নয় মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![নয় মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/01/11/image-761723-1704927511.jpg)
রাজধানীর রমনা ও পল্টন থানায় করা ৯টি মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দিয়েছেন আদালত। কিন্তু এখনই কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। কারণ রমনা থানার এক মামলা এবং পল্টন থানার অপর এক মামলায় জামিন পাননি তিনি। এই দুই মামলায় জামিন পেলে তবেই কারামুক্ত হতে পারবেন মির্জা ফখরুল। নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও রমনা থানার পৃথক ৯ মামলায় বুধবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত। এর মধ্যে রমনা থানার ৩টি এবং পল্টন থানার ৬টি মামলা রয়েছে।
মির্জা ফখরুলের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবা জানান, ৯ মামলায় জামিন হলেও রমনা থানার একটি মামলায় হাইকোর্ট তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানার আরও একটি মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ দুটি মামলায় জামিন পেলে তিনি কারামুক্ত হতে পারবেন।
এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনের পক্ষে আদালতে শুনানিতে তার পক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা মির্জা ফখরুলের ওজন ৫ কেজি কমে গেছে। ৭৬ বছর বয়সি মির্জা ফখরুল ইসলাম অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, যেকোনো বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধী মতের ওপর এখনো নানাভাবে নির্যাতন চলছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে করা নয়টি মামলা রাজনৈতিক। এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ওই নয়টি মামলার মধ্যে একটি মামলার আসামি শাহজাহান ওমর। তিনি জামিন পেয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।’
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ২৮ অক্টোবরের পর করা ৯টি মামলায় ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলকে ৯ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন। একই সঙ্গে জামিন শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত ফখরুলের বিরুদ্ধে রমনা থানায় তিন এবং পল্টন থানার ছয়টি মামলায় গ্রেফতার এবং জামিন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। এর মধ্যে পল্টন থানায় সাত এবং রমনা মডেল থানায় চারটি মামলা রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে এ মামলায় কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে গত ১৮ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর জামিন নামঞ্জুর করে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
হাইকোর্টে জামিন পাননি : প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে করা মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিন পাননি। এ মামলায় তার জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি না, তা মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মামলায় গত ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর জামিন চেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল দেন। মামলায় মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলের আইনজীবীদের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেন। সেদিন মির্জা ফখরুলের আইনজীবীর পক্ষে সময়ের আরজি জানানো হয়। আদালত ওই সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার রুলের ওপর শুনানি শেষে তা খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন। এ সময় মির্জা ফখরুলের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও আইনজীবী কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আবদুর রাফেল।