Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সহায়ক পরিবেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে: শামিমা আক্তার

Icon

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সহায়ক পরিবেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে: শামিমা আক্তার

শামিমা আক্তার

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নারী সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে জানিয়েছেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) শামিমা আক্তার।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ কথা জানান।

শামিমা আক্তার বলেন, ব্যাংক, করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সেখানে নারী সহায়ক কর্মপরিবেশ না থাকায় অনেকে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশে গত দেড় দশকে রাজনীতি, সরকারি-বেসরকারি চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আইনেও নারীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও এখনো সব ক্ষেত্রে নারীসহায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় নারী পিছিয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, মাতৃত্বজনিত বিরতির সময়টা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা হয়তো যথাযথভাবে পেলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারীরা কতটা পাচ্ছেন; সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। কোনো নারী মাতৃত্বজনিত বিরতিতে গেলে অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি চলে যায়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়নে পিছিয়ে পড়ছে। মাতৃত্বজনিত বিরতিকে পুরুষ কর্মীরা ছুটি মনে করেন। এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কর্মক্ষেত্রের এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাজ করার একটি পর্যায়ে সেই কাজ ছেড়ে দেন। ২০০৯ সালে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করেন আগের তিন ভাগের একভাগ বেতনে। কেননা, ওই সেক্টরে তার অভিজ্ঞতা কম ছিল। সেই থেকে পথচলা শুরু; চলতি পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে তাকে এগোতে হয়েছে। যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে প্রতিটি ধাপ তাকে এগোতে হয়েছে। চলার পথে কোথাও ভালো কর্মপরিবেশ পেয়েছেন, আবার কোথাও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে চ্যালেঞ্জ নেওয়া পছন্দ বলেই বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অবিচল থেকেছেন নিজের লক্ষ্যে।

কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, তার কর্মজীবনের শুরুর সময়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারীকর্মীর সংখ্যা খুবই কম ছিল। আর নেতৃত্বে নারী কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। ওই সময়ে অফিসগুলোয় নারীদের ওয়াশরুম কম ছিল। বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার ছিল না।

পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রের কাজের সমন্বয়ের বিষয়ে বলেন, পরিবারকে খুবই সহায়ক হতে হবে। একজন নারীর জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় যেমন, একজন পুরুষের জন্যও তেমন। এ কারণে একজন নারীকে পূর্ণাঙ্গ মা, স্ত্রী বা কর্মী হওয়া সম্ভব নয়। কাজ তো নারী ও পুরুষকে সমানভাবেই করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মাকে তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। তিনি তার পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে সহায়ক হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাশাপাশি অফিসে শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে সেখানে বাচ্চারা খেলবে। কখনো তার মায়ের কাছে যেতে চাইলে দেখা করে আবার সেখানে থাকবে। এমন পরিবেশ তৈরি হলে নারী কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারবে। পরিবার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। একটি পরিবারের দুজন চাকরি করলে ওই পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হয়ে যায়।

কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের ঝরেপড়া রোধে কী করা দরকার-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি যুগান্তরকে বলেন, নারী কর্মক্ষেত্রে অনেক ঢুকছে। সহায়ক কর্মপরিবেশ না থাকায় টিকতে না পেয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কী কী সমস্যা তারা মোকাবিলা করছে, সেসব নিয়ে গবেষণা হতে হবে। তার আলোকে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। একজন নারী যদি পূর্ণসময় কাজ করতে না পারে, তাকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদে অর্ধেক বেতনে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, এখনকার অনেক নারী লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে যোগদান করে বিয়ে করেন। কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে অনেকে দেরিতে বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমন অনেক নারী স্বাস্থ্যগত জটিলতায় পড়ছেন। এমন অবস্থার উন্নতি হতে অনেকের ১ থেকে দেড় বছরও লেগে যায়। সব কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব না হওয়ায় এসব ক্ষেত্রে ওই নারীরা সুবিধা পান না। তখন তারা চাকরি ছেড়ে দেন।

তিনি জানান, ইউনিলিভার বাংলাদেশের অফিসে ৩০ ভাগ সিট কম রাখা আছে। কেননা, সবাইকে সবদিন অফিস করা বাধ্যতামূলক নয়। সবক্ষেত্রে ‘হোম অফিস’ সিস্টেম চালু করলে তা নারীর জন্য খুবই ইতিবাচক হবে। সরকারকে সবদিক বিবেচনা করে নারীর জন্য নীতি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তাহলে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসন করা সম্ভব হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে শামিমা আক্তার জানান, বাংলাদেশের নারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এটা ভালো দিক। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারী নারীর জন্য সহায়ক হচ্ছে না। সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে তাদের ওপরও ভর করছে। নারী নারীকে সহযোগিতা না করলে তাদের সামনের পথচলা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নারীকে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।

সমাজে নারীর নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিলিভারের এই পরিচালক জানান, তার শৈশবে বাইরে সাইকেল চালিয়ে বেড়িয়েছেন। ফুটবল খেলেছেন। আপনজন, শিক্ষকদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে গেছেন। তখনকার মা-বাবারা কাউকে অনিরাপদ ভাবতেন না। তবে এখন মেয়ে শিশু ও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়। স্কুলশিক্ষককেও নিরাপদ ভাবা যাচ্ছে না। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধের ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সমাজের এ বিষয়গুলোর উন্নতির চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, একজন নারী বাসে চলবে, সেখানে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিছুলোক প্রতিবাদ করলেও অনেকে চুপ থাকেন। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ ভাগ নারী। তবুও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমাজে বিশেষ পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। সমাজ ও দেশের উন্নতি চাইলে নারীকে সামনে এগিয়ে দিতে হবে। নারীকে পিছিয়ে রেখে সমাজের উন্নতি হয় না।

নারীদের উদ্দেশে বলেন, নারীকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। কারও বিশেষ সহযোগিতা নিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না। নারী নিজেকে কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করে দক্ষ করে গড়ে তুলবে। পাশাপাশি পরিবার ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে ডুবে থাকলেও চলবে না। নিজের জন্যও সময় রাখতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য খরচ করতে হবে। তখন শরীরচর্চা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ব্যয় করতে হবে।

তিনি বলেন, এত ব্যস্ততার মাঝেও আমি সাইক্লিং করি। বছরে ছুটি করে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণ করি। পাহাড়ে গিয়ে সাইকেল চালাই। নিজেকে সুস্থ না রাখলে বড় চাপ নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয় না। এসব বিষয়ও মাথায় রেখে চলতে হবে। তাহলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখে কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করে পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, ইউনিলিভার বিশ্বব্যাপী ২০২৫ সালে নারী নেতৃত্বে সমতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পদের নেতৃত্ব দিতে হলে নারীকে যোগ্য ও সুস্থ হতে হবে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের নেতৃত্বে ৪০ ভাগ নারী রয়েছে। এটাকে ৫০ ভাগে উন্নতির লক্ষ্যে কাজ চলছে। সবশেষ আবারও বলব, শুধু নারী দিবস নয়, নারীর সফলতার গল্পগুলো গণমাধ্যমে বছরজুড়ে প্রচার করতে হবে। তাহলে অন্য নারী সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পাবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম