যুগান্তরকে চার মেয়রপ্রার্থী
দুর্নীতিমুক্ত কুমিল্লা নগরী গড়ার প্রত্যয়
কাজী জেবেল, কুমিল্লা থেকে
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে চারজন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন ডা. তাহসীন বাহার সূচনা, সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। চার প্রার্থীর সবাই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। মেয়র নির্বাচিত হলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করে নিজের পরিকল্পনামতো নগরীকে নতুন করে সাজানোর কথা জানান তারা। ভোটের আগের দিন শুক্রবার যুগান্তরকে দেওয়া পৃথক সাক্ষাৎকারে তারা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-কুমিল্লা ব্যুরো চিফ তাবারক উল্যাহ কায়েস ও ব্যুরো রিপোর্টার আবুল খায়ের।
আমার গণজোয়ার দেখে অনেকেই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে-সূচনা : নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসীন বাহার সূচনা। শুক্রবার নগরীর মুন্সেফ বাড়িতে যুগান্তরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। নতুন করে রাজনীতিতে আসিনি। আমার বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে মানুষ বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এ নির্বাচনে আমিই জয়ী হব।
মেয়র হলে কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যানজট ও জলাবদ্ধতার সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেব। নগরীর উন্নয়নের নতুন ধারা সূচনা করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কুমিল্লাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। দুর্নীতির সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাসিন্দাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। নগরমাতা নয়, নগরকন্যা হিসাবে নাগরিকদের সেবা করতে চাই।
মেয়র হলে আমি দরজা উন্মুক্ত রেখে কাজ করব, যাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সরাসরি আমার কাছে আসতে পারেন। সূচনা বলেন, এ শহরের বাসিন্দাদের মাঝে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিয়ে সেবার মানসিকতা নিয়েই বড় হয়েছি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, জনসাধারণের মাঝেই থাকব। আমার গণজোয়ার দেখে অনেকেই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। ভোটে নগরবাসী সব ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে যত ভোটার আসবে, আমার ভোট তত বাড়বে। তাহলে কেন আমি ভোটারদের ভয় দেখাব। নির্বাচন পুরোপুরি সুষ্ঠু করতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এটাকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বলা যায় না-সাক্কু : সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন মনিরুল হক সাক্কু। শুক্রবার নানুয়াদিঘীর পাড়ে নিজ বাড়িতে তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। ককটেল নিক্ষেপ এবং গুলি করা হয়েছে। এটাকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বলা যায় না। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। তিনি বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার সুযোগ দেন। তারা যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের মেয়র নির্বাচিত করুক। কিন্তু তা না করে তারা ষড়যন্ত্রের ছক এঁকেছেন। ভোটারদের পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছেন।
সাক্কু বলেন, পেশিশক্তি দিয়ে বিগত নির্বাচনেও আমার ফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবারও আমার বিজয় ছিনিয়ে নিতে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। একই পরিবারে সংসদ-সদস্য ও মেয়র মানুষ দেখতে চায় না।
নির্বাচিত হলে কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মেয়র থাকাবস্থায় মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এনেছি। ওই টাকা এখনো ব্যয় করতে পারেনি। আমি মেয়র হলে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী পরিকল্পিত উন্নয়ন করব।
তিনি বলেন, উন্নয়নকাজ করলে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। জানা সত্ত্বে কোনো দুর্নীতি করিনি। এই শহরের উন্নয়ন আমার হাতেই শুরু হয়েছে। আমি নগরীতে প্রবেশের জন্য ৬টি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন করব।
এক দশকের লুটপাট বন্ধ করব-কায়সার : কুমিল্লাকে নিরাপদ ও সম্প্রীতির শহর হিসাবে গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন মেয়রপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। নগরীর ধর্মসাগরপাড়ে নিজ বাড়িতে যুগান্তরকে বলেন, আমি জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন করছি। কাউকে জিতিয়ে দিতে অথবা কাউকে হারানোর জন্য এ নির্বাচন করতে আসিনি। জনগণের ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হব ইনশাআল্লাহ। জয়ী হলে আমি সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করব। কিশোর গ্যাং ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন করব। আইসিটি ক্লাব, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং শিক্ষার ব্যবস্থা করব, স্মার্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি বলেন, এক দশক ধরে সিটি করপোরেশন এলাকায় যে মিলেমিশে লুটপাট চলেছে, তা বন্ধ করব। মানুষকে তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করব। ক্ষমতার ভারসাম্য আনব। মানুষ এসব লুটেরাদের কবল থেকে রক্ষা পেতে চায়। তাই আমার ঘোড়া প্রতীকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি কুমিল্লার আপামরসাধারণের নিজাম। সেই হিসাবেই নির্বাচনে এসেছি। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার আমার অবস্থা অনেক ভালো। বিএনপি-জামায়াতসহ ইসলামি মূল্যবোধের সব শক্তি আমাকে চাচ্ছে।
পেশিশক্তির কবল থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে চাই-তানিম : মেয়রপ্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে ধারণা পালটে যাবে। স্থানীয় সংসদ-সদস্যের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার এবং আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমি এসব হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। সাধারণ মানুষ এসব হুমকির জবাব ব্যালটে দেবেন। তিনি বলেন, ছাত্রনেতা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছি। ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছি। রাজনীতি করেছি বিত্তশালী হওয়ার জন্য নয়। আমার কাছে রাজনীতি মানে মানুষের জন্য কাজ করা। দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে অনেকেই চোখের সামনে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আমি তা করিনি। তাই নগরবাসী আমাকে পছন্দ করে।
নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধার আশঙ্কা প্রকাশ করে হাতি মার্কার এ প্রার্থী বলেন, কারা আমাদের এই প্রাণের শহরকে আতঙ্কের শহরে পরিণত করেছে, তা সবাই জানে।
তানিম বলেন, নির্বাচিত হলে আমি কুমিল্লাকে ভয়ের শহর থেকে ভালোবাসার শহরে পরিণত করব। নাগরিকদের পেশিশক্তির কবল থেকে মুক্ত করব। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও লুটেরাদের হাত থেকে নগরীকে মুক্ত করব। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ চাই।