বিসিবির দায়িত্ব ছাড়তে চান নাজমুল হাসান
ক্রিকেট ছাড়াও অন্য সব খেলায় কীভাবে উন্নতি করা যায় সেই চ্যালেঞ্জ নিতেও প্রস্তুত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি তিনি। নাজমুল হাসান এবার হলেন দেশের নতুন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী। খেলাধুলা সম্পর্কে ধারণা থাকলেও কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে টানা চতুর্থবার জাতীয় সংসদ-সদস্য হওয়া নাজমুল মনে করছেন যুব বিষয়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে তার জন্য। এই বিভাগে উন্নতির অনেক জায়গায় দেখছেন তিনি। ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ নাজমুলের যুব সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ধারণা কম। ক্রিকেট ছাড়াও অন্য সব খেলায় কীভাবে উন্নতি করা যায় সেই চ্যালেঞ্জ নিতেও প্রস্তুত নাজমুল। একই সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালনে আইনি কোনো সমস্যা না থাকলেও ভিন্ন চিন্তা করছেন তিনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পূর্ণ মন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং, যে কোনো মন্ত্রণালয়ই চ্যালেঞ্জিং। এতদিন ক্রীড়ার সঙ্গেই ছিলাম, তবে শুধু ক্রিকেট নিয়ে। এখন তো শুধু ক্রিকেট নয়, সবগুলো খেলাধুলা এবং তার সঙ্গে আবার যুব।’ তিনি বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয়, একটা যুব আরেকটা ক্রীড়া। বিসিবি সব সময় স্বাধীনভাবে চলছে, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পৃক্ততা বা যোগাযোগ অন্য ফেডারেশনের মতো নেই। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বলা যায় তেমন কোনো প্রভাব নেই। ক্রিকেট বোর্ডে এতদিন ধরে আছি, বোঝা যায় যে দায়িত্ব কী সেটুকু জানি। যুব নিয়ে কিছু জানি না। যুবটা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট। এটা একটা বিরাট ব্যাপার আমাদের দেশে। বিশেষ করে এখনকার পরিস্থিতিতে এদিকটা নজর দেওয়া উচিত। ক্রীড়ায় অনেক ধরনের স্পোর্টস আছে। সবার সঙ্গে কথা না বলে সব সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়।’ ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে অন্য ফেডারেশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাজমুল বলেন, ‘অনেকগুলো ফেডারেশন আছে যাদের ভালো অবস্থা আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো। প্রথমে আমার সবার সঙ্গে বসতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতি কী সেটা জানতে হবে। তাদের কী রিসোর্স আছে জানতে হবে, সবাই চাইলেই তো হবে না। প্রত্যেক ফেডারেশন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং ক্লাবগুলোর সঙ্গে বসা দরকার। তৃণমূল থেকে যদি তথ্যগুলো পাওয়া যায়- কী দরকার, তারপর আমাদের কতটুকু সামর্থ্য আছে সেগুলো দেখতে হবে। একসঙ্গে সবকিছু ঠিক করা যাবে না। আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পাঁচটিতে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর আগামী তিন বছরের মধ্যে কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে হবে।’
এদিকে অনেকেরই ধারণা মন্ত্রী হওয়ার পরও নাজমুলের বেশি মনোযোগ থাকবে ক্রিকেটের দিকে। নাজমুলও এটি অস্বীকার করছেন না। তিনি বলেন, ‘কতগুলো স্পোর্টস আছে যেখানে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে ভালো করা সম্ভব। অনেকে ভালো করছেও, যেমন আর্চারি, শুটিং। হকিতে আমাদের বিশ্বকাপ খেলা উচিত। আমরা যদি যথাযথ নজর দিতে পারি হকিকে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব। ফুটবলে তো এখন ভালো খেলছে। বিশেষ করে মেয়েরা। আমাদের অনেক অপশন আছে, অনেক প্রতিভা আছে। এখন সমস্যাটা কী সেটা আগে জানতে হবে। এখন সব সময় মিডিয়ার মাধ্যমে যেটা শুনি, তাতে মনে হয় সমস্যা আর্থিক। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, শুধুই এটাই একমাত্র কারণ হতে পারে না। ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশে স্পন্সরের অভাব নেই। খেলাধুলায় স্পন্সর করার মতো লোক আছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এদিকে আগের দিনই নাজমুল জানিয়েছেন, একসঙ্গে দুটি দায়িত্ব পালন করতে তার কোনো আইনি সমস্যা নেই। তবু বিসিবিতে নতুন কোনো বোর্ড সভাপতি আসছে কিনা এটা জানতে চারদিকে আলোচনা চলছে। নাজমুল বলেন, ‘দুই দায়িত্বে থাকায় আইনে কোনো সমস্যা নেই। একসঙ্গে যদি দুটিতে থাকি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে, ক্রিকেটের প্রতি আমার দৃষ্টিটা একটু বেশি থাকবে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদিও আমি বলে রাখি, আমি যদি এই ক্রিকেট বোর্ড, মন্ত্রণালয়ে নাও থাকি, তবু ক্রিকেট সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে। মন থেকে তো আর সরানো যায় না।’ মাশরাফি মুর্তজার সভাপতি হওয়ার যে যে গুঞ্জন উঠেছে বাস্তবে তার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘মাশরাফি সভাপতি হচ্ছে কিনা এটা বলা মুশকিল। এখানে একটা প্রক্রিয়া আছে। প্রথমে তাকে কাউন্সিলরশিপ নিতে হবে। এরপর নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। নির্বাচিত হয়ে যারা আসবে, তারাই ঠিক করবেন কে সভাপতি হবে। প্রক্রিয়াটা এমনই। বোর্ডে দু-একজন নতুন এলেও যারা পরিচালক আছেন তারা কাকে বেছে নেবেন সেটা বলা কঠিন। এখানে কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’