লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে জেলায় জেলায় নির্বাচন কমিশনারদের সফর
কাজী জেবেল
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবার মাঠ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সরাসরি বার্তা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণা চলাবস্থায় আচরণ বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ দেখতে চান তারা।
প্রচারণায় সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে। ভোটে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকার বিষয়টি দৃশ্যমান করারও নির্দেশনা দিচ্ছেন কমিশনাররা। জেলায় জেলায় গিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে এমনই বার্তা দিচ্ছেন। ওইসব বৈঠকে ইউএনও এবং ওসিদেরও রাখা হচ্ছে। ২২ নভেম্বর এ সফর শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। আরও জানা যায়, সব জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেলা প্রধান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনাররা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলোর জেলায় জেলায় গিয়ে এসব বৈঠক করবেন।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ নভেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশনাররা সফর শুরু করেছেন। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন। ২৮ নভেম্বরের মধ্যে ৫০টির বেশি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময়সূচিও নির্ধারণ করেছে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করাই আমাদের লক্ষ্য। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হয়েছে, প্রার্থীদের সবাই যাতে বাধাহীনভাবে প্রচার চালাতে পারে, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠনের পর নির্বাচন তদারকির সুবিধার্থে অঞ্চলভিত্তিক মনিটরিং করার দায়িত্ব কমিশনাররা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর অঞ্চল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান মনিটরিং করেন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এই অঞ্চলভিত্তিকভাবে মনিটরিং করছেন নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য এ সভা করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে একটি সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।
এ কমিশনার আজ রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট এবং ২৭ নভেম্বর বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নওগাঁর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। পরের দিন ২৮ নভেম্বর রাজশাহীর শিল্পকলা একাডেমিতে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২৫ নভেম্বর ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা; ২৬ নভেম্বর বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা এবং ২৭ নভেম্বর যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ২২ নভেম্বর কুমিল্লা সার্কিট হাউজে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিন নোয়াখালী সার্কিট হাউজে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার সিলেট ও সুনামগঞ্জ; আজ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এবং ২৮ নভেম্বর কক্সবাজার ও বান্দরবান সফর করবেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ২৬-২৮ নভেম্বর গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা সফর করে ওইসব জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।