Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সমঝোতার ‘সুযোগ’ নিয়ে জানতে চান কংগ্রেসম্যানরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সমঝোতার ‘সুযোগ’ নিয়ে জানতে চান কংগ্রেসম্যানরা

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান রিচার্ড ম্যাককর্মিক ও এড কেইস -সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান এড কেইস এবং রিচার্ড ম্যাককর্মিক বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রোববার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। 

এসব বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কি না তা জানতে চান দুই কংগ্রেসম্যান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি যে দাবি করে আসছে তাতে সমঝোতার কোনো স্কোপ নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের অনড় অবস্থান তুলে ধরে। আর আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের কথা জানায় জাতীয় পার্টি। 

প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং পরবর্তীতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় চা-চক্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। চার দিনের সফরে দুই কংগ্রেসম্যান সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। দলটি বাংলাদেশে আসে গত শনিবার। 

তারা মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করবেন। দিনের শুরুতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান দুই কংগ্রেসম্যান এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাককর্মিক। তাদের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১১টায় তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে স্ত্রীসহ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। 

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয় দুপুরে। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তারা (কংগ্রেসম্যান) বলেছেন, ওদের (বিএনপি) সঙ্গে তোমাদের কোনো সমঝোতার পথ আছে কি না। আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি, সরকারের পদত্যাগ, ওটাতে সমঝোতার কোনো স্কোপ নেই। 

কংগ্রেসম্যানদের এই সময় প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চান, নির্বাচনের সময় তোমাদের দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) কি সরকারের পতন হয়? নিশ্চয়ই না। এ রকম ডিমান্ড (বিএনপির যে চাওয়া) থাকলে তোমরা কি আলোচনায় বসবে? ওগুলোর প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব।

কংগ্রেসম্যানদের পত্নী ড. ডেব্রা মিলার এবং মিসেস অড্রে কেস, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন। বৈঠকে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলমসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা। 

কংগ্রেসম্যানরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রিপাবলিকান একজন বলল, আমরা সবসময় সমঝোতায় যাই। আমরা বলেছি, সমঝোতা করার মতো দাবিদাওয়া তো এখানে নেই। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। 

আমাদের উলটো দল (বিএনপি) তো নির্বাচনের খবরই রাখে না। তারা চায় সরকারের পতন। সরকার পতনের ইস্যু সংলাপে যাওয়ার মতো কোনো টপিক নয়। এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কংগ্রেসম্যানরা নির্বাচনের কথা বলেছে। আমরা বললাম, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিজের তাগিদে আমরা একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, আমরাও চাই। কারণ আমরা জনগণের সমর্থনে আছি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি এখানে নির্বাচন তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) ওখানের চেয়ে ভালো হয়। তোমাদের ওখানে লোকে ভোট দেয় না। আমাদের এখানে অধিকাংশ লোক ভোট দেয়। তোমাদের ওখানে লোক নির্বাচনে দাঁড়ায় না। এখানে একটা নির্বাচনে কয়েকশ লোক দাঁড়ায়। ওটা নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। শুধু সব দলের লোকের আন্তরিকতা দরকার।

এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তাদের (দুই কংগ্রেসম্যান) কাছে বিভিন্ন লোকজন বলেছে, বাংলাদেশ একটা ভয়ংকর জায়গা। এরা চীনের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। এখানে অশান্তি আর অশান্তি। পুলিশ সব লোককে ধরে মেরে ফেলেছে। এই ধরনের একটি ধারণায় ভয় তাদের। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, চীনের ঋণের ফাঁদে যাচ্ছি না। আমরা চীন থেকে ঋণ নিয়েছি, সেটা এক পার্সেন্টের মতো। এটা কোনো বড় ইস্যু না। বলেছি, মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা অবাধ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যে আউটলুক তৈরি করেছি, সেটা বলেছি। আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার, ইনক্লুসিভ ও সিকিউর ইন্দো-প্যাসিফিক। ফ্রি নেভিগেশন চাই। সবাই সমৃদ্ধ হবে, এমন ইন্দো-প্যাসিফিক আমরা চাই।

মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের কাজকর্ম নেই। তোমরা এদের (রোহিঙ্গাদের) তোমাদের দেশে কাজকর্ম দিয়ে দাও। ট্রেনিং দাও। আমি বললাম, দুনিয়াতে আমরা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির দেশ। আমাদের লোকেদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই ওরা (রোহিঙ্গারা) দেশে ফেরত যাক। আমাদের অগ্রাধিকার প্রত্যাবাসন। আর রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার বিষয়ে কংগ্রেসম্যানদের আগ্রহ নেই। 

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক : বিকালে গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় দুই কংগ্রেসম্যান আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ছাড়াও সুশীল সমাজ এবং ৮ দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা জানানো হয়েছে। সাংবিধানিক কাঠামো মেনেই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, নিরপেক্ষ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বিষয়ে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। গত দুটি নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হয়েছে, তাও জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী এই দেশে একটি সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত কী আলোচনা হয়েছে তা আমি দলকে জানাব।

জানা গেছে, এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি লিখিত প্রতিবেদন দুই কংগ্রেসম্যানকে দেওয়া হয়। সেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, তাদের ওপর মামলা, গুম, পুলিশি নির্যাতন, মানবধিকার লঙ্ঘন, অর্থ পাচারসহ সার্বিক বিষয় প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। জাতীয় পার্টিও পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

আওয়ামী লীগের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ওয়াশিকা আয়েশা খান এবং তামান্না নুসরাত বুবলি অংশ নেন। বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। জাতীয় পার্টির পক্ষে জিএম কাদেরের স্ত্রী ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের, মেজর রানা এবং নাজমা আকতার এমপি এতে অংশ নেন। তবে চা চক্র শেষে পিটার হাসের বাসা থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি জাতীয় পার্টির নেতারা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম