কিছু ভুল হতে পারে, আমরা তো ফেরেশতা নই: ড. ইউনূস
আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তৃতীয় শ্রম আদালতের জেলা ও দায়রা জজ শেখ মেরিনা সুলতানার এজলাসে এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে ড. ইউনূসসহ বাকি তিন বিবাদী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। ইউনূসসহ চার আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের জবানবন্দিতে বলা হয়, নিঃস্বার্থ মানুষটিকে (ড. ইউনূস) মিথ্যা অভিযোগে আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
দুপুর ১টার কিছু পর শুনানি শুরু হয়। এজলাস কক্ষে ড. ইউনূসসহ অন্য তিন আসামি কাঠগড়ায় দাঁড়ান। দুপুর সোয়া ১টার দিকে শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক চার বিবাদীকে বেঞ্চে বসে শুনানি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন। পরবর্তী শুনানির জন্য ১৬ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত। এ মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ও খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসসহ চার বিবাদীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ।
আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি কোনো ‘অপরাধ করেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমি নির্দোষ। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়।
শুনানিতে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। শুনানিতে তিনি দাবি করেন-শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদনে বলা হয়, কোম্পানি আইনে রেজিস্ট্রিকৃত গ্রামীণ টেলিকম ‘নট ফর প্রফিট’ কোম্পানি। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়। এ লভ্যাংশের অর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। এ কারণে কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের কোনো মালিকানা বা শেয়ারহোল্ডার নেই। বিবাদীদের কেউই শেয়ারহোল্ডার নন। এছাড়া বিবাদীরা শুধু সম্মানজনক পদে থেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সহায়তা করছেন।
এটি ছাড়া কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মুনাফা প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি দাবি করেন-সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপূর্ণ। অভিযোগ অস্বীকার করে বাদীর দায়ের করা মামলা ক্ষতিপূরণসহ খারিজ করার জন্যও তিনি আদালতে আবেদন করেন।
২২ আগস্ট ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন সাক্ষ্য দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। এর আগে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের আবেদন করেন ড. ইউনূস।
হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করার পর আপিল বিভাগেও তা বহাল রাখেন। ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।