Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন

এবার নির্বাচনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার নির্বাচনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এবার আদর্শ নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে। বিএনপির অংশগ্রহণ না করাটা বড় কোনো ইস্যু হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ‘ডকট্রিন অব রিয়ালিটি’তে বিশ্বাস করে। তারা বাস্তবতা অনুধাবন করবে। আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী দাঁড়ানোর কারণে ভোট ভাগাভাগির ভয় আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন। তার সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণী নিম্নে দেওয়া হলো-

যুগান্তর : সিলেট-১ আসনে যে দল জয়ী হয় সেই দলই সরকার গঠন করে। আপনি সে আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নির্বাচনে বিএনপি নেই। আপনার আসনে কি অবস্থা?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বড় দল বিএনপি কিন্তু আপনি বিএনপির ইতিহাস যদি দেখেন, যেখানেই স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে, বিএনপি সরকারে আসতে পারেনি। ২০০৮ সালে খুব স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়েছে। সেখানে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পায়। ২০১৮ সালে তারা জয়েন করেছে। তারা সাতটি আসন পায়। ২০২৪ সালে জয়েন করলে হয়তো কিছুটা বেশি পাবে। সরকার গঠন করার মতো তাদের কোনো কর্মসূচি নেই, গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাদের গ্রহণযোগ্যতা তখনই হয় যখন তারা জনগণের জন্য কাজ করবে বলে বাস্তবধর্মী কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়। বিএনপির কর্মসূচি তাদের দুটো, একটা হচ্ছে সরকারের পতন। আরেকটি হচ্ছে তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্তি। এগুলো জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাদের জয় লাভের সম্ভাবনা নেই।

যুগান্তর : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : যারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের দেশে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা খুব কম হয়। আমেরিকার কথাই ধরেন। সেখানে উপনির্বাচনে এক-দেড় শতাংশ ভোটার উপস্থিতি হয়। আমেরিকায় অনেক রাজ্য আছে যেখানে ভোটে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই থাকে না। সেইগুলোকে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলে। আমাদের আগামী নির্বাচনে প্রায় ২৫টি দল অংশ নিচ্ছে।

যুগান্তর : ২০০৮ সালে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার কত শতাংশ ভোট পড়তে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এবারে হয়তো কম ভোট পড়বে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। সেখানে কয়েক পার্সেন্ট মাত্র ভোট পড়েছিল। এটাকে বলে ভোটারবিহীন নির্বাচন। তার বাইরে প্রায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। অত্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এমনিতে জেনারেল জিয়ার হ্যাঁ-না নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। একজনই প্রার্থী। সেখানে জোর করে হ্যাঁ ভোট দিয়েছে। আমি আশা করি, এবারও যথেষ্ট ভোট পড়বে। কমপক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে। বিএনপি না এলেও অন্যান্য দল আসছে। তারা যথেষ্ট খাটবে। আমাদের দেশে যারা পয়সাওয়ালা লোক তারা ভোট দিতে যান না। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যায়। গরিব মানুষ ভোট দেয়। বস্তির লোকেরা ভোট দেয়।

যুগান্তর : বেশি দল অংশ নিলেও এসব দল অতীতে তেমন আসন পাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। কোনো কোনো দল একেবারেই নতুন। লোকজন বলে কিংস পার্টি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এগুলো আপনারা বলেন। এগুলো ইনডিপেনডেন্ট পার্টি। কিন্তু আপনারা এগুলোর নাম দেন।

যুগান্তর : বেশি দল অংশ নিলেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : অবশ্যই বলা যাবে। সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণ হচ্ছে জনগণ যদি ভোট দেয়। আমাদের বিশ্বাস, জনগণ ভোট দেবে। জোয়ার এসেছে। এটা আমাদের জন্য পরীক্ষাও। আমাদের বিশ্বাস, দলে দলে জনগণ যোগদান করবে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, যেমন ধরুন বিএনপি, তারা বিভিন্ন অপকর্ম করবে। এবারে একটা সুবিধা হয়েছে, আমেরিকা বলেছে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চাইবে, তাদের তারা শাস্তি দেবে। আমার মনে হয়, যারা অবরোধ করে, যার অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পোড়াচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, বাস আওয়ামী লীগের না, স্থাপনাগুলো আওয়ামী লীগের না, হাসপাতাল আওয়ামী লীগের না, কিন্তু এগুলো পোড়াচ্ছে, আমার বিশ্বাস, আমেরিকা এগুলোর ওপর খক্ষ হবে, ওদের শাস্তি দেবে।

যুগান্তর : বিএনপি বাধা দিলে নির্বাচনে উৎসবের আমেজে কি কোনো ঘাটতি হতে পারে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : না, সেটা হবে না। কারণ সরকার এবং ইলেকশন কমিশন যথেষ্ট আগেভাগে উদ্যোগ নেবে, যার ফলে সেখানে সন্ত্রাসী হবে না। ২০১৪ সালের মতো অবস্থা হবে না। ২০১৪ সালে ৬০০-এর বেশি সেন্টার পুড়িয়ে ফেলেছিল। এবারে এগুলো সম্ভব হবে না। খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্র্বাচন হবে। জনগণ এক পায়ে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্যে। যারা ক্রিটিক তারা ঘরে বসে ক্রিটিক করেন। তারা ভোটকেন্দ্রে যান না।

যুগান্তর : ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার কি প্রত্যেক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করছেন?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : আমার এলাকায় অনেক দেখছি। ইসলামিক দল, তৃণমূল দল তারা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতবার মেয়র নির্বাচনে বিএনপির ১০৬ জন প্রার্থী ইলেকশনে গেছেন। তিনজনকে মাত্র বহিষ্কার করেছে। বাকি ২২ জন তাদের দলের লোক জয় লাভ করেছেন। সেগুলো তারা গ্রহণ করে নিয়েছেন। এই ধরনের অনেক হবে। যারা রাজনীতি করেন তারা তো জনগণের কাছে পৌঁছতে চান। তারা বিদেশমুখী থাকেন না। বিদেশ তাদের ক্ষমতায় বসাবে ওই দিকে তাকায় না। আমার বিশ্বাস, অনেক লোক নির্বাচনে অংশ নেবেন। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। প্রত্যেকটা জায়গাতেই অনেক প্রার্থী থাকবে। আমার এলাকাতেই ধরুন। আমি আওয়ামী লীগ। আরও আওয়ামী লীগার দাঁড়াচ্ছেন। আমাদের ভয় হলো, কিছু ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে।

যুগান্তর : আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হওয়ার সুযোগের সুফল বেশি নাকি কুফল বেশি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : কুফল বেশি। ২০১৮ সালে বিএনপির ভরাডুবির একটি কারণ হলো, প্রায় আসনে তারা একের অধিক প্রার্থী দিয়েছে। তার ফলে তাদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেছে। আমাদেরও যদি এবার ভাগাভাগি হয় তবে ভয় আছে।

যুগান্তর : কী ধরনের ভয়?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ভয় এই জন্য, যদি আমার দলের ভোট ভাগাভাগি হয়, তাহলে অন্য দল চলে আসবে। এটাই ভয়। আপনি দেখেন, ২০০১ সালে প্রত্যেক ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েছিল। কিন্তু ইলেকশনে খুব কম লোক নির্বাচিত হয়েছেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রে ২০০-৩০০ বেশি হলে এক হাজার ভোটের ব্যবধানে তখন হারে। বেশি ভোটে কিন্তু হারে না। এখন যদি আওয়ামী লীগে ভাগাভাগি হয়ে যায় তবে ভয় আছে।

যুগান্তর : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি শুধু বিরোধী দলের ওপর প্রয়োগ হবে এমন নয়। বরং সরকারি দল, ভোটের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা, সভা-সমাবেশে বাধা দিলে সেখানেও প্রয়োগ হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : মিডিয়ার বিরুদ্ধেও সেটা প্রয়োগ হতে পারে।

যুগান্তর : মিডিয়াকে বাধা দিলেও ভিসানীতির প্রয়োগ হতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : তারা সিদ্ধান্ত নেবে আপনি কোনো দলের কিনা। সাধারণ জনগণ, যারা ভোটার, মাঠে-ময়দানে থাকে, ওরা ভিসা রেসট্র্রিকশন বোঝে না। ওরা আমেরিকায় যাওয়ার জন্যে এক পায়ে দাঁড়িয়ে নেই। সরকারি কর্মচারী যারা, আর যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশ থাকে, আর যারা অনেকেই আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, বেশিরভাগ দুর্নীতির কারণে, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক।

যুগান্তর : তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, ভিসানীতি কিছুটা হলেও পরিবেশটাকে অবাধ করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সরকারি কর্মচারীর মধ্যে যথেষ্ট আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কিছু ব্যবসায়ীর মধ্যে করেছে। কিন্তু গ্রামগঞ্জের কর্মীরা এসব পাত্তা দেয় না। সবাই দেখছে, যারা অবরোধ করছে তাদের ওপর ভিসানীতি হয় কিনা। যদি তাদের ওপর প্রয়োগ না হয় তবে অন্যরাও পাত্তা দেবে না। বলবে এটা ভুয়া।

যুগান্তর : যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে কী ধরনের ভূমিকা নিতে পারে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : আমি কোনো কিছু আশা করছি না। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খুব ভালো। আমেরিকা একটা শক্তিশালী দেশ। দুনিয়ার এক নম্বর দেশ। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, অস্ত্রের মহড়ায়, শক্তির দিক থেকে-এক নম্বর দেশ। সুতরাং আমরা তাদের সুপারিশ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করি। তারা আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে বলেছিলেন। আমরাও দেখলাম, এটার প্রয়োগে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে। আমরা সেটা বাতিল করে দিয়েছি। যদি কোনো উপদেশ থাকে যেটা বাস্তব নয়, সেটা আমরা গ্রহণ করতে পারব না। আমরা সবাই চাই আমেরিকার মতো উন্নত হতে। তাদের মাথাপিছু আয় ৬৫ হাজার ডলার। আমরাও চাই। তাদের বিরাট দেশ। তাদের লোকজন আমাদের ডবল। তাদের দেশে দাস ছিল। আমাদের দেশে কখনও দাস ছিল না। তারা দাসদের অত্যাচার করেছে। এক সময় তাদের দেশে একজন শ্রমিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করে ২০ সেন্ট মাইনে পেত। ওই দিন চলে গেছে। তারা এখন ঘণ্টা ধরে ডলার পায়। আমরা তাদের মতো হতে চাই। আমরা আশা করি, একদিন আমরা সেটা হব। একদিনে হবে না। এটা ধাপে ধাপে হতে হবে। শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে সরকার পেলেন, তখন গার্মেন্টসে বেতন ছিল তিন হাজার টাকা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ৫৩০০ করলেন। তারপর তিনি এটা আরও বাড়ালেন। এখন এটা সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। হঠাৎ করে যদি কেউ বলে যে, এটা আরও বাড়াতে হবে। আমরা এটা বাড়াতে চাই। কিন্তু এটা বেসরকারি খাত, সরকার বললেই হবে না। আমরা চাই, আমাদের পণ্যের দাম ক্রেতারা বাড়িয়ে দেবে। তাহলে আমরা এই টাকাটা শ্রমিকদের দিতে পারি। তারা বললেও পারবে না। কারণ তাদের দেশে এটাও বেসরকারি খাতের হাতে। আমাদের পোশাক কেনে দয়া করে নয়। সস্তায় পায়। গুণগত মানে ভালো জিনিস পায়। সময়মতো ডেলিভারি পায়। সেজন্য তারা কেনে। তারা বললেই আমরা কালকে করে দিলাম, এটা এত সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। তারা আমাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। সবচেয়ে বড় একক বাণিজ্যের দেশ। আমাদের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে। আমেরিকাও একই জিনিসে বিশ্বাস করে। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের ফারাক নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ব্যানারে চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময় বন্ধু হিসাবে আমাদের ভালো প্রস্তাব করে। সেগুলো আমরা গ্রহণ করি।

যুগান্তর : নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি হবে? অভ্যন্তরীণ নাকি আন্তর্জাতিক?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : আন্তর্জাতিক চাপ নিয়ে আমরা কোনো চাপই অনুভব করি না। এটা গৌণ। আমাদের মুখ্য হলো, সংঘাত মুক্ত নির্বাচন করতে চাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমি এলাকায় সরকারি গাড়ি চালাই না। মিডিয়ায় ৭৫ শতাংশ বিরোধী দলের খবর প্রচার করে। আমরা বিশ্বাস করি, এবার আমরা একটা আদর্শ নির্বাচন করতে পারব।

যুগান্তর : ভারত, চীন, রাশিয়া নির্বাচনকে অভ্যন্তরীণ বলছে। এটা সরকারের জন্য সুবিধা। কিন্তু অসুবিধা হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ বারবারই অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। তাদের আশ্বস্ত করতে পারছেন না কেন?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : আমার মনে হয়, তাদের কোনো মতলব আছে। আরেকটি হচ্ছে, ভূ-কৌশলগত অবস্থানের জন্য। আমাদের ইলেকশন সুন্দর হোক না হোক এটা সেকেন্ডারি। তারা এমন সরকার চাইবে যেন তাদের গোলাম হয় এবং চীনের বিরুদ্ধে থাকে। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এই অবস্থানে আমরা আছি। এটা অনেকে অপছন্দ করে।

যুগান্তর : বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় কোনো সমস্যা হবে কিনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : না। আগেও তারা অনেক সময় জয়েন করেনি। এটা স্থিতিশীলতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। দুনিয়ার অনেক দেশে বড় বড় দল জয়েন করে না। বিভিন্ন দেশে এমন হয়। এটা বড় ইস্যু নয়। বড় ইস্যু হলো-স্বচ্ছ, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। আমেরিকার কথা বলি, আমেরিকা ডকট্রিন অব রিয়ালিটিতে বিশ্বাস করে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পক্ষে কাজ করেনি। আজকে কিসিঞ্জার সাহেব মারা গেছেন। তিনি ডেড এগেইনস্ট বাংলাদেশ। তিনি তার নিজের দেশের আইন, আন্তর্জাতিক আইন সব লঙ্ঘন করে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছেন। এমন একদর্শী লোকও দুনিয়াতে আছে। কিন্তু জায়ান্ট মাস্ট ইন্টেলিজেন্ট ম্যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমেরিকা বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। জাতিসংঘে ১৬ বারের ভোটে ১৫ বারই আমেরিকা বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা বাস্তবতায় বিশ্বাস করে। সুষ্ঠু নির্বাচন করলে তারা নিশ্চয়ই আমাদের সমর্থন করবে।

যুগান্তর : নির্বাচন যদি তাদের মানদণ্ডে না হয় সেক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থার আশঙ্কা করছেন কি?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : তারা খুবই বাস্তববাদী। তারা মূল্যায়ন করবে। তারা আহাম্মক নয়। তারা খুব স্মার্ট। তারা পরিপক্ব। তাদের বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আছে। আমরা তাদের শত্রু না। আমরা তাদের ভালো বন্ধু। মিডিয়া হইচই বেশি করে যাতে সরকারের সঙ্গে ঝামেলা হয়। আমরা বলেছি, মিডিয়ায় না গিয়ে আমাদের জানাবা। গুড নিউজ হলো, তারা এখন আমাদেরই আগে জানায় যেগুলো তাদের ইস্যু থাকে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম