Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরকে নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান

নারী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলে তোপের মুখে আছি

বালুখেকোদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে যুদ্ধে নামার বিকল্প নেই * শুধু বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি তা নয়; এদের মদদদাতা, উপকারভোগী ও শেল্টারদাতার বিরুদ্ধেও এই যুদ্ধ

Icon

তোহুর আহমদ

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নারী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলে তোপের মুখে আছি

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, একজন নারী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি এখন তোপের মুখে আছেন। তাকে বিভিন্ন হুমকিধমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এতে তিনি ভীত নন। রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করে যেতে চান। বালুখেকোদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে যুদ্ধে নামার বিকল্প নেই। এ যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী তার পাশে আছেন।

সোমবার পল্টনের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বালু সন্ত্রাসী ও তাদের শেল্টারদাতাদের নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বালুখেকোদের মোকাবিলা করছি। এমন না যে আমরা যুদ্ধ করব বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি। রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে থেকে কথা বলছি আমরা। শুধু যে বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি তা নয়। এদের যারা মদদদাতা, উপকারভোগী, শেল্টারদাতা; তাদের সবার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ।’

বালু সন্ত্রাসীদের হাত অনেক লম্বা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এনজিও, রাজনীতি ও প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোক আছে। এমনকি গণমাধ্যমেও। এদের সবাই মিলে একটা চক্র। কারণ, বালু ব্যবসায় মুনাফা ব্যাপক। বলা যায়, কাঁচা টাকার খেলা। এমন একটা চক্রের বিরুদ্ধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একা যুদ্ধ করে যাচ্ছে। নিঃসঙ্গ শেরপার মতো।

এক্ষেত্রে বাধা আসছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার গাড়িতে হামলা হয়েছে। এ ঘটনা মাত্র মাসখানেক আগের।’ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরার সময় রাত ১২টার দিকে রাস্তায় তার গাড়িতে হামলা হয়। এরপর বেশ কিছুদিন তাকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হয়েছে।

ক্ষমতাধর বালু সন্ত্রসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা কমিশনের আছে কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘না, নেই। আগে যতটুকু সক্ষমতা ছিল, তাও কমানো হয়েছে। আমাদের হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। তবে আমাদের অপেক্ষা করে থাকলে তো চলবে না। যুদ্ধ করতেই হবে।’

সরকারের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদীর ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। আসলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এখন যতটুকু কাজই করতে পারছে, তা প্রধানমন্ত্রীর সজাগ দৃষ্টির কারণে। এছাড়া উচ্চ আদালতের রায় আমাদের পক্ষে আছে। এর বাইরে আমাদের আর কোনো বন্ধু নেই।’

কথা বলার এক ফাঁকে তিনি কম্পিউটার থেকে বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ চালু করেন। এতে দেখা যায়, পদ্মা ব্রিজের নিচে বালু তোলার মহোৎসব চলছে। শত শত বাল্কহেড ভরে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। চেয়ারম্যান বলেন, এভাবে বালু তোলা হলে ব্রিজ কি থাকবে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ নাকি বলেছেন, ৪০ ফুট তুললে অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কারণে একটা পিলার যদি একটু এদিক-সেদিক হয়ে যায়, তখন কী হবে বলেন।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, গভীর ড্রেজিং বা অন্য কারণে হয়তো পদ্মা সেতুর নিচে মূল্যবান বালু পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু সন্ত্রাসীরা। তারা গভীর রাতে বেরিয়ে পড়ে। খুব ভোরে কেউ কিছু জানার আগে কাজ শুরু করে দেয় তারা। নদীর মাঝখানে গিয়ে আমরা তাদের হাতেনাতে ধরেছি। কয়েকজনকে পুলিশেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

বালু ব্যবসায় প্রভাবশালীদের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, মানিকগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখি সেখানে এ কাজের (বালু উত্তোলন) পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীরাই। অন্য জায়গায়ও একই অবস্থা। কারণ, বালু ব্যবসায় ব্যাপক মুনাফা। বলা যায়, কাঁচা টাকার খেলা। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বালু ব্যবসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলছে কমিশন।

নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করি, বাস্তব অবস্থার কারণেই নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এতে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। তবে বালু তুলতে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে। ঢালাওভাবে নদী হত্যা করে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে বালু-সন্ত্রাস চলতে দেওয়া যাবে না।

বালু সন্ত্রাসী বা গডফাদারদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, দেখুন, কমিশন তো ডিবি (গোয়েন্দা কার্যালয়) অফিস নয়। কমিশন কীভাবে তালিকা করবে। কারণ, এজন্য সংশ্লিষ্ট লোকজনের নাম-ঠিকানা লাগে। এজন্য বিশেষায়িত বিভাগ আছে। যেমন: সরকারের বিশেষ সংস্থা, নৌপুলিশ এবং জেলা প্রশাসক আছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এটা (তালিকা) করা।

বালু সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত-এমন মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। তাদের কমপক্ষে ৫/১০ বছরের জেল হওয়া উচিত। কারণ, তারা নদনদীর শত্রু। তারা আইন ভঙ্গকারী। প্রাণ-প্রকৃতি ও জলজ পরিবেশ তথা দেশের শত্রু তারা।

শুধু বালুখেকোদের কারণে আজ দেশের জীববৈচিত্র্য প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশের নদনদীগুলোয় একসময় প্রচুর শুশুক বা ডলফিন দেখা যেত। কিন্তু এখন কি আপনারা দেখতে পান? এখন বিলুপ্তপ্রায় কিছু ডলফিন রয়েছে শুধু সাগরে। এছাড়া বালু উত্তোলনের কারণে ইলিশসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছের প্রজনন কমছে। নদীতে মিলছে না মাছ।

কমিশনের দুর্বলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি জনবলের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হলেও যানবাহন ও অর্থের ঘাটতি আছে। আধুনিক প্রযুক্তির নৌযান, কাজের অবাধ স্বাধীনতা, প্রশিক্ষণ, অর্থ এবং প্রকল্প-এগুলো খুব দরকার। বিশেষ করে ‘রিমোট সেনসিং’ প্রযুক্তি আমাদের একান্ত দরকার। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব কোথায় নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা যে বঙ্গবন্ধু রিভার রিসোর্স সেন্টার করেছি, সেখানে দেশের সব নদনদী, জলাশয়ের তথ্যভান্ডার করতে চাই। এসব তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে অনলাইন এবং অফলাইনে সহজলভ্য করা দরকার।

প্রসঙ্গত, রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারমান বলেছেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের সহায়তা করেছেন চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রী। তার এ বক্তব্য ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারি দলের নেতা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে এ নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম