এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন
দমন-পীড়নে ক্ষুণ্ন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার তাদের ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে আস্থা না থাকায় প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে।
৭৪৪ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৪-এর ৩৪তম সংস্করণে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রায় ১০০টি দেশে মানবাধিকার অনুশীলনের পর্যালোচনা করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনে বলেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ার বিষয়ে আস্থা না থাকায় প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আট হাজারের বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। উদ্দেশ্য ছিল তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন আর বিরোধী নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করা যায়। অনেকেই ‘নিখোঁজ’ বলে দাবি করা হয়েছিল, যখন পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ও শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির করার আগে তাদের কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়।
বাংলাদেশি মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০টির বেশি গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসার পর গুমের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উচিত তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখার শর্ত হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়নের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য জোর দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহির অভাব একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতিকে উসকে দিচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, এমনকি ঘুস দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে থাকেন বাংলাদেশিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের শিকার হয়ে আসছেন। নির্বাচনের আগে হওয়া বিক্ষোভে সহিংসতায় কয়েক ডজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনে রদ হওয়া আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক বিষয় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন ও সরকার সমালোচকদের শায়েস্তা করতে এই আইন ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন ও সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের সংগঠন এবং সম্মিলিত দরকষাকষির স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনো শ্রম আইন সংশোধন করতে পারেনি।
ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত নভেম্বরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৭৫ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১১৩ করে সরকার। বিক্ষোভকারীরা ২০৮ মার্কিন ডলার বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল, যা এখনো বাংলাদেশের বাসযোগ্য মজুরির চেয়ে অনেক কম।
রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে। শরণার্থীরা শিক্ষা, জীবিকা এবং চলাচলের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা দোকান মালিকদের হয়রানি ও উচ্ছেদসহ তাদের দোকান ধ্বংস করা আবার শুরু করেছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরিত করেছে।
সেখানে তারা খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি, বন্যা, পানিবাহিত রোগ, ডুবে যাওয়া এবং সাইক্লোন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আহত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকারের ঘটনা’ শীর্ষক একটি জরুরি রেজুলেশন পাশ করে অধিকারের নেতাদের মুক্তি এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের নিন্দা জানায়। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় অধিকারের নেতারাসহ মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।