বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী
অগ্নিসন্ত্রাস-হত্যা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না
বাসস
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগুন সন্ত্রাসী ও মানুষ হত্যাকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাস ও হত্যা করে মানুষের মন জয় করা যায় না। জনগণ ওদের প্রত্যাখ্যান করবে-এটা জেনে ওরা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বানচাল করতে চায়।’ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আজকে নির্বাচনি সংস্কার আমরা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করবে। কে সরকারে আসবে। নির্বাচন বানচাল করতে তারা (বিএনপি-জামায়াত) অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ খুন করছে। কিন্তু এগুলো দিয়ে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না। এটা তাদের জানা উচিত এবং সে অনুযায়ী তাদের কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়, আন্দোলনের নামে রেল গাড়িতে যাতে দুর্ঘটনা হয় সেজন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে রাখে। মানুষ হত্যা করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জিয়াউর রহমান যেমন মানুষ হত্যা করেছে, খালেদা জিয়া এসেও একই কাণ্ড করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কোটালীপাড়ায় বোমা রেখে দেওয়ার মতো বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ঠিক একইভাবে আজকে লন্ডনে বসে হুকুম দেওয়া হচ্ছে। ওখান থেকে হুকুম দেওয়া হয় আর এখন থেকে তাদের দল আগুন দেয়। এই যে আগুন নিয়ে খেলা এই খেলা ভালো নয়। বাংলাদেশের মানুষ এটা কখনো মেনে নেবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সে সুযোগ নিয়ে গুপ্তস্থান থেকে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় আর মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বসে সে এসবের হুকুমদাতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদের কিসে ভালো কিসে মন্দ। আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের কল্যাণ হয়। আজকে বাংলাদেশের সব মানুষকে আমি এটাই আহ্বান করব দুর্বৃত্ত, অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি-যারা মানুষ খুন করার জন্য রেললাইনের পাত ফেলে দেয়, রেললাইন কেটে রাখে, আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়-তাদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর রেললাইন থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাহারা দিতে হবে। যারা রেললাইন কাটতে যাবে, আগুন লাগাতে যাবে তাদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শিক্ষা দিন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি থেকে যখন আমরা কেবল উঠে আসছি তখন এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন-সেটাকেও মোকাবিলা করে আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি-এই সময় তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই বার্তা সবাইকে পৌঁছে দিতে হবে যে, ওরা মানুষের কল্যাণ চায় না, লুটপাটের রাজত্ব চায়। ওরা ভোটে যেতে সাহস পায় না। কারণ ওরা জানে বাংলাদেশের মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসীদের ভোট দেবে না। সেজন্যই ওরা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সরকার উৎখাত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে উঠে আসেনি। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি মানুষের সংগঠন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। কাজেই আওয়ামী লীগকে এভাবে কোনোদিনই উৎখাত করা যাবে না।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও সুজীত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল আলম মিলন এমপি, কেন্দ্রীয় নেত্রী মেরিনা জাহান কবিতা, এমপি; কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান, হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি এবং সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আগামীকাল (আজ) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় দিনটিতে আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালি পরদিন (১৯ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। বেলা আড়াইটায় বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২-এর বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে।