Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিসোমিয়া সইয়ের প্রক্রিয়া জোরদার

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিসোমিয়া সইয়ের প্রক্রিয়া জোরদার

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিসোমিয়া নামের নিরাপত্তা চুক্তি সই করার প্রক্রিয়া জোরদার করেছে বাংলাদেশ। দুই দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত স্পর্শকাতর (ক্লাসিফাইড) তথ্য যাতে গোপনীয় থাকে সেই গ্যারান্টির লক্ষ্যে এই চুক্তির প্রস্তাব আগেই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তির বিভিন্ন বিষয় আলোচনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ফিরতি সফরে আসবে। তবে চুক্তির প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ তাই বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই চুক্তি সই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশের সঙ্গে ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট’ (জিসোমিয়া) সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব ক্রয় প্রস্তাবের তথ্যের প্রযুক্তিগত বিভিন্ন দিক খুবই স্পর্শকাতর। যদিও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখনো কোনো সমরাস্ত্র কিংবা সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ওয়াশিংটন আশা করে, বাংলাদেশের ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নে অনেক আধুনিক সামরিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। যুক্তরাষ্ট্র এসব সরবরাহে আগ্রহী। বাংলাদেশ সাধারণত চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে থাকে। চীন থেকে ক্রয়ের অন্যতম প্রধান কারণ দেশটি তুলনামূলক কম দামসহ সহজ শর্তে সরঞ্জাম সরবরাহ করে। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে কোনো কৌশলগত দিক নেই। বরং সাবমেরিনসহ অনেক সামরিক সরঞ্জাম অন্য কোনো দেশ এত কম দামে বাংলাদেশে বিক্রি করতে আগ্রহ দেখায়নি। তাই চীন থেকে ক্রয় করতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে পারবে বলে আশাবাদী। বাংলাদেশও শুধু চীন নির্ভর না থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বহুমুখী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র লবি খুবই শক্তিশালী। এই লবিটি বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির জন্য তার দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ সরকারের কোনো কোনো মহল মনে করে, শেখ হাসিনা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তির জন্য চাপ দিতেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের হাতিয়ার ব্যবহার করে বাইডেন প্রশাসন। নির্বাচনের আগে চাপ আরও বাড়তে পারে।

জিসোমিয়া চুক্তি সই করার জন্যে পাঁচ ধাপের প্রক্রিয়া রয়েছে। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে তৃতীয় ধাপের কাজ করছে। তৃতীয় ধাপে আইনকানুনে সামঞ্জস্য সৃষ্টির কাজ চলছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আইনের ইংরেজি পরিভাষা সৃষ্টি করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব সম্পন্ন হলে সার্বিক মূল্যায়নসহ আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং এবং সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আরও অনেক সময়ের প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের শুরুতে জিসোমিয়া চুক্তির খসড়া বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ঢাকায় সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নবম নিরাপত্তা সংলাপে প্রস্তাবিত জিসোমিয়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে ওয়াশিংটন এখন ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রক্ষায় মনযোগ দিচ্ছে। জানতে চাইলে সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জিসোমিয়া চুক্তি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশও যদি এই চুক্তি করে তবে তা ইতিবাচক। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নেই। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চীনকেন্দ্রিক। জিসোমিয়া চুক্তি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটা শুধু সামরিক নয়; বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্যও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অনেক দিন ধরেই সহযোগিতা বিদ্যমান। দুদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যৌথ অনুশীলন সম্পন্ন হয়েছে। সমুদ্রসীমার নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে টহল জাহাজ দিয়ে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের উপকূলীয় সীমান্তের নিরাপত্তা, নিরাপদ সাইবার স্পেস, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস দমন, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তায় আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রয়োজন বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। জিসোমিয়া চুক্তির ব্যাপারে প্রযুক্তিগত গোপনীয়তার দিকেই অধিক জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) নামের আরও একটি চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আকসা ও জিসোমিয়া কারিগরি চুক্তি। এগুলো কোনো সামরিক চুক্তি নয়। সামরিক জোট গঠনের চুক্তিও নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম