পুকুরের পানি সেচের কাজ নিয়ে মাছ চুরি
গণপূর্তের ঠিকাদার ও তিন প্রকৌশলী মাছ ভাগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর এলেনবাড়ী গণপূর্ত অধিদপ্তরের পুকুরের মাছ চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন একজন ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারকে পুকুরের পানি সেচের কাজ দেওয়া হয়। তিনি পানি সেচে পুকুর থেকে প্রায় ৫ মন মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। রাতের আঁধারে নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও তারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠলেও ইতোমধ্যে তাকে সব বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ ওই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিলেও গত দুই সপ্তাহে থানায় মামলা হয়নি। উপরন্তু ঠিকাদারকে বাঁচাতে লড়ছেন এলেনবাড়ী গণপূর্তের সম্পদ বিভাগের তিন প্রকৌশলী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বিজয় সরণি সংলগ্ন এলেনবাড়ীতে গণপূর্তের প্রশিক্ষণ একাডেমি, ল্যাবরেটরি, কোয়ার্টার, সম্পদ বিভাগের কার্যালয় রয়েছে। ওই ক্যাম্পাসে একটি বড় পুকুর রয়েছে। ওই পুকুরে নানা প্রজাতির মাছ ছিল। সরকারি পুকুর হওয়ায় এবং মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় কেউ ওই মাছ ধরত না। ফলে মাছগুলো বিশালাকৃতির হয়। সম্প্রতি ওই পুকুরের পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হলে কর্তৃপক্ষ পানি সেচ করতে চৌধুরী কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। তার দায়িত্ব পানি সেচ করবে তবে মাছগুলো যাতে মরে না যায়, সেই পরিমাণ পানি পুকুরে রাখবে। তবে তিনি শর্ত ভেঙে পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। রাতের বেলায় তারা আনুমানিক ৫ মন মাছ ধরে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই মাছের ভাগ নিয়েছেন তিন প্রকৌশলী। তার হলেন-এলেনবাড়ী গণপূর্তের সম্পদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন খান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তৌহিদ হাসান ওহী, উপসহকারী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ইসহাক।
সূত্র জানায়, মাছ চুরির ঘটনা ঘটেছে চলতি মাসের শুরুতে। এখানকার কর্মকর্তারা এ ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানালে তারা মামলা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ গড়ালেও এখনো থানায় মামলা হয়নি। উল্লিখিত তিন প্রকৌশলী মামলা করতে রাজি হচ্ছেন না।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্পদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, মাছ চুরির ঘটনার পর আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা ঠিকাদারসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন। এরপর তেজগাঁও থানায় কথা বলেছি। আমরা মামলা করব। ঠিকাদারকে ডেকেছি। তার সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেব।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তৌহিদ হাসান ওহী যুগান্তরকে বলেন, মাছ চুরি হয়েছে, এটা সত্য। তবে ঠিকাদার করেছে বলে এখনো প্রমাণিত না। এসব নিয়ে সংবাদ না করলে হয় না? কে আপনাকে এই সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে, জানাবেন।
উপসহকারী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ইসহাক যুগান্তরকে বলেন, ঠিকাদার মাছ চুরি করেছে বলে আমরা জানি না। অভিযোগ উঠেছে।
চৌধুরী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আসিফ ইকবাল যুগান্তরকে বলেন, আমি পানি সেচ করে চলে এসেছি। কে বা কারা মাছ ধরেছে জানি না।