Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধরাশায়ী হতে পারেন অনেকেই

Icon

আবদুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জন্য এখন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও দলটির মিত্রদের ভোট বর্জনের এ নির্বাচনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সহজ জয় পাওয়ার যে আশা দেখেছিলেন, তা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। কারণ তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ এখন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের আসনগুলোতে তীব্র লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রভাবমুক্ত, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে জয়ী হতে পারেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে কপাল খোলার পথ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতার। তারা আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। স্বপ্ন দেখছেন এমপি হওয়ার। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দীর্ঘদিনের অবহেলা, উপেক্ষা ও বঞ্চনার শিকার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন এসব দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে। নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে অবহেলিত নেতাকর্মীরা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের জবাব উগড়ে দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলন হক ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের আসনে শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে অনেকেই ধরাশায়ী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বলেছেন, দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। তারা (স্বতন্ত্র প্রার্থীরা) এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তিনি আরও বলেন, দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠ থেকে উঠাবে (প্রত্যাহার) না। দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্যুতে আওয়ামী লীগের শরিক এবং মিত্রদের সঙ্গেও আপস করার সুযোগ নেই।

শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুল হক ভূঁইয়া। তিনি সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। যুগান্তরের কাছে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়াই করবেন বলে জানান।

লালমনিরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হক। তাকে (সিরাজুল হককে) প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসেরও সমর্থন রয়েছে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের প্রতি। আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামানকে সরিয়ে নিজের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বসিয়েছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান। এখানকার নেতাকর্মীরা বিব্রত মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং তার এপিএস মিজানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার কারণে ।

নওগাঁ-১ আসনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান তোতা। ধারণা করা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে খাদ্যমন্ত্রী ধরাশায়ী হতে পারেন।

পিরোজপুর-১ আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ-সদস্য আবদুল আউয়াল। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বর্তমানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আবদুল আওয়াল বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ভোটের আগেই আমার এক কর্মীকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশা করছি।

অবশ্য আওয়ালের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ ম রেজাউল করিম। নিহত ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাসেবক দল পিরোজপুর শাখার শ্রম সম্পাদক এবং নাশকতা মামলার একজন আসামি বলে তিনি দাবি করেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আওয়াল ও তার কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে মন্ত্রী অভিযোগ করেন।

নরসিংদী-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোহরদীর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) নূর উদ্দিন খানের ভাতিজা সাইফুল বলে জানা গেছে।

বরিশাল-৫ সদর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এখানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাদিক আবদুল্লার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনে নৌকার (আওয়ামী লীগ মনোনীত) প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে লড়ছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম।

গাজীপুর-২ আসনে রয়েছেন শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম। এ আসনে (গাজীপুর-২) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে গাজীপুরের এই দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ধরাশায়ী হতে পারেন বলে নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন।

রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রাহেনুল হক রায়হান। তিনি সাবেক দলীয় সংসদ-সদস্য।

নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন শফিকুল ইসলাম শফিক। তিনি (শফিক) সিংড়া পৌরসভার দুবারের নির্বাচিত মেয়র।

জামালপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। এখানে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাজাহান আলী মণ্ডল। তিনি ঢাকার বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগ নেতা (সভাপতি) বলে জানা গেছে।

নেত্রকোনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফ জিততে পারেন বলে মনে করছেন সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি তৌহিদ জং মুরাদ, হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

মেহেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মোকাবিলা করছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীনকে।

শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে খালেদ শওকত আলী।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মঙ্গলবার বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকলে সমস্যা নয় বরং একাধিক প্রার্থী থাকলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। যারা জনগণের জন্য কাজ করেছেন তারা নির্বাচিত হবেন। যারা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেননি তারাই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভয় পাচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম