প্রচারের শেষ দিনে ঢাকা-১ আসনের ভোটারদের সালমা ইসলাম
পরিবর্তন আপনাদের হাতে ভোট দিতে আসেন
রেজাল্ট না নিয়ে কেন্দ্র ছাড়বেন না * উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান
মনির হোসেন, শিপন হাবীব ও আজহারুল হক, নবাবগঞ্জ ও দোহার থেকে
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ১৫ বছরের মধ্যে ৫ বছর আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত এমপি ছিলাম। দুবার ছিলাম সংরক্ষিত আসনে। কিন্তু ১৫ বছরই আপনাদের পাশে ছিলাম। ২৩টি ইউনিয়নে সব উন্নয়নে আমার হাতের ছোঁয়া আছে। আগামী ৭ তারিখে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে এই উন্নয়ন আরও দৃশ্যমান হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।
পরিবর্তন আপনাদের হাতে। কেন্দ্রে আসেন। ভোট দেন। রেজাল্ট নিয়ে ফিরবেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে নবাবগঞ্জ ও দোহারে নির্বাচনি সমাবেশে এসব কথা বলেন সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, লাঙ্গলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। যেসব এলাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়ন, বান্দুরা এবং যন্ত্রাইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন।
নির্বাচনের আগে শেষ দিনের উঠান বৈঠক ও সমাবেশে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন হুমকি আছে। বিভিন্ন লোকজন অনেক কথা বলেন। তবে আমি ফাইট করব। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আগলার জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান প্রমুখ। ভোটারদের উদ্দেশে সালমা ইসলাম বলেন, আপনারা কারও চোঙ রাঙানি বা হুমকিতে ভয় পাবেন না।
আগলা ইউনিয়ন : সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম বলেন, আমার লক্ষ্য কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে। বিশেষ করে ভাঙনকবলিত হতদরিদ্র নারী ও পুরুষসহ শিশুদের প্রতি থাকবে না কোনো বৈষম্য। সব নাগরিক শান্তি এবং সমৃদ্ধি ভোগ করবে। চরের বিভিন্ন স্থানে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দিরে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি শিশুদের জন্য ধর্মীয় ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন। বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি ভাতা যাতে স্বচ্ছভাবে সমবণ্টন হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সালমা ইসলাম। এ সভায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামে। দলে দলে নেতাকর্মীরা ও স্থানীয় জনসাধারণ সভাস্থলে পৌঁছান। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা স্লোগানে স্লোগানে সালমা ইসলামকে স্বাগত জানান।
সালমা ইসলাম বলেন, ১৫ বছরে আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলাম একবার। বাকি দুবার সংরক্ষিত আসনে এমপি। কিন্তু এরপরও বারবার আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। বিপদ-আপদে আমাকে পাননি এমন কথা বলতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহ যথেষ্ট দিয়েছেন। ফলে নিজের বা পরিবারের চলার জন্য সরকারি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমি আপনাদের সেবা করতে এমপি হতে চাই।
এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজের তহবিল থেকে অনেক বড় অঙ্কের টাকা আপনাদের জন্য খরচ করি। তিনি বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নুরুল ইসলাম আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। একে একে ৪২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন। ওনার প্রতিষ্ঠিত যমুনা ফিউচার পার্কের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। আমি তার স্ত্রী,আপনাদের পুত্রবধূ এবং কারও বোন হিসাবে কথা দিচ্ছি নবাবগঞ্জ-দোহারবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে আমি কাজ করব। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি আর কিছু নিতে আসিনি। কারণ আমাকে অনেক দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছি। পদ্মার ভাঙন থেকে দোহারবাসীকে বাঁচাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছি। টেন্ডার হয়েছে। বেড়িবাঁধের বড় অংশের কাজ হয়েছে। আগামী ৭ তারিখে আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ শেষ করব।
যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, সালমা ইসলাম আপনাদের এত আপনজন, যিনি সব সময় আপনাদের নিয়ে ভাবেন। ১৫ বছরে উনি আপনাদের শুধুই দিয়েছেন। চাননি কিছুই। একটি মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করেছেন এমন কেউ বলতে পারবেন না। ওনার সন্তানরা অত্যন্ত সুশিক্ষিত এবং তারাও তাদের এলাকার কথা ভাবেন। তাদের পিতৃভূমির উন্নয়নে মা সালমা ইসলামের পাশে আছেন। তিনি আপনাদের দুয়ারে এসেছেন। অতীতের মতো আপনারা ওনার পাশে থাকবেন।
বান্দুরা : বান্দুরা ইউনিয়নের নতুন বান্দুরা গ্রামে এক নির্বাচনি সভায় বক্তব্য রাখেন সালমা ইসলাম। এ সময়ে নারী ভোটাররা তাকে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। অতীতে তার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলেন কেউ। সালমা ইসলাম বলেন, সব সময় আপনাদের পাশে ছিলাম। করোনার সময় ট্রাক ভরে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। প্রতিশ্রুতি দিলাম আগামীতে সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন। সাহস নিয়ে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে চলে যাবেন। কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাবেন না।
যন্ত্রাইল : বিকালে যন্ত্রাইল ইউনিয়নের রথখোলা মন্দির মাঠে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সালমা ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আজীবন দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এরপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে একে ৪২টি শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হিসাবে তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি। সালমা ইসলাম বলেন, আমার স্বামী-সন্তানরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করেছে।
বিদেশে আমাদের কোনো সম্পদ নেই। দেশকে ভালোবাসি বলেই যা আছে তা এখানেই আছে। মানুষের কল্যাণে আমি কাজ করতে চাই। আমার স্বামী নুরুল ইসলাম বিদেশে কোনো অর্থ পাচার ও কোনো ব্যাংকে টাকা রাখেননি। দেশের টাকা দেশেই রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কলকারখানা গড়ে তুলেছেন। যেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করছেন।
আমি নির্বাচিত হলে দোহার- নবাবগঞ্জের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। যাতে কেউ নেশাগ্রস্ত ও বেকার না থাকে। তিনি আরও বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু আপনাদের পাশে থেকে এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। যাতে আগামী প্রজন্ম সুখে-শান্তিতে বসবাস করে।
এদিকে সন্ধ্যায় বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার হাজার হাজার মানুষ সালমা ইসলামের পক্ষে এক নির্বাচনি শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এটি নবাবগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে দোহারে শেষ হয়। এ সময় রাস্তা, বাজার, দোকান এবং বিভিন্ন আবাসিক ভবন থেকে মানুষ হাত নেড়ে সালমা ইসলামকে শুভেচ্ছা জানান। সালমা ইসলামও লিফলেট বিতরণসহ হাত নেড়ে অভিনন্দন গ্রহণ করে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান। সবার কণ্ঠে ছিল একই স্লোগান।
শোভাযাত্রা, ঢাকঢোল, ব্যানার ফেস্টুন, মাইকিং ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্ছ্বসিত জনতার কণ্ঠে স্লোগান ছিল-আমরা সবাই এক জোট। দেব এবার লাঙ্গলে ভোট। এ সময় ভোটাররা কেউ কেউ ছুটে এসে লাঙ্গলকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জনসভা ও শোভাযাত্রায় আরও উপস্থিত ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, জাতীয় পার্টির নেতা এমএ মজিদ, আসাদুজ্জামান চৌধুরী রানা, জাপা নেতা মান্নান মাস্টার ও সেলিম শিকদারসহ মহিলা পার্টি, যুব সংহতি, ছাত্র সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।