বহিষ্কৃত আ.লীগ নেতাসহ ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড
সুবর্ণচরে ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় দলবদ্ধ ধর্ষণ
নোয়াখালী ও বেগমগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে প্রধান আসামি রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ায়’ সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারের নেতৃত্বে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অপর আসামিরা হলেন-মো. সোহেল, মোহাম্মদ স্বপন, ইব্রাহিম খলিল বেচু, বাদশা আলম ওরফে কুরা ইল্লা বাসু, আবুল হোসেন, মো. সালাহ উদ্দিন, জসিমউদদীন, হাসান আলী বুলু ও মো. মুরাদ। তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আসামি মো. হানিফ, চৌধুরী মিয়া, মোশাররফ হোসেন, মো. মুরাদ, মিন্টু ওরফে হেলাল ও মো. সোহেলকে (২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই আসামিদের কড়া পুলিশ পাহারায় নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বেলা ১১টায় এজলাসে উঠেই রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ৪৭ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শেষ দিকে বিচারক উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলা প্রমাণ করতে সন্দেহাতীতভাবে সার্থক হয়েছে। মামলার আসামিরা মুক্ত হলে বিচারক ও বিচারব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেবে। তাই এ আসামিরা বিচারকের ক্ষমা বা অনুকম্পা পাওয়ার যোগ্য নয়।
রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় আদালত এলাকায়। সকাল ১০টায় নোয়াখালী জেলা কারাগার থেকে আসামিদের (পলাতক মিন্টু ওরফে হেলাল ছাড়া) জেলা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। তখন হাজত প্রাঙ্গণে আসামিদের স্বজনদের ভিড় ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে মারধর ও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছিল। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের মা। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনার পরদিন নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার বাদী নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী জানান, রায়কে ঘিরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে দিন কাটিয়েছেন। কারণ আসামিরা অনেক প্রভাবশালী। সোমবার রায় ঘোষণার সময় ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী নারী রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানাই। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী হারুনর রশীদ হাওলাদার বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছালেহ আহমদ সোহেল খান বলেন, মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল পলাতক।
এদিকে রায় ঘোষণার পরপরই সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আত্মীয়স্বজনরা শহরে ‘এ বিচার মানি না’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা সড়ক ডিভাইডারের গাছ ভাঙচুর করেছে।