Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাংলার আকাশ শত্রুমুক্ত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলার আকাশ শত্রুমুক্ত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তার নামেই পরিচালিত হয়েছিল বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। পুরো ৯ মাসের যুদ্ধে ডিসেম্বর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেই ঘুরে যায় যুদ্ধের মোড়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে আসতে থাকেন।

তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিমানবাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়। সম্মুখসমরের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও হারতে থাকে পাকিস্তান। এ ডিসেম্বরই আমাদের উপহার দিয়েছে সেই ‘স্বাধীন-সার্বভৌম’ সত্তা।

১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর ছিল রোববার। সর্বাত্মক লড়াইয়ে এদিন শত্রুমুক্ত হয় বাংলার আকাশ। মিত্রশক্তির বিমানবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয়।

সারা দিন ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো অবাধে আকাশে উড়ে পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোয় প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। অকেজো করে দেয় বিমানবন্দরগুলো। এদিনের পর ঢাকার আকাশে আর কোনো জঙ্গিবিমান ওড়েনি। এর একদিন পরই ভারত সরকার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ডার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে সব বিদেশি জাহাজকে বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিদেশি জাহাজগুলো এ সময় নিরাপত্তা চাইলে যৌথ কমান্ডার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পৃথিবীর সব দেশ তখন বুঝতে পারে যে শিগগিরই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটতে যাচ্ছে। এই দিন লেফটেন্যান্ট আরেফিনের নেতৃত্বে চালনা নৌবন্দরে তীব্র আক্রমণ করা হয়। মুক্তিবাহিনীর এই আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জামালপুর ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার, ঝিনাইদহ, সান্তাহার, ময়মনসিংহ ইয়ার্ড মিত্রবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়। ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল করে নেয় মিত্রবাহিনী। বাংলার উন্মুক্ত আকাশে মিত্রবাহিনীর বিমান অবাধে বিচরণ করে।

জামালপুরে বিমান হামলায় কয়েকশ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। মিত্রবাহিনী বাংলাদেশের চারদিক থেকে বিজয় দেখে এগিয়ে যায়। মিত্রবাহিনীর বিজয় দেখে জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানি বাহিনীকে পেছনের দিকে সরে আসার নির্দেশ দেন। ভারতের অকৃত্রিম সাহায্য-সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সফলতা বাংলাদেশকে দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

এদিন বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত ছিল। পাকিস্তানের কূটনৈতিক কূটকৌশলে মুক্তিযুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু হয়। আগের দিন ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করার প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্তাবটি ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন, যার ফলে বর্তমান সংঘাতের অবসান ঘটবে।’ এ প্রস্তাবে পোল্যান্ড সমর্থন জানায়। কিন্তু চীন ভেটো দেয় এবং নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে অপর দুই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভোটদানে বিরত থাকে। এতে পাকিস্তানের প্রত্যাশার শেষ আলোটুকুও ফিকে হয়ে যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম