বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় জোর ভারতের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেছে উভয় পক্ষ। বৈঠকে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানিবণ্টন, বাণিজ্য বাধা দূর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাধাহীন সরবরাহের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছে। শুক্রবার নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউজে ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই বেঠকের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।
বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসাবে অভিহিত করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সাউথ এবং জি-২০ এর ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।
আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব তিস্তা চুক্তি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্য থেকে বাণিজ্য বাধা দূর, দুই দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি দুই দেশের জনগণের মধ্যে ‘পিপল টু পিপল’ যোগাযোগ আরও গভীর ও প্রসারিত করার অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহায়তা চান তিনি।
উভয় পররাষ্ট্র সচিব বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ২০২৩ সালে এর অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘এ ধরনের সহযোগিতা শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাস্তব ফলাফলকে প্রতিফলিত করে।’
দুই পররাষ্ট্র সচিব উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক সংযোগ, আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড সংযোগ, নিরাপত্তা ও পানিসংক্রান্ত সমস্যা, কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ পুনর্ব্যক্ত করে যে, একটি শান্তিপূর্ণ সীমান্তের জন্য দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা উচিত।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতের ‘জি২০ প্রেসিডেন্সি’র অধীনে একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার নেতা হিসাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জি-২০ লিডারস সামিটে’ যোগদানের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে ভারতের মিনিস্ট্রি অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ওয়েবসাইটে এফওসি’র বৈঠকের কথা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারা পর্যালোচনা করার জন্য দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ এটি। সীমান্ত ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনগণের মধ্যে জনগণের সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক বিষয়েও মতবিনিময় করেছে। আর পরবর্তী এফওসি বৈঠক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।