ঘরে ঘরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৩৭২১ জন
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে পৌষের শেষ এবং মাঘের শুরুতে প্রকৃতিতে জেঁকে বসছে শীতের তীব্রতা। সেই সঙ্গে ঘরে ঘরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। প্রতিটি হাসপাতালের বহিঃ, জরুরি ও অন্তঃবিভাগে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে দেশের অন্তত ২০টি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এর সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সারা দেশেই হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা পড়ছে। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকায় সহজে তারা ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হয়ে পড়ছে। অনেকের শারীরিক পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। রাজধানীর ঢাকা ছাড়াও জেলা-উপজেলার একাধিক চিকিৎসক-নার্স, রোগী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীতে সোমবার সকাল থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলে সেটিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এদিকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) প্রতিদিন ব্যাপক শিশু আসছে। একইভাবে স্যার সলিমুল্লাহ, কুর্মিটোলা জেনারেল, মুগাদা মেডিকেল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীদের ভিড় দেখা যায়। সেখানে চিকিৎসকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, কেবল ২৩ জানুয়ারি সারা দেশে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ডায়রিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৭২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৮১২ জন, ময়মনসিংহে ৩০৬ জন, চট্টগ্রামে ৮২৬ জন, রাজশাহীতে ৩৮৮ জন, রংপুরে ৪৪১ জন, খুলনায় ৫০৯ জন, বরিশালে ১৮৪ জন এবং সিলেটে ২৫৫ জন ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানান, শীত ঋতুতে শিশু ও বয়স্করা শীতকালীন ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। যেমন-সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। তাই শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডাজনিত মৌসুমি রোগব্যাধি বাড়ে। তবে ১০ দিন ধরে হাসপাতালের বহিঃ ও জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। রোগীর অভিভাবকরা বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, শাসকষ্টের কথা বলছে। কিছু কিছু রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় পিআইসিইউতে রাখা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ যুগান্তরকে বলেন, অন্যান্য হাসপাতালের মতো ঢামেকে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ঢামেকের বহিঃ ও জরুরি বিভাগে আসা শিশুদের বেশিরভাগই অভিভাবক সন্তানের জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং কোল্ড ডায়রিয়ার সমস্যার কথা বলছেন। অনেককে অবজারভেশনে রাখা হচ্ছে। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের পরিস্থিতি বুঝে ভর্তি এবং বহিঃবিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।
ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের ঘন ঘন স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি এর বেশি বয়সিদের বুকের দুধ ছাড়াও মৌসুমি সবজি, ফল খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। ঠান্ডা-কাশি হলেই ফার্মেসি থেকে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।
একাধিক বিশেষজ্ঞ যুগান্তরকে বলেন, বয়স্ক ও শিশুদের শীতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। শিশুদের শীতের পোশাক পরিধান করাতে হবে। সামান্য অবহেলার কারণে শিশুদের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে অনেকে শীতের জন্য গোসল করে না। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। এসব কারণে এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়।
এ ঋতুতে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শীতের কাপড় পরতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে। বাড়ির বাইরে শিশুদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা যাবে না। এছাড়া শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে যাওয়া, জ্বর, শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ, বমি, নিউমোনিয়ার এসব লক্ষণের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।