ছাত্রলীগের হামলায় নুরসহ আহত ১৩
যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলায় সংগঠনটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুরসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন। বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হামলার করার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ। এদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল হত্যা ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার পরিষদ। এর কিছুক্ষণ পরেই ‘ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্টের চক্রান্তের শঙ্কায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দাবিতে’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বুধবার বিকাল ৪টা থেকেই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সাড়ে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি টিএসসির ডাসের সামনে পৌঁছালে পথ আটকান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ। এ সময় বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ডাসের সামনে থেকে মারধর করতে করতে তাদের টিএসসির মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে নিয়ে যায়। মারধর করার সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের একাংশ আরেকাংশকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। সেখান থেকে আহতাবস্থায় নুরুল হক নুরকে রিকশায় করে দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলায় ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
হামলায় আহত ১৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুজ জাহের, সদস্য সাদ শিকদার, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্র অধিকারের সহ-সভাপতি মেহেদি, কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের সাংগঠনিক সম্পাদক আকাশ, ঢাকা কলেজের সহ-সভাপতি রাকিব, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সভাপতি কাউসার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল ও মোহাম্মদপুর থানা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব রাজিব।
গণঅধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢাবির ডাসের সামনে থেকে আমাদের মারধর শুরু করে। মারতে মারতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট পর্যন্ত নিয়ে যায়। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র অধিকার পরিষদের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছেন। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে।’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ছাত্রলীগের কেউ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখব।’
গণঅধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ ডাসের সামনে থেকে আমাদের মারধর শুরু করে। আমাদের মারতে মারতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট পর্যন্ত নিয়ে আসে। এতে আমাদের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র অধিকার পরিষদের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি গ্রেফতার : নুরের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেফতারের বিষয়টি বুধবার সকালে নিশ্চিত করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব। রাতে ফেসবুক লাইভে এসেও এমন অভিযোগ করেন নুরুল হক নুর।
আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নুরের বাসায় মঙ্গলবার রাত ২টায় ডিবি অভিযান চালায়। দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে যায় তারা। ডিবি চলে যাওয়ার সময় বাসার সিসি ক্যামেরা ও হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, এর আগে রাত ১০টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে সাদা পোশাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। রাত ৮টায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবা রফিকুল মোল্লাকেও তুলে নিয়ে যায়। তবে ভোরে এই দুজনকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বেআইনি সমাবেশ, ভাঙচুর, হাঙ্গামার ঘটনায় পল্টন থানার এক মামলায় বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় নিয়ে হাঙ্গামার জের ধরে পল্টন থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় বিন ইয়ামিন মোল্লা এজাহারভুক্ত আসামি। রাতে নুরের হাতিরঝিলের বাসায় বিন ইয়ামিন মোল্লা অবস্থান করছে জানতে পেরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
এক মামলায় বিন ইয়ামিনের জামিন : গণঅধিকার পরিষদের অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় পল্টন থানায় ভবন মালিকের করা মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের সময় বিক্ষোভের ঘটনায় হওয়া মতিঝিল থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। সে কারণে আপাতত তার মুক্তি মিলছে না।