছড়াবে। সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি। এটি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছি।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যুগান্তরকে জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে যেন মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয় সে পরামর্শ দিয়েছি। কারণ বর্তমান জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে কি প্রক্রিয়ায় একীভূত করা হচ্ছে সেটিও জানতে চেয়েছি আমি।

সূত্র জানায়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয় অর্থমন্ত্রীকে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ যুগান্তরকে জানান, ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেকটা কর মুক্ত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এটি যেন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে সে প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমান আইটি খাতে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ খাতে বহুলোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় কি উদ্যোগ নিচ্ছে সেটি জানতে চাওয়া হয়। তবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক প্রধান ব্যাংক একীভূত নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে বলপূর্বক ব্যাংক মার্জার করা হচ্ছে কিনা সেটি সামনে নিয়ে আসেন। তবে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনে স্বেচ্ছায় চাইলে দুটি ব্যাংক একীভূত হতে পারবে এ ধরনের বিধান ছিল। পরে সংশোধিত আইনে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ফোর্স করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলোকে একীভূত করাতে পারবে সেটি যুক্ত করা হয়। যদি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো ইচ্ছাকৃত একীভূত না হয় সেক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংককে জোরপূর্বক একীভূত করা হয়নি।

সম্প্রতি একীভূত হয়েছে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এক হতে চুক্তি সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যরত তফশিলি ব্যাংকগুলো নিজেরা একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

জানা গেছে, আরও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে ডজনখানেক ব্যাংক একীভূত হতে পারে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের সাতটি, সরকারি তিনটি এবং বিদেশি মালিকানার একটি ব্যাংকের নাম শোনা গেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা ৫০টির মধ্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। সব আমানতকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আগামী বাজেটে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে শিশুদের ফিডিং খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন। এছাড়া অনেক স্কুল ও কলেজে শিক্ষকের চেয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম। ওইসব স্কুলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এক ধরনের বসিয়ে তাদের পেছনে এ ব্যয় গুনতে হচ্ছে। অর্থ বিভাগকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান তিনি।

সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ. স. ম ফিরোজ বলেছেন, রাজধানীর বাইরে মফস্বল শহরকেন্দ্রিক অনেক ধনী রয়েছেন, যারা আয়কর দিচ্ছেন না, অথচ তাদের কর দেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে। এই শ্রেণিকে করের আওতায় আনতে এনবিআরকে বিশেষ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়ার সুপারিশ করেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন মোল্লা, তথ্য ও সম্প্রসারণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি গোলাম দস্তগীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম