Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রংপুর-রাজশাহীর ৭২ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত

বিতর্কিত এমপিরা বাদ, তালিকায় নতুন মুখ

রাজনীতিবিদদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করা হয়নি * তিনশ আসনের প্রার্থী চূড়ান্তের পর শনিবার নাম ঘোষণা

Icon

হাসিবুল হাসান

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিতর্কিত এমপিরা বাদ, তালিকায় নতুন মুখ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। দলীয় মনোনয়নে রাজনীতিবিদদেরই প্রাধান্য দিয়েছে ক্ষমতাসনীরা। বাদ পড়েছেন বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন বেশ কয়েকজন বর্তমান এমপি। তাদের জায়গায় স্থান পেয়েছে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এবং জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা নতুন মুখ। 

বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তবে সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করবে না আওয়ামী লীগ। তিনশ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করা হবে। তখনই জানা যাবে আসন্ন নির্বাচনে কারা নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নামবেন। এরপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জোট বা শরিকদের জন্য কতটি এবং কোন কোন আসন ছাড়া হবে।

মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রথম দিনের বৈঠকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করব না, একসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা ঘোষণা করব। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর মধ্যে রাজনীতির বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমানের সংসদ-সদস্য কতজন বাদ পড়েছেন এ মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। তবে বাদ পড়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ২৫ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী-জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহী প্রার্থী হন, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান। জোট হবে বিভিন্নভাবে। কার সঙ্গে কার জোট হবে, কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় তো আছে। আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না-এমন জোটও হতে পারে। কিন্তু কার সঙ্গে কার জোট হয়, কেউ বলতে পারছে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা শুরু হয়। চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, রাশিদুল আলম, রমেশ চন্দ্র সেন ও ডা. দীপু মনি। এছাড়া দাপ্তরিক কাজের জন্য উপস্থিত ছিলেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকায় হুইলচেয়ারে সভায় যোগ দেন তোফায়েল আহমেদ। 

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের ১ নম্বর আসন ধরে মনোনয়ন বাছাই শুরু করে আওয়ামী লীগ। সে হিসাবে প্রথমেই পঞ্চগড়-১ সংসদীয় আসনের প্রার্থী। এরপর একে একে রংপুর বিভাগের বাকি সংসদীয় আসন এবং পরে রাজশাহী বিভাগের আসনগুলোর জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে দলটি। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ৩৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এই বিভাগে এবার মোট ৩০২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছিল দলটি। রাজশাহী বিভাগে মোট ৩৯টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এ বিভাগে এবার সরাসরি ৪০৯টি ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। গড়ে প্রতি আসনে ফরম বিক্রি হয়েছে ১০টির বেশি।

এদিকে চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীর নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করলেও মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সংস্থার জরিপ এবং দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া দেখে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অধিক জনপ্রিয়তা, দলে গ্রহণযোগ্যতা, দুর্দিনে মানুষের পাশে থাকা এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীদের নৌকার মাঝি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে সাধারণ ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পারবেন-এমন নেতাদের এবার নৌকার প্রার্থী বিবেচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে বাদ পড়ছেন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও বিতর্কিত এমপিরা। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে সাধারণ ভোটারের যোগাযোগ কম-এমন বর্তমান সংসদ-সদস্যদের আর বিবেচনা করা হয়নি। এছাড়া দলের অভ্যন্তরে গ্রুপিং বা আলাদা বলয় তৈরি করেছেন, দলের গ্রহণযোগ্যতা নেই-এবার তাদের কপাল পুড়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনশ আসনেই দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এরপর সমঝোতা হলে শরিক দলগুলোকে কিছু আসন ছেড়ে দিয়ে ওইসব আসনের দলের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কটি আসন শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জোট ও শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

প্রথম দিন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের পর বৈঠকটি আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। আজ ফের বসে বাকি বিভাগগুলোর দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। এখনো বাকি থাকা বিভাগগুলো হচ্ছে খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে সংসদীয় আসন ৩৬টি। এখানে ফরম বিক্রি করেছে ৪১৬টি। বরিশাল বিভাগে ২১টি আসনের বিপরীতে ফরম বিক্রি হয়েছে ২৫৮টি। ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪টি আসনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ২৯৫টি। ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের জন্য ৭৩০টি ফরম বিক্রি হয়েছে। সিলেট বিভাগে ১৯টি আসনের বিপরীতে ১৭২টি ফরম বিক্রি হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮টি আসনে মনোনয়ন পেতে ফরম কিনেছেন ৬৫৯ জন। 

এদিকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তো বটেই, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাসহ সাধারণ কর্মীদের দৃষ্টি এখন দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের দিকে। কোন আসনে কে হতে যাচ্ছেন নৌকার কান্ডারি? নতুন মুখ কারা আসছেন আর কারা ছিটকে পড়ছেন দলীয় প্রার্থী তালিকা থেকে? কোন আসন শরিক দলের প্রার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হবে? এমন অনেক প্রশ্ন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তফশিল অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। 

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর; বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগে-রংপুর-১ ও ৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম-২ ও ৪, লালমনিরহাট-৩, গাইবান্ধা-১, ঠাকুরগাঁও-৩ এবং রাজশাহী বিভাগে-বগুড়া-২, ৩, ৪, ৬ ও ৭ এবং রাজশাহী-২ আসনে জোট ও শরিকদের ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম