Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আগামী বছর অর্থনৈতিক সংকট কাটতে শুরু করবে

নতুন সরকারের ১১ চ্যালেঞ্জ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন সরকারের ১১ চ্যালেঞ্জ

বৈশ্বিক ও দেশীয় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিকে চলতি বছরে কমপক্ষে ১১ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে নতুন সরকারকে। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ডলার সংকট মোকাবিলা। এ সংকট থেকেই অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর উদ্ভব হবে। এর মধ্যে রয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করা, মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করা। 

এছাড়া ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্প খাতের সংকট হবে আরও প্রকট, চড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও কমবে ও বাড়বে ঋণের সুদ হার, বাধাগ্রস্ত হবে বিনিয়োগ ও কমবে নতুন কর্মসংস্থানের গতি, অর্থনৈতিক মন্দায় রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের ভঙ্গুরতা দূর করে সবল করা ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

উল্লিখিত প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে চলতি বছরে সরকারকে সামনে এগোতে হবে। এর সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক খাতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে নব গঠিত সরকারকে। একই সঙ্গে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়াটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা হচ্ছে, আগামী ২০২৫ সাল থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য সংকটও কাটতে শুরু করবে। 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন কেন্দ করে বাংলাদেশের মিত্র দেশগুলো ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। 
দেশগুলো এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বলে মন্তব্য করেছে। তবে তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান থেকে বাংলাদেশ বেশি আমদানির মাধ্যমে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে। এসব দেশ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

এই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভূ-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় রূপ নিতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোতে রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। একটি হলো চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানো, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। 

অপরটি হলো নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকবে। তবে কে কোন ধরনের চাপ দিতে পারে সেটি প্রকাশ না করা পর্যন্ত অর্থনীতিতে এক ধরনের অদৃশ্য চাপ থাকবে। দৃশ্যমান চাপের চেয়ে অদৃশ্যমান চাপ মোকাবিলা করা কঠিন। কারণ দৃশ্যমান চাপ সহজে বোঝা যায়। সেই চাপ অনুযায়ী মোকাবিলার পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কিন্তু অদৃশ্যমান চাপের কারণে কোনো পদক্ষেপ যেমন নেওয়া যায় না, তেমনি মাসনিক চাপ বাড়ে। এতে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।

তবে সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারক প্রকাশ্যেই বলছেন, বাংলাদেশে কোনো বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ব্যবসা করছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, রেমিট্যান্স আহরণে আগে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে ছিল। এখন নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৪১ শতাংশ। একক দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমেছে ৪ শতাংশ। 
যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি কমেছে ওই দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে। বিনিয়োগ কমেছে বৈশ্বিক মন্দায়। বাংলাদেশের আমদানি কমেছে ডলার সংকটে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে ভূরাজনৈতিক এবং ভূঅর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, চলতি বছরেও দেশের অর্থনীতিতে ডলার সংকট চলমান থাকবে। এর প্রভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হবে। ফলে আমদানি খরচ বাড়বে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে অন্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে। 

এতে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়বে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে টাকার প্রবাহে লাগাম টানতে হবে, বাড়াবে সুদ হার। এতে ব্যবসা খরচ বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের দামও বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সঙ্কুচিত হবে। এর প্রভাবে নতুন কর্মসংস্থান কমবে।

তিনি আরও বলেন, ভূরাজনৈতিক ও ভূঅর্থনৈতিক বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা না করাই ভালো। এটি পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এখন মনে হচ্ছে বড় ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। সরকারকে বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তার আরও অভিমত-মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম কারণ বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনতা। অযৌক্তিক কারণে পণ্যের দাম বাড়া। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত সিন্ডিকেটের মধ্যে মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয় নামমাত্র। কিন্তু বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। 

তবে ব্যাংক খাত নিয়ে তিনি চলতি বছরে কোনো আশার বাণী দেখছেন না। কারণ এ খাতে সুশাসন নেই। খেলাপি ঋণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। তারল্য সংকটও বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। 

সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে আমদানি কমেছে। গত অর্থবছরে কমেছে ১৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই নভেম্বরে কমেছে ২১ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামালের আমদানিও কমেছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে ২৪ শতাংশ। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি উপকরণের আমদানিও কম। 

ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল পাচ্ছে না। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের সংকটও রয়েছে। এতে শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে চলতি বছরেও ডলার সংকট থাকবে। ফলে আমদানি ব্যয় আরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফলে চলতি বছরেও শিল্প খাতের সংকট কাটবে না। ডলার সংকট, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, শিল্প উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ এ বছরও মোকাবিলা করতে হবে।

আইএমএফের শর্তে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার এখন বাজারের ওপর ছাড়তে হবে। এতে টাকার মান কমবে, বাড়বে ডলারের দাম। এতে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। চাপ বাড়বে মূল্যস্ফীতিতে। সংস্থাটি আরও বলেছে, রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করতে হবে। রিজার্ভ বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না। 

আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কমছে। এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের তুলনায় রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে আয় বাড়ছে না। ফলে রিজার্ভে কিছু ডলার যোগ হলেও গড়ে তা বাড়ছে না। উলটো ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে রিজার্ভের ক্ষয় হচ্ছে। ওই সময়ে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ চার হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে দুই হাজার ৫৪৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। নিট রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি।

বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ডলার সংকটে চলতি বছরেও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের কারণে টাকার প্রবাহ কমবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সঙ্কুচিত হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে। বাড়বে মূল্যস্ফীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও থাকবে নিম্নমুখী।

সূত্র জানায়, চলতি বছরে ডলারের দাম বেড়ে টাকার অবমূল্যায়ন হবে। একই সঙ্গে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়নজনিত পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির হারে চাপ বাড়বে। গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হার ছিল প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটের উপরে। এ হার কিছুটা কমবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু তা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ শতাংশে নামানো কঠিন চ্যালেঞ্জ।

চড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমছে, এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে গেছে। ঋণের সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়বে। 
ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বাড়বে। ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দার কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এতে শিল্পের বিকাশ কম হচ্ছে। কর্মসংস্থানের গতি কমে গেছে। ফলে মানুষের আয়ও কমবে। অন্যদিকে চলতি বছরে কিছু পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, চিনি ও জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে ডলারের দাম ও সুদ হার বাড়ার কারণে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতি উসকে যেতে পারে। কারণ সামনে আছে রমজান। ওই সময়ে পণ্যমূল্য বাড়াটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চলতি বছরে অর্থনীতিতে বড় সংস্কার আনতে হবে। এগুলো আনা হলে সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে স্বস্তির জাগয়াটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ডলারের দাম বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে ডলারের দাম বেড়ে রেমিট্যান্স বাড়াবে। রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। তা না হলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি কমবে না।

তিনি আরও বলেন, ভূরাজনৈতিক কারণে অর্থনীতিতে কিছু শঙ্কা আছে। এসব শঙ্কা মোকাবিলা করার জন্য সংস্কার চলমান রাখতে হবে। বিশেষ করে শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে। তাহলে ভূরাজনৈতিক চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।

সূত্র জানায়, সরকারের গৃহীত নীতির কারণে চলতি বছরেও ব্যবসায়িক মন্দা থাকবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে। ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের জোগান কম হবে। রাজস্ব আয় কমায় সরকারের চলতি ব্যয় নির্বাহ ও উন্নয়ন কাজে অর্থের জোগান দিতে ব্যাংকনির্ভরতা বাড়ছে। এতে ব্যাংকে তারল্য সংকটও দেখা দিচ্ছে। ফলে বেসরকারি খাত ঋণ পাচ্ছে কম। এ খাতে ঋণের প্রবাহও কমে যাচ্ছে। এদিকে মন্দায় উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাও কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। ওই প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, চলতি বছরেও ব্যাংক খাতে ডলার সংকট থাকবে। এর প্রভাবে তারল্য সংকট আরও বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে সঞ্চয়ে ঘাটতি থাকবে। মন্দায় উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমবে। ফলে খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়ে যাবে। আইএমএফের শর্তের কারণে বার্ষিক ভিত্তিতে ব্যাংক খাতের নেতিবাচক চিত্রগুলোও প্রকাশ করতে হবে। ফলে অনেক তথ্য গোপন করা কঠিন হবে। যেটি আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক করত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মধ্যে চলতি বছরে সুদ আসলসহ মোট ২২০ কোটি ডলার শোধ করতে হবে। এর মধ্যে মূলঋণ ১৭৮ কোটি ডলার ও সুদ ৪১ কোটি ডলার। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় এর ঋণের বিপরীতে আরও বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে। 
একই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ায় বাড়তি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হবে। এতেও উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের খরচ বাড়বে। এছাড়া বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। আর আমদানির বিপরীতে কিছু ঋণের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এসব ঋণ শোধ করার সময় রিজার্ভে আরও চাপ বাড়বে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম