Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ম্যাক্রোঁ-রাহুল আনন্দ আড্ডা

একতারা বাজালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একতারা বাজালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার বাংলাদেশ সফরে অন্যরকম সময় কাটালেন গানের দল জলের গানের সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের সঙ্গে তার বাসা ও স্টুডিওতে। এ সময় তারা একে অপরকে উপহার দেন। রাহুল আনন্দ ম্যাক্রোঁকে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র একতারা উপহার দেন। তিনি রাহুলের সঙ্গে একতারা বাজানও কিছুক্ষণ। রাহুল তাকে একতারা কিভাবে বাজাতে হয় সেটাও দেখিয়ে দেন। 

অন্যদিকে ম্যাক্রোঁ উপহার হিসেবে রাহুল আনন্দের হাতে তুলে দেন কলম। এই সময় ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসের কর্মকর্তা, সংগীতশিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারা। উপস্থিত ছিলেন রাহুলের স্ত্রী চিত্রশিল্পী ঊর্মিলা শুক্লা এবং তাদের ছেলে তোতা। এই সময় তোতা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অটোগ্রাফ চাইলে তোতাকে অটোগ্রাফ দিয়ে আলাদা করে ছবিও তোলেন ম্যাক্রোঁ।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এদিন রাত ১১টার মধ্যেই তিনি জলের গানের শিল্পী রাহুল আনন্দের বাসায় ধানমণ্ডি ৩২-এ যান। এই বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক বাড়ি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন একসময়। এই বাড়িতেই বর্তমানে বসবাস করছেন রাহুল আনন্দ। সেখানেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আনন্দ আড্ডা জমে। গিটারিস্ট ম্যাক্রোঁ রাহুলের গানে আড্ডায় এতটাই মুগ্ধ হন যে, সেখানে ৪০ মিনিট অবস্থান করার কথা থাকলেও প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করেন। 

ম্যাক্রোঁ রাহুল আনন্দের স্টুডিও ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র হাতে তুলে নেন। রাহুলের গলায় শোনেন বাংলাদেশের গান। রাহুল আনন্দ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে ‘নাইয়া রে নাওয়ের বাদাম তুইলা’, ‘আমি বাংলায় গান গাই’সহ কয়েকটি গান শোনান। পাশাপাশি গানগুলোর মর্মবাণী ইংরেজিতে বুঝিয়ে দেন।

রাহুল আনন্দ বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট গানের মানুষ, তিনি গিটারিস্ট। সংগীতই আমাদের দুই ভুবনের দুজন মানুষকে একসঙ্গে করেছে। গান নিয়ে আমার যে জগত, সেটি দেখতে এসেছিলেন, আমি গর্ব অনুভব করেছি। তাকে বাংলাদেশের মাটির গান ও সুর শুনিয়েছি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জলের গানের রাহুল আনন্দকে একটি কলম উপহার দেন। রাহুল বলেন, তিনি আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, আমি যেন এই কলম দিয়ে গান ও কবিতা লিখি। লিখি প্রকৃতি ও প্রাণের কথা। একদিন তিনি সেই গান শুনবেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট রাহুল আনন্দের কাছে তার স্বপ্ন কী জানতে চান। এই সময় রাহুল উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, সবুজ পৃথিবী দেখতে চাই। তখন ম্যাক্রোঁ জানতে চান সে ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা কী? এবার রাহুল বলেন, আমি যেখানেই গান করি, সেখানেই গাছ লাগানো, নদী-প্রকৃতির যত্ন নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। 
১৯৯৪ সাল থেকে ফাঁকা জায়গায় আমি গাছ লাগাই, কিছু দিন আগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও গাছ লাগিয়েছি। আমি বাদ্যযন্ত্র বানাতে ভালোবাসি। বাদ্যযন্ত্র বানাতে কাঠ লাগে, কাঠের জন্য গাছ দরকার। আর আমি নিজেকে পাখি মনে করি। পাখির জন্য গাছ অপরিহার্য। আমি গাছ না লাগালে পরবর্তী সময় যন্ত্র বানানোর জন্য গাছ কোথায় পাবো? পাখিরা কোথায় থাকবে?

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাহুল আনন্দের বাসায় কফি পান করেন।

প্রসঙ্গত, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেখান থেকে রোববার ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেন।

পানসী নৌকায় ভ্রমণ করলেন ম্যাক্রোঁ : এদিকে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মিরপুরে তুরাগ ও সাভারের কর্ণাতলী নদীতে ঐতিহ্যবাহী পানসী নৌকায় ভ্রমণ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস ও সামাজিক সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ যৌথভাবে এই ভ্রমণের আয়োজন করে। 

মিরপুর বড় বাজার ইকোপার্ক ঘাট থেকে ম্যাঁক্রো এবং অন্যান্য সফরসঙ্গীকে নিয়ে তুরাগ নদে যাত্রা করে দ্য ফ্লেচেডি’অর নামে বৃহত্তম এ পানসী নৌকাটি। এরপর সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণাতলী নদীতে প্রবেশ করে পানসী নৌকা। সেখানে কিছু সময় কাটান তারা। উপভোগ করেন নদীমাতৃক বাংলাদেশকে।

ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এ পানসী নৌকা ভ্রমণে অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই, ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা-নির্বাহী পরিচালক রুনা খান এবং দু’দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

পানসী নৌকায় ভ্রমণের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে একটি রেস্টুরেন্ট দোকানি জিলাপি এগিয়ে দিলে তিনি সেটি গ্রহণ করেন। এক ভিডিওতে দেখা যায়, পানসী নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। নৌকাভ্রমণ শেষে তিনি তার নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে সেলফি ধারণ করেন।

আয়োজকরা জানান, নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের জীবন-জীবিকা এবং নদী তীরবর্তী গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের সম্মানে আয়োজন করা হয় এ নৌ-ভ্রমণ। প্রায় ৭২ ফুট দীর্ঘ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিশেষ এ পানসী নৌকা নির্মাণ করেছে ‘ফ্রেন্ডশিপ’। সর্বোচ্চ ৩০ জন ধারণক্ষমতার নৌকাটি বাংলাদেশের নদী অববাহিকার বিভিন্ন সংস্কৃতির ধারক-বাহক।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম