Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

‘বিশ্ব দেখে যাও, নিহতরা সবাই নিষ্পাপ শিশু’

গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত -জাতিসংঘ * বৈশ্বিক সতর্কতা জারি যুক্তরাষ্ট্রের

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘বিশ্ব দেখে যাও, নিহতরা সবাই নিষ্পাপ শিশু’

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ইহুদিরা। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাভিনিউতে -এএফপি

মুক্ত বিশ্ব, তোমরা সবাই কোথায়? দেখে যাও, এখানে যারা নিহত হয়েছে, তারা সবাই নিষ্পাপ শিশু। যুদ্ধ আর ঘৃণার তীব্রতা বোঝার আগেই তারা ঝরে গেছে পৃথিবী থেকে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলের বিমান হামলায় অবুঝ শিশুদের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার নিজের আবেগকে সামলাতে না পেরে এভাবেই হাসপাতালের পরিচালক ইউসেফ আল আক্কাস নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৭৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন এ লড়াইয়ে ইসরাইল একা নয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বৃহস্পতিবার ইসরাইলে গিয়ে এ লড়াইয়ে একাত্মতার ঘোষণা দিয়েছেন। 

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁরও ইসরাইল সফরের কথা রয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে পশ্চিমা নেতারা ইসরাইল সফর করলেও কেউ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন না। বরং তারা ইসরাইলের সঙ্গে ঐক্য জানিয়ে এ সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছেন। তবে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় জনগণ। 

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বুধবার (স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের (ক্যাপিটল হিল) সামনে নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লে সেখান থেকে ৩০০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবশেষে গাজার মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয়েছে মিসর। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, স্কাই নিউজ, রয়টার্স ও এএফপি।

অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলার ১৩তম দিনেও শত শত লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। রাতভর এ বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার সকালে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমান হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। 
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কিদরা জানিয়েছেন, নিহতের মধ্যে ১৫২৪টি শিশু এবং ১০০০ নারী রয়েছেন। ফিলিস্তিনের একটি এনজিও জানিয়েছে, ইসরাইলের বোমা হামলায় প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে ১০০টির বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে সেখানে শিশুরা কতটা ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।

এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় খাবার পানিও শেষ হয়ে গেছে। নিরাপদ পানির অভাব গাজার বাসিন্দাদের জন্য জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ পরিস্থিতিতে সেখানে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আহত হয়েছেন ১২ হাজারের বেশি মানুষ। পশ্চিম তীরে আহতের সংখ্যা ১৩০০-এর বেশি। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পশ্চিম তীর থেকে হামাসের ৬৩ সদস্যসহ ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এপির খবরে বলা হয়েছে, আগে থেকেই আল শিফা হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। সেখানে সামান্য জায়গাও অবশিষ্ট নেই। আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া বলেন, আহতদের হাসপাতালের মেঝেতে রাখা হয়েছে। রক্তাক্ত মেঝেতে অবশ করা ছাড়াই রোগীদের অপারেশন করতে হচ্ছে। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

আবু সেলমিয়া বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রপাতি দরকার, ওষুধ দরকার, বিছানা দরকার, অ্যানেস্থেশিয়া দরকার, আমাদের সবকিছু দরকার। হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানিও একেবারে শেষের দিকে।’ 

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে ১৪টি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আর ইসরাইলের বোমার কারণে পাঁচটি হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না নিতে পেরে তারাও এখন হতাশ হয়ে পড়ছেন। মানুষ পানি, খাবার পাচ্ছে না। চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমনকি মৃত্যুর পর লাশ রাখার বডি ব্যাগও ফুরিয়ে গেছে। 

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে অধিকৃত গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ মানবিক তথ্য অনুসারে, এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৫২ হাজার মানুষ মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় চাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ইসরাইল সফরকারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইসরাইলের প্রতি ব্রিটেনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেও তিনি যুদ্ধবিরতির কোনো আভাস দেননি। নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আমরা চাই আপনি জয়ী হোন। 

নেতানিয়াহু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ টেনে সুনাককে উদ্দেশ করে বলেন, ৮০ বছর আগে আপনাদের দুঃসময়ে বিশ্ব পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এখন আমাদের দুঃসময়। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা আমাদের কাছে এত মূল্যবান। তিনি বলেন, ব্রিটেন ৮০ বছর আগে নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও হামাস হচ্ছে নতুন নাৎসি। ইসরাইল সফর শেষে ঋষি সুনাকের সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। 

মিসরের সিনাই উপদ্বীপ থেকে মানবিক সহায়তা বহনকারী প্রায় ২০টি ট্রাক গাজায় শুক্রবার পৌঁছাতে পারে। জো বাইডেনের ইসরাইল সফরের পর এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। বাইডেন বলেছেন, আমি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসির সঙ্গে কথা বলেছি। রাফাহ স্থলবন্দর পুনরায় চালু করতে তিনি রাজি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ত্রাণের এ চালানই শেষ নয়। 

আরও ১৫০ ট্রাক অপেক্ষা করছে। হামাস ঝামেলা করলে এগুলো যাবে না। তবে গাজার ১০ লাখ উদ্বাস্তুর জন্য এ ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। 
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে। এ ভাষণে তিনি ইসরাইলে হামাসের হামলার জবাব এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার নিষ্ঠুর যুদ্ধের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন বলে তার মুখপাত্র ক্যারিন জিন পিয়েরে জানিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো : ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ব্রাজিল। নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

সংঘাতের জন্য দায়ী নেতানিয়াহু : ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংঘাতের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট। সম্প্রতি ভারতের এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিযোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে কূটনৈতিক সমাধান বাতিলের আশঙ্কাও করেন ইহুদ ওলমার্ট।

হাসপাতালে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরাইলের পতনের সূচনা : গাজার হাসপাতালে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরাইলি সাম্রাজ্য পতনের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। বুধবার তেহরানে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানাতে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে দেওয়া ভাষণে রাইসি মুসলিম বিশ্বের প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ইহুদি বাহিনীর অপরাধের সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইব্রাহিম রাইসি বলেন, হামাসের যোদ্ধারা রকেট নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা, নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তির পতন ঘটিয়েছে। তিনি গাজাবাসীর ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার ও অবিলম্বে মানবিক সহায়তা সরবরাহের দাবিও জানান।

বৈশ্বিক সতর্কতা জারি যুক্তরাষ্ট্রের : ইসরাইল যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য বৈশ্বিক সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই সতর্কতা জারি করা হয়। এতে বিশ্বের সব দেশে মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম