Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঢাকা-১ : নির্বাচনি সভায় সালমা ইসলাম

ভোট দিন, আপনাদের জীবনমান বদলে দেব

Icon

মনির হোসেন ও আজহারুল হক, নবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোট দিন, আপনাদের জীবনমান বদলে দেব

কথা দিচ্ছি অতীতের মতো পাশে পাবেন। সালমা ইসলাম আপনাদের এই মাটি ও মানুষের সন্তান। আমার স্বামী এবং পুরো পরিবার আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ফলে মানবসেবা আমার রক্ত ও চিন্তার সঙ্গে মিশে আছে। আমাকে ভোট দিন। কথা দিচ্ছি আমার নির্বাচনি এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে দেব। বঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল, পদ্মা নদীর করাল গ্রাস থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ সম্পূর্ণ করা, সন্ত্রাস দমন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন এবং কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তুলব পরিকল্পিত কুটির শিল্প।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দোহারের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এবং নবাবগঞ্জের গালিমপুর ইউনিয়নে নির্বাচনি সমাবেশে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, লাঙ্গলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, সালমা ইসলামের কারণে গত ১৫ বছরে কাউকে ১ টাকাও চাঁদা দিতে হয়নি। তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতেও এই এলাকার মানুষ স্বস্তিতে থাকবেন।

নির্বাচনি সমাবেশে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন সালমা ইসলাম। বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি ভাতা যাতে স্বচ্ছভাবে সমবণ্টন হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

সভায় দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা স্লোগানে স্লোগানে সালমা ইসলামকে স্বাগত জানান। সভায় আরও বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আকতারসহ দলের উপজেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা।

সালমা ইসলাম বলেন, ১৫ বছরে আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত এমপি (২০১৪) ছিলাম একবার। বাকি দুবার সংরক্ষিত আসনে এমপি। কিন্তু এরপরও বারবার আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। বিপদ-আপদে আমি আপনাদের পাশেই ছিলাম। আমাকে আল্লাহ যথেষ্ট দিয়েছেন। ফলে নিজের বা পরিবারের চলার জন্য সরকারি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমি আপনাদের সেবা করতে এমপি হতে চাই। নির্বাচিত হলে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজের তহবিল থেকে অর্থ আগের মতোই আপনাদের জন্য খরচ করব।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার স্বামী যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত নুরুল ইসলাম আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। একে একে ৪২টি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। ওনার প্রতিষ্ঠিত যমুনা ফিউচার পার্কের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। আমি আপনাদের পুত্রবধূ। কারও বোন। কারও ভাবি। সেই দাবি নিয়েই কথা দিচ্ছি, নবাবগঞ্জ-দোহারবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে আমি সর্বতোভাবে কাজ করব। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি আর কিছু নিতে আসিনি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন।

সালমা ইসলাম বলেন, আপনাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছি। পদ্মার ভাঙন থেকে দোহারবাসীকে বাঁচাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছি। টেন্ডার হয়েছে। বেড়িবাঁধের বড় অংশের কাজ হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ শেষ করব।

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালমা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি ওনার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রাখি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কোনো জায়গায় নির্বাচনের প্রচারণায় আমরা বাধা পাচ্ছি। ওইসব এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আমাদের মঞ্চ, চেয়ার ভেঙে ফেলেছে। সেই অভিযোগ প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশা করি তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার লক্ষ্য কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে। বিশেষ করে ভাঙনকবলিত হতদরিদ্র নারী ও পুরুষসহ শিশুদের প্রতি থাকবে না কোনো বৈষম্য। চরের বিভিন্ন স্থানে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দিরে সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি শিশুদের জন্য ধর্মীয় ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

সালমা ইসলাম উপস্থিত কৃষক ও শ্রমজীবী ভোটার এবং জনসাধারণের উদ্দেশে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে কৃষকের জন্য উন্নত আধুনিক বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করব। কৃষকের খাদ্যশস্যের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দোহার-নবাবগঞ্জের কৃষকদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের সহজ শর্তে কৃষি লোনের ব্যবস্থা করব। প্রতিটি হাটবাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেড তৈরি করে দেওয়া হবে।

সালমা ইসলাম আরও বলেন, যারা পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা করা হবে। ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ মৌসুমে প্রতিটি জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। আমি নিজস্ব তহবিল থেকেও তাদের সহায়তা প্রদান করব ইনশাআল্লাহ। আপনারা শুধু আমাকে একটিবার সুযোগ দিন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা ‘সালমা ইসলাম এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’-এই স্লোগানে, সভাস্থল মুখরিত করে তোলেন। সালমা ইসলামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় তিনি সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এই এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেব। সরকারিভাবে সহায়তার পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া গ্রামের মানুষের লেনদেনের সুবিধার্থে এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংককে শাখা স্থাপনে উৎসাহিত করা হবে।

সালমা ইসলাম বলেন, আমি নির্বাচিত হলে দোহার উপজেলার ভাঙনকবলিত এলাকার নারী সমাজের জন্য কাজ করব। বিশেষ করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, প্রতিবন্ধী নারীসহ চরের প্রত্যন্ত এলাকার প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণ, নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে অধিকতর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া হতদরিদ্র পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। আমি শুধু আপনাদের বলব, দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর স্বার্থে একটিবার সুযোগ দিন। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, এলাকাকে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে দেব। বিশেষ করে গ্রামের ও চরের অবহেলিত এলাকার আধুনিকায়নে সবার আগে কাজ করব। গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূরীকরণে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করব। এছাড়া নদীভাঙনের শিকার বয়স্ক, বিধবা, অসচ্ছল নারী প্রতিবন্ধীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যেসব মানুষ সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না তাদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা করব। চরের দরিদ্র নদীভাঙনকবলিত জনগণের জন্য বসতভিটা ও খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের বাদ দিয়ে দোহার-নবাবগঞ্জের উন্নয়ন হবে না। দোহার-নবাবগঞ্জ রাজধানীর অতিনিকটে। আগামী দিনে আমি আপনাদের সহায়তায় এমপি নির্বাচিত হলে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করব। গ্যাসলাইনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। বেকার সমস্যার সমাধান হয়। মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি পায়।

তিনি বলেন, প্রিয় ভোটার ও চরাঞ্চলের মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পান বটে, তবে সেটাও পর্যাপ্ত নয়। সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক ও কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা সেবা পান, কিন্তু সেটাও নিয়মিত নয়। ফলে হঠাৎ করে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে পরিবারের সদস্যদের একটা যুদ্ধ করতে হয়। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, এমপি নির্বাচিত হলে আপনাদের সড়ক তৈরি ও সংস্কার করে দেব। যাতে রোগীদের হাসপাতালে নিতে কষ্ট না হয়। এছাড়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল স্থাপনে সচেষ্ট থাকব। আপনাদের মৈনটঘাটকে স্থায়ী বিনোদনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে। যাতে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রকমারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন।

সালমা ইসলাম বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের জীবনমানকে বদলে দিতে কাজ করব। চরাঞ্চলের উন্নয়নকে ঘিরে বিভিন্ন জনমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। নদীশাসনের মাধ্যমে যদি ভাঙন রোধ হয় ও চরগুলোতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ে। এই এলাকায় কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটবে। স্থায়ী কিছু বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করে কমিউনিটিভিত্তিক ফসল চাষ, বিক্রি এবং চিকিৎসাসেবাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে আপনাদের এখানে। আমি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাব।

দোহারের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বালুর মাঠ ও নবাবগঞ্জের গালিমপুর নোয়াদ্দা পাঠান বাড়ি এলাকায় এসব সভা করেন সালমা ইসলাম। গালিমপুরে তিনি বলেন, নবাবগঞ্জের আপন মানুষের কাছে আমার অনেক দাবি। কারণ আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সঙ্গে এলাকার মানুষের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেই অধিকার থেকে আমি লাঙ্গল প্রতীকে ভোটের জন্য দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতা চাই।

এসব নির্বাচনি সভায় উপস্থিত ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান, নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, বোরহান হোসেন, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, ইউনিয়ন সভাপতি ফরিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শামিম হোসেন, নজরুল ইসলাম, মনির হোসেন, গালিমপুরে ছিলেন মশিউর রহমান খান তাপস, বাহের ব্যাপারী, খায়রুল হোসেন, শাহাদাত হোসেন, মো. ইউনুস, সাহেদ ভূঁইয়া, নুর হোসেন, নাসির উদ্দিন, নারী নেত্রী আসমা আক্তার রুমি. আইরিন গমেজ, ফরিদা ইয়াসমিন লিলি, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টি এবং মহিলা পার্টি ও ছাত্র সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম