মহান ভাষার মাস
ছাত্রদের চলছিল মিটিং আর মিটিং
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে সক্রিয় ছিল ছাত্রসমাজ। ছাত্রাবাসসহ নানা জায়গায় চলছিল মিটিং। চারদিকে টানটান উত্তেজনা। একুশের কর্মসূচি কীভাবে সফল করা যায়, তা নিয়েই ছিল আলোচনার পর আলোচনা।
‘একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক লিখেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে এগিয়ে চলছিল দিনগুলো। গতানুগতিক ছন্দে টিকটিক করে সময় ক্রান্তিক্ষণের লক্ষ্যমুখী। ঘড়ির কাঁটার শব্দ যেন ঘণ্টা বাজার মতো নিঃশব্দ আলোড়ন তুলে এগিয়ে চলছে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারিতে পৌঁছে আপাত শান্ত ধীরস্থিরতার মধ্যেই ছাত্রাবাসগুলোর রাজনীতি-সক্রিয় অংশে ভেতরে ভেতরে টানটান উত্তেজনা একুশের সম্ভাবনা নিয়ে। ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তাই ছাত্রাবাসগুলোয় দেখা গেছে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ছাত্রদের ছোট ছোট জটলা। যেমন ফজলুল হক হল, ঢাকা হল, তেমনই মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে। বাদ নেই সলিমুল্লাহ হলও। রাজনীতিমনস্ক জগন্নাথ কলেজেও সম্ভবত একই ঘটনার প্রকাশ। নানা সূত্রে এমন সত্য উঠে এসেছে। এমনই ছিল ১৯-এ ফেব্রুয়ারির দিনটি। জানা ছিল না পরদিন কী ঘটতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের পরিবেশ চিত্রটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আঁকা। কলেজ ইউনিয়নের ভিপি গোলাম মাওলার কক্ষে সেদিন জটলা ছিল বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মীর। মাওলা সাহেবের বয়স (এমএসসি পাশ করে এসে মেডিকেল কলেজে ভর্তি), নম্র স্বভাব ও দলনিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে তিনি সবার ‘মওলা ভাই’। তাই তার রুমে প্রায়ই রাজনৈতিক আড্ডা বসে, যদিও তিনি তখন রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তবে কিছুদিন আগে কলেজ ইউনিয়ন নির্বাচনে ভিপি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় কারণে-অকারণে তার রুমে আড্ডা।
এখন ভাষার দাবি নিয়ে অস্থিরতা। তাই বৈঠকি আড্ডা প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়, যেমন দেখা গেছে ঢাকা হলের সামনে ছোট প্রাঙ্গণে, সেখানকার ছাত্রবন্ধুদের আলোচনায় নিবিষ্ট হতে।
মাঝেমধ্যে ফজলুল হক ইউনিয়নের জিএস আনোয়ারুল হক খানের কক্ষে কয়েক জনের বৈঠকি আড্ডা অথবা পুকুরঘাটের সিঁড়িতে বসে উত্তপ্ত আলোচনা চলে।
সেখানে প্রায়শই দেখা গেছে আনোয়ার, গাজীউল, আতিক, মশারফ, মুকুল, মৃণাল প্রমুখ ছাত্রদের। কখনো সেই সঙ্গে কমরুদ্দীন শহুদ বা জিল্লুর রহমানদের।
অনুরূপভাবে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে এ সময়ে সক্রিয়দের মধ্যে রয়েছে আলী আজমল, মঞ্জুর হোসেন, নওয়াব হোসেন, কাদির খান, শাহপ্রধান, জাহেদ, আলীম চৌধুরী, মুর্শেদ বা সালামের মতো রাজনীতিতে সক্রিয় ছাত্ররা। অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবির, আলমগীর, মাহমুদ, মানাফ প্রমুখ। বাদ যায় না ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামে পরিচিত কলেজ ইউনিয়নের তৎকালীন জিএস শরফুদ্দিন আহমদ।