Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা

বিএনপিকে ধরেই ভোটের প্রস্তুতির নির্দেশ শেখ হাসিনার

Icon

হাসিবুল হাসান 

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপিকে ধরেই ভোটের প্রস্তুতির নির্দেশ শেখ হাসিনার

গণভবনে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -যুগান্তর

বিএনপি অংশ নেবে ধরেই নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ নির্দেশনা দেন। 

সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় এক সাংগঠনিক সম্পাদক ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না’-এমন বক্তব্য দিলে তাকে থামিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। মনোনয়ন বাণিজ্য করে তারেক রহমান টাকা কামানোর সুযোগ নষ্ট করবে না। আর তারা নির্বাচনে এসে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করবে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে হবে। 

একই সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত ও বানচাল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখবে-মন্তব্য করে এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনকে সামনে রেখে চালানো জরিপের বিষয়টি আবারও স্মরণ করিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে, যারা ভোটার বৃদ্ধি করতে পারবে এমন প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১০টি এজেন্ডা নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় সভা শুরু হয়। শুরুতেই সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, অগ্নিসন্ত্রাস, তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার আলোচনা। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় চার সাংগঠনিক সম্পাদক নিজ নিজ বিভাগীয় সাংগঠনিক প্রতিবেদন দাখিল করেন। নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাজাহান খান, আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, বিপুল ঘোষ প্রমুখ।

সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন জেলায় নাশকতা, দলীয় সমস্যা, নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিটি ভাঙা ও গঠন করা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করেন। বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতার প্রসঙ্গ তোলেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সফুরা বেগম। তিনি নিজ এলাকা লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের নানা তথ্য তুলে ধরেন। 

বিএনপির হামলায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন নেতার মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে সফুরা বেগম বলেন, দুলু আবার সেই চার দলের আমলের মতো সন্ত্রাস শুরু করেছে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেসব এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস করবে, নাশকতা করবে, গাড়িতে আগুন দেবে সেই এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে রাখবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। দলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর বিএনপি আরও বেশি ঝামেলা করার চেষ্টা করবে। 

নির্বাচনের পরেও তারা এগুলো অব্যাহত রাখবে। ফলে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তাদের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিতে হবে। সভায় দলের নেতাদের বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে অশোভন কোনো মন্তব্য না করতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক নেতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সে বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। 

সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে। কমিটির চেয়ারম্যান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে কো-চেয়ারম্যান হিসাবে এইচটি ইমামের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই পদে দায়িত্ব দিতে নেতারা শেখ হাসিনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হন। একই সঙ্গে প্রচার, দপ্তর, অর্থ ও আইনসহ ১৪টি উপকমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন নেতারা।

সভায় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরদিনই আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য দশটি বুথ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য দুটি করে, অন্য বিভাগের জন্য একটি করে বুথে মনোনয়নপত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। মনোনয়নপত্রের মূল্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া এবারই প্রথম সশরীরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি অনলাইন থেকেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে। 

আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব : এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আগুন সন্ত্রাস করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন শান্তি ও স্বস্তিতে আছে, তখন বিএনপি আবার রাস্তায় নেমেছে অগ্নিসন্ত্রাস নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে। এ অশান্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। 

অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে নেই। বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই তারা হরতাল ও অবরোধের নামে আগুন সন্ত্রাস ও লুটপাট করছে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে পোশাক খাতকেও অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের আমরা গ্রেফতার করব না তো কী করব? যারা এভাবে মানুষ মারবে, অগ্নিসন্ত্রাস করবে, মানুষকে নির্যাতন করবে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ জানমাল রক্ষা করা এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সরকারে আছি, এটা আমাদের কর্তব্য।

৭০ শতাংশ মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখে : আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায়, সাধারণত ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যায় অথবা জনপ্রিয়তা কমে। আওয়ামী লীগের কিন্তু জনপ্রিয়তা কমেনি। ৭০ শতাংশ মানুষ আমাদের ওপর নির্ভরতা (আস্থা) রাখে।

যেটা বাড়ানো হয়েছে, সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গার্মেন্ট শ্রমিকদের বলব, যেটা বাড়ানো হয়েছে, সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। তারা কাজ করুক। তিনি বলেন, যখনই সময় আসে তাদের সব রকম সুবিধা আমরা করে দিই। কিন্তু তারা যদি সেটা না করে, কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নামে, যারা তাদের উসকানি দিচ্ছে, তারাই তাদের (শ্রমিকদের) লাশ ফেলবে। তারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যে, তারা চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে, গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে। সূচনা বক্তব্যের পরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। সভা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি জানান, মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু আলাপ-আলোচনা এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। ১৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। 

নির্বাচন ভন্ডুলের চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে হবে : ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন ভন্ডুল করার যে চক্রান্ত এখন চলছে এটা আমাদের যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং এদের পরাজিত করতে হবে। এটা একটা নির্দেশনা আছে। তিনি বলেন, আমাদের সভাপতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন আজকে যে বিএনপির নেতৃত্বে যে অগ্নিসংযোগ, অগ্নিসন্ত্রাস, বাস পরিবহণে আগুন এসব নাশকতা চলছে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম