Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন আরও শহিদ বুদ্ধিজীবী

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন আরও শহিদ বুদ্ধিজীবী

রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন আরও অর্ধশতাধিক শহিদ বুদ্ধিজীবী। ২৬ মার্চের আগেই নতুন এই তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে। চলমান এ প্রক্রিয়ায় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতে নতুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে। এর আগে দুই ধাপে ৩৩৪ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীকে গেজেট প্রকাশ করে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নতুন গেজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠন করেছি আমরা। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আরেকটি তালিকার বিষয়ে কমিটি কাজ করছে।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা প্রস্তুত সংক্রান্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক) যুগান্তরকে বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজটি বেশ এগিয়েছে। একটি উপকমিটি করা হয়েছে। যেখানে এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আছেন। আমরা দুটো গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছি সর্বসম্মতিক্রমে। গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরে একটি অবজারভেশন পেয়েছিলাম ঠিকানা বিষয়ক। বাকি সবার তথ্যই সঠিক। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি গ্রুপকে গবেষণার জন্য বলা হয় বলে জানি। তারা গ্রামে গ্রামে স্টাডি রিপোর্ট করেছেন শুনেছি। অনেক অবজারভেশন আছে। এখন এটি পূর্ণাঙ্গভাবে কম্পাইল করে আরেকটি গেজেট করতে হবে। আশা করি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ের ওপর স্টাডি রিপোর্ট করে আরও কিছু গেজেট করতে পারবে।

তিনি বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকে প্রান্তিক মানুষ ছিলেন যারা গ্রামে বসবাস করতেন। তাদের অনেকের তথ্য পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। অনেকেরই আত্মীয়স্বজনকে বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক শহিদ বুদ্ধিজীবীর সন্তানরা বিদেশে থাকেন। রেফারেন্স পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এলাকায় ডিসি অফিস, থানায় গিয়ে কিছু ডাটা সংগ্রহ করতে হয়। সেখানেও খুব বেশি তথ্য থাকে না। তারপরও এখানে বিশেষ ও অভিজ্ঞ মানুষরা কাজ করছেন। আমরা আশা করছি আরও কিছু গেজেট হবে।

উপকমিটির আরেক সদস্য এবং একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও গবেষক শাহরিয়ার কবির যুগান্তরকে বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা ও গেজেটের অন্তর্ভুক্তির জন্য ৬৫ জনের আত্মীয়স্বজন সরাসরি আবেদন করেছেন। ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ থেকেও একটি তাালিকা তারা করেছেন। সেখানে প্রায় শতাধিক নতুন নাম আছে। উপকমিটির কাছে সেগুলো রেফার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই চলছে। এর মধ্যে যেগুলো নির্ভরযোগ্য বা যেগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই সেগুলো নিয়ে হয়তো আরেক দফা গেজেট এই মাসে প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাদের অনেকেরই পরিবার-পরিজনের কেউ নেই। কেউ খবর দিতে পারেন না। অনেকে আবার অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকের পরিবার-পরিজন ভারত চলে গেছেন। সাব-কমিটি এসব বিষয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছে।

পূর্ণাঙ্গ তালিকার প্রসঙ্গ টানা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলেছি এ ধরনের তালিকাগুলো সব সময় চলমান রাখা দরকার। কারণ, পূর্ণাঙ্গ বলে তালিকা প্রণয়ন বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। একজন সত্যিকারের শহিদ বুদ্ধিজীবীর হয়তো দেশে কোনো আত্মীয়স্বজন এখন নেই আবেদন করার। কখনো যদি তার কোনো আত্মীয়স্বজন ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে এসে কাগজপত্র দিয়ে বলেন আমার আত্মীয় মুক্তিযুদ্ধে বা মুক্তিসংগ্রামে বুদ্ধিভিত্তিক অবদান রেখেছেন এবং শহিদ হয়েছেন তখন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে কিভাবে। সেজন্য এগুলো চলমান থাকা উচিত।

নতুন করা আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় গেজেটের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকার কাজ তুলনামূলক সহজ ছিল। কারণ, নামগুলো পরিচিত। তাদের অনেকের নামেই ডাকটিকিট প্রকাশ হয়েছে। নতুন অনেক আবেদনের ক্ষেত্রে যাচাই করতে হবে। গ্রামে পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়ে একজন শিক্ষক হয়তো শহিদ হয়েছেন। কিন্তু ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী’ বললে আলাদা একটি সংজ্ঞায় আসতে হবে। মুক্তি সংগ্রামে বা মুক্তিযুদ্ধে তার বুদ্ধিভিত্তিক কোনো অবদান ছিল কিনা সেটি নিশ্চিত হতে হবে।

বাংলা একাডেমির ‘শহিদ’ এবং ‘বুদ্ধিজীবী’ সংজ্ঞার ভিত্তিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটি একটি নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে। নতুন সংজ্ঞায় বলা আছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহিদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহিদ বুদ্ধিজীবী।

বাঙালির বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দেশীয় দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। যদিও মুক্তি সংগ্রামের আগে ও পরে এবং ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধকালীন সারা বাংলাতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম