Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এক মঞ্চে আসতে পারে বিরোধী দল ও জোট

জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জোর * ঐক্য অটুট রাখতে কৌশলী * বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ‘সভা-সমাবেশ’

Icon

নূরে আলম জিকু

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক মঞ্চে আসতে পারে বিরোধী দল ও জোট

ঘোষণা অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন আজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ নির্বাচনমুখী দলগুলোর প্রস্তুতিও সম্পন্ন। উলটো পথে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনি তফশিল বয়কট করে সমমনাদের নিয়ে একদফার আন্দোলন করছে দলটি। আসন্ন নির্বাচনকে ‘একতরফা’র উল্লেখ করে তা প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে চলমান আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে নানামুখী কৌশলে এগোচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। লক্ষ্য অর্জনে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে শীর্ষনেতাদের। এই মুহূর্তে সরকারের দমন-নিপীড়নের তথ্যচিত্র আর্ন্তজাতিক মহলের কাছে তুলে ধরতে জোর দিচ্ছেন নেতারা। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজপথে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সরকারবিরোধী দল ও জোটগুলোকে এক লক্ষ্যে এক মঞ্চে নেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। দাবি আদায়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে রাজপথ দখলে রাখতে চায় বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।

বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান যুগান্তরকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না এটা স্পষ্ট। যে কারণে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলেই আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে। মহাসচিবসহ শীর্ষনেতারা কারাবরণ করছেন। তিনি বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। গণগ্রেফতার ও দমন-পীড়নের মধ্যেও নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। সময়ের প্রয়োজনে জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন কর্মসূচি আসতে পারে। কর্মসূচিতে ভিন্নতা এলেও আন্দোলন আরও জোরালো হবে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর দলের শীর্ষনেতাদের পাশাপাশি সারা দেশে সরকারের দমন-নিপীড়ন ও গণগ্রেফতারের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়। হরতাল-অবরোধে কার্যকরী ও জনসম্পৃক্ততার বিষয়গুলো উঠে আসে। বৈঠকে কয়েকজন নেতা কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনার প্রস্তাব দেন। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্তদের ভিডিও, ছবি ও তথ্য-উপাত্ত এবং সারা দেশে মামলা-হামলার বর্ণনা বিভিন্ন দূতাবাসে দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো চাপেই নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। পদত্যাগ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কোনো আশ্বাসেই সিদ্ধান্ত বদলাতে চান না তারা। এমনকি নির্বাচনের পুনঃতফশিল নিয়ে আলোচনা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না হাইকমান্ড। দাবি আদায়ে আন্দোলনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নীতিনির্ধারকরা। সরকার নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিলেও নতুন ছকে আন্দোলনের কথা বলছেন নেতারা। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর (আজ) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের অপেক্ষায় বিএনপি। এই সময়ে সরকারের ‘ফাঁদে’ পড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেদিকে কড়া নজর রাখছেন বিএনপির নেতারা। কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করছেন তারা। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ নতুন ছকে কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর একাধিক নেতা বলেন, সরকারের পতন নিশ্চিতে ঐক্য অটুট রাখতে কৌশলী বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। চলমান আন্দোলনে সফলতায় সরকারবিরোধী সব দল এক মঞ্চে ওঠার সময় এসেছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে শিগগিরই এক লক্ষ্যে, একই স্লোগানে, এক মঞ্চে আন্দোলন করার কথা ভাবছেন তারা। এতে আন্দোলন আরও জোরালো হবে বলেও মনে করছেন দল ও জোটগুলোর শীর্ষনেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, সরকারের পতন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আরও বেশি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আন্দোলনে ভিন্নতা আসবে। দেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। পতন অনিবার্য। তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ও নির্বাচনের বাইরে থাকা বাম-ডান ও ইসলামি দলগুলো আজ ঐক্যবদ্ধ। সবাই সরকারের পতন চায়। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই জনবান্ধব নয়। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। পরাধীন কমিশনকে দেশের মানুষ বয়কট করবে। একতরফা নির্বাচনকে বয়কট করবে।

এদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, গণগ্রেফতার, হয়রানি আর দ্রব্যমূল্যের ইস্যু কাজে লাগাতে চাইছে বিএনপি। হরতাল অবরোধ কর্মসূচির বিরতিতে বিভিন্ন পেশাজীবী, নারী সংগঠনসহ গুম-খুন ও কারা নির্যাতিত পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যানারে মাঠে সক্রিয় থাকতে চাইছেন দলটি নেতাকর্মীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাজা ও কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের ‘রাজবন্দি স্বজন’ কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। এর আগে শাহবাগেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম