সর্বজনীন পেনশন স্কিম; সরকারি চাকরিজীবীরাও যুক্ত হচ্ছেন
প্রথম দিনে ব্যাপক উৎসাহ ও দুর্ভোগ, যুক্ত হয়েছেন সহস্রাধিক

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদেরও যুক্ত করা হবে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে’। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে আছেন, কিন্তু বয়স্ক-এমন ব্যক্তিকেও অন্তর্ভুক্তি করা হবে। এজন্য আরও দুটি পৃথক স্কিম চালু হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবার চারটি স্কিম নিয়ে যাত্রা শুরু করে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। নতুন দুটি চালু হলে এই কর্মসূচিতে মোট ছয়টি পেনশন স্কিম দাঁড়াবে।
এদিকে উদ্বোধনের প্রথম দিনে দেশব্যাপী সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছে বেসরকারি পর্যায়ের ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’। শুরুতে আগ্রহ নিয়ে অনেকে যুক্ত হয়েছেন এই কর্মসূচিতে। বিপরীতে দুর্ভোগের শিকার হওয়ার ঘটনাও কম নয়।
নতুন স্কিমে যুক্ত হতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে গ্রাহকদের ভুল করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সমাধানে অফিস সময়ে কিছুটা সহায়তা মিললেও বিকাল ৫টার পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হেল্পডেস্ক কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। ফলে সেখানে ফোন করেও সহায়তা না পেয়ে ফিরতে হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। দেশের ৮টি জেলা গোপালগঞ্জ, রংপুর, বাগেরহাট, রাঙামাটি, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ, বরগুনা এবং বৈদেশিক মিশনে (জেদ্দা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর) সংযুক্ত ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদার।
উদ্বোধনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ওয়েবসাইট ‘ইউপেনশন’ ব্যবহার করে অনেকে এই স্কিমে নিজেকে যুক্ত করে নেন। এটি বেসরকারি পর্যায়ে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী। যে কারণে প্রথম দিনেই দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে এ নিয়ে জল্পনা, আলোচনা ও পরামর্শ চলেছে। জানা যায়, প্রথম দিনে সহস্রাধিক লোক এতে যুক্ত হয়েছেন।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার মতো অভ্যাস গড়ে উঠতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এরপর এটি খুবই সহজ মনে হবে। কারণ, অনলাইন ছাড়া ম্যানুয়ালিভাবে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এর মধ্যে কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তবে এই সাইট আরও আপডেট করা হবে।
সর্বজনীন পেনশনে বর্তমানে চারটি স্কিম রয়েছে। এর মধ্যে প্রগতি স্কিম হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য। এই স্কিমে যুক্ত হতে গিয়ে প্রথম দিনের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মী জোহায়ের ইবনে কলিম। তিনি জানান, ইউপেনশন ওয়েবসাইট ব্যবহারে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের পর আমাকে জানানো হয় আবেদন সফল হয়নি।
কিন্তু সে পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আমাকে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর ট্রানজেকশন আইডি নম্বর ‘৭২৪৪কিউ৪কে৭’। এই সমস্যা নিয়ে হেল্পডেস্কে যোগাযোগ করা হলে তারা এনআইডি নম্বর জানতে চায়। কিন্তু ৪টার পর এনআইডি নম্বর ও পেমেন্ট রসিদ দিয়ে তাদের ফোনে আর পাওয়া যায়নি। যুগান্তরের পক্ষ থেকে বিকাল ৫টার পর সর্বজনীন পেনশন স্কিম হেল্পডেস্কের নম্বর ‘০২-২২৩৩৫৫১৩৩’-এ একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
এদিকে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মী এরই মধ্যে যুক্ত হচ্ছেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে। একটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী জাহিদ জানান, উদ্বোধনের পরপরই তাদের প্রতিষ্ঠানের অনেকে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ঢাকার বাইরেও অনেকে যুক্ত হচ্ছেন এখানে। পেনশন স্কিমে টাকা পরিশোধ করা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
প্রথম দিনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন, বিষয়টি জানতে চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ-এর পাবলিক রিলেশন্স কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সজল যুগান্তরকে জানান, আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। তবে নগদের গেটওয়ে হচ্ছে সোনালী ব্যাংক। কতজন যুক্ত হচ্ছেন, নগদের মাধ্যমে এ হিসাবটি গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে। একই কথা জানানো হয় মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ থেকেও।
আইন অনুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় চারটি স্কিম থাকছে। প্রথম হচ্ছে প্রবাসী স্কিম, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। দ্বিতীয় হচ্ছে প্রগতি স্কিম, এটি বেসরকারি চাকরিজীবী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য। তৃতীয় হচ্ছে সুরক্ষা স্কিম, এখানে স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং চতুর্থ সমতা স্কিমে স্বল্প-আয়ের নাগরিকরা অংশ নেবেন।
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হবে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সিরা এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, অংশ নেওয়ার দিন থেকে টানা ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করতে হবে। এরপর তিনি যে বয়সে উপনীত হন, সেই বয়স থেকে পেনশন পাবেন।
৭৫ বছর বয়সের আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের পেনশন প্রাপ্য হবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে দেওয়া হবে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২.৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পেনশন স্কিমের আওতায় আরও দুটি স্কিম বাড়ানো হবে।