১২ মামলায় জামিন
এক দিনেই রাষ্ট্রদ্রোহী থেকে দেশপ্রেমী ইমরান
১০০ আসনে জয় পেয়েছে পিটিআই, পিএমএল-এন ৭৩, পিপিপি ৫৪, অন্যান্য দল ২৮; ফল পাওয়া যায়নি ১০ আসনের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজনীতির মাঠেও ক্রিকেটের ২২ গজের ‘ক্যারিশমা’! সেনাবাধা আর বিরোধীদের চক্রান্তের মধ্যেও একের পর এক চমক দেখাচ্ছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের বিশ্বজয়ের ‘কাপ্তান’। ভূমিধস জয়ের পরপরই সেনাবাহিনীর চাপানো ১২ রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা থেকে এক দিনেই খালাস!
দেশদ্রোহী তকমা ঘুচিয়ে এক দিনেই হয়ে গেলেন দেশপ্রেমী! ঠিক যেন সেই বিশ্বকাপ (১৯৯২ সাল) জয়ের ক্যারিশমা। আঙুলের কলকাঠিতে নয়, গণজোয়ারের জাদুতে। জনপ্রেমের জোরে। ভোট কারচুপির পাহাড় ভেঙে ‘ঐতিহাসিক’ বিজয়ের ‘পুরস্কার’স্বরূপ শনিবার ‘৯ মে দাঙ্গা’র ১২ রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা থেকে তাকে মুক্তি দেন রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের (এটিসি) বিচারক মালিক ইজাজ আসিফ।
অর্থাৎ গণমানুষের প্রাণভোমরা ইমরান খান এখন আর রাষ্ট্রদ্রোহী নন-দেশপ্রেমী। রায়ে আদালত আরও বলেছেন, ‘খানকে আটকে রাখার বৈধ কোনো কারণ নেই।’ তবে কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় খানকে কারাগারে থাকতে হবে। এনডিটিভি, দ্য ইকোনমিক টাইমস।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে এদিনই দেশবাসীকে তার সেঞ্চুরির খবর দেয় পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। প্রিয় প্রতীক ‘ব্যাট’ ছাড়াই ১০০ আসন পেয়েছেন তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
গণরায়ের সেই ছাপই পড়েছে আদালতের রায়ে। পুরো পাকিস্তানেই এখন তার নাম। শত্রু-বন্ধু সবার মুখেই তার নাম। চায়ের আসর থেকে শরাবখানা-সবখানেই তিনি। নির্বাচনের দুদিন পরও পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশে ধীরগতির সমালোচনার মধ্যেই প্রিয় নেতার এ খুশির খবরে হুল্লোড় পড়ে গেছে পুরো পাকিস্তানে। এএফপি।
শনিবার রাত ৯টা (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে আরও খানিকটা এগিয়ে গেছেন তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আলজাজিরার দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ঘোষিত ২৬৫ আসনের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি ১০০ আসনে জয় পেয়েছেন পিটিআই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সে হিসাবে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি ইমরান খানের হাতেই উঠছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর চাবি। অর্থাৎ তিনিই ঠিক করবেন কে হবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিনের বিবৃতিতে সে কথাই বলেছে পিটিআই। তাদের দাবি, ১৭০টিরও বেশি আসন পাচ্ছে পিটিআই।
এদিনের সর্বশেষ পাওয়া পরিসংখ্যানে ৭৩টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। তৃতীয় স্থানে থাকা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ২৮টি আসন। ১০টি আসনের ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি।
পূর্ণ ফল প্রকাশের এ বিলম্ব নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে দেশটিতে। এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই বলেছে, ফলাফল প্রকাশে আরও বিলম্ব হলে রোববার বিক্ষোভ করবে পিটিআই। শুধু বিরোধী দলগুলোই নয়, পাকিস্তানের নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ), যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেশটির নির্বাচন কমিশনের বিলম্ব এবং সরকার গঠনের অনিশ্চয়তার মধ্যে কথিত অনিয়মের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। শুক্রবার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানের নির্বাচন ঘিরে উঠে আসা অভিযোগগুলোর সঠিক তদন্ত করা দরকার।
এদিকে পূর্ণ ফল প্রকাশের আগেই শনিবার বিজয় ভাষণ দিয়েছেন খান। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে খানের ভয়েজ ব্যবহার করে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষণে নওয়াজ শরিফের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর লন্ডন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দেওয়ায় ভোটারদের ধন্যবাদও জানান তিনি।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের কোনো জনগণ এটা মেনে নেবে না। ‘আমরা ৪৫টি তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৭০টির বেশি আসনে জয়ের পথে আছি।’ ‘আমরা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেছি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।